বালি মাফিয়া-শাসক যোগে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে বহু গ্রাম

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ অবৈধ বালি খাদান এবং বালি পাচার চক্র নিয়ে বহুদিন ধরে কথা হচ্ছে। এই নিয়ে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে ঘুরে বেড়ায়। প্রথম প্রশ্ন হল, অবৈধ বালি খাদানের ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। কিন্তু এর বাইরে বালি উত্তোলন নিয়ে সমস্যাটা কোথায়?

এর উত্তর আগে দেওয়া যাক। বালি-মাটি-কয়লা এই সবকিছুই ইচ্ছা মতো কেটে নেওয়া বা উত্তোলন করা যায় না। বিজ্ঞানসম্মতভাবেই এটা যায় না। কারণ লাগামহীনভাবে নদীগর্ভ থেকে বালি উত্তোলন করা হলে ভূমির ভারসাম্য নষ্ট হবে, ফলে নদীর ধারে গড়ে ওঠা গ্রামগুলি ধসের কবলে পড়ে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

এই যে বলা হল নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, তা দেখে মনে হতে পারে শুধুই আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব তা নয়। অবৈধ বালি খাদান ও মাটি পাচারের জেরে মালদহ পূর্ব বর্ধমান বীরভূমের বেশকিছু গ্রাম ইতিমধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছে। বাঁকুড়া মুর্শিদাবাদের বহু গ্রাম বিপদের মুখে।

এই সমস্ত গ্রামগুলিতে ইতিমধ্যেই ধস নামতে শুরু করেছে। অনেক জায়গায় গ্রামবাসীদের চাষের জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও বসত ভিটেও অবৈধ বালি কারবারের জেরে তলিয়ে যাচ্ছে।

তবে প্রশাসন সবকিছু খতিয়ে দেখে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বৈধ বালি খাদানের অনুমতি দিয়ে থাকে। সেখান থেকেও যথেচ্ছ নয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ বালি উত্তোলনের অনুমতি থাকে। যদিও হামেশাই দেখা যায় বৈধ বালি খাদানগুলোতেও লাগামছাড়াভাবে সরকারি নির্দেশ না মেনে বালি উত্তোলন হচ্ছে।

বাঁকুড়ার সোনামুখীর কুলডাঙা গ্রামে এমনই একটি বালি খাদান আছে। দামোদরের চড়ে গড়ে ওঠা এই খাদানটি বৈধ না অবৈধ সে বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু জানতে পারা যায়নি। তবে সেখানে যেভাবে বালি উত্তোলন হচ্ছে তাতে আর বছর খানেকের মধ্যে দামোদর পাড়ের গ্রামগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন গ্রামবাসীরা। তবে প্রাণের মায়ায় তাঁরা প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করতে পারেন না।

অনুব্রতর দেহরক্ষীকে ঘুঁটি করে মুর্শিদাবাদে নজর সিবিআইয়ের

এখানে আসছে দ্বিতীয় বিষয়টি। শাসকদলের সকলে নয়, কিন্তু প্রতি ব্লকের তৃণমূল নেতাদের একাংশ হয় সরাসরি, নয়তো বালি মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশে এই বেআইনি এবং ভয়ঙ্কর কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তারাই দেখে নেয় যাতে নিরাপদে যথেচ্ছ বালি উত্তোলন করা সম্ভব হয়।

তাই কখনও নরমে, আবার কখনও গরমে নদীর পাড়ে থাকা গ্রামগুলির মানুষকে ঠান্ডা করে রাখেন এই তৃণমূল নেতারা। তাদের অনুগত বাহিনী প্রতিমুহূর্তে খাদানগুলির দিকে নজর রেখে চলেছে বলে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি বিরোধীদের অভিযোগ। প্রসঙ্গত এই বাহিনীর কথা জানা সত্ত্বেও বিরোধীরা‌ও সেখানে গিয়ে প্রতিবাদের সাহস দেখায় না।

তবে অবৈধ বালি খাদান কাণ্ডে বর্তমান শাসক দল হিসেবে তৃণমূলের বিপুল দায় থাকলেও বামেদের একেবারে ক্লিনচিট দেওয়াটাও মুশকিল। কারণ এমন বিপুল মাত্রায় না থাকলেও বাম জামানাতেও নিচু তলার কয়েকজন সিপিএম নেতাকর্মী এমনভাবেই পরোক্ষে অবৈধ বালি খাদানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

তবে তৃণমূল জামানায় বালি পাচারকারী ও শাসক দলের নেতারা যেভাবে মিলেমিশে গিয়েছেন তা সত্যিই ভয়ের। এইভাবে চলতে থাকলে বাঁকুড়া পূর্ব বর্ধমান বীরভূম মালদহের মানুষ কোথায় থাকবে সেটাই একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ভিটেমাটি হারানো এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসন দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকবে তো? এই সবকিছু কিন্তু এখন থেকে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

সম্পর্কিত পোস্ট