কংগ্রেসের নাক কাটতে আজাদকে রাষ্ট্রপতি করার ঝুঁকি আদৌ নেবেন মোদি?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সময়ের কতগুলো পরস্পরবিরোধী গুণ আছে। তা যেমন বহু বিষয় বাদ দ্বন্দ্বের সমাধান করে তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জল্পনাও বাড়ে। দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে একমাসও বাকি নেই। কিন্তু সরকার বা বিরোধী, কোনও পক্ষই কিছু চূড়ান্ত করতে না পারায় প্রতিদিন জল্পনার তালিকায় একটা দুটো করে নাম যোগ হচ্ছে।
এবার জল্পনা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে নিয়ে। একাংশের দাবি কংগ্রেসকে জোরদার ধাক্কা দিতে বর্তমানে গান্ধি পরিবারের ওপর রুষ্ট আজাদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করতে পারেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। কিন্তু কংগ্রেসকে ধাক্কা দিতে গিয়ে এত বড় ঝুঁকি আদৌ নেবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব?
আজাদকে প্রার্থী করলে নিজের ঘরেই বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বিজেপিকে। গুলাম নবি আজাদ সেই কাশ্মীরি নেতা যাঁর বিরুদ্ধে ভূস্বর্গকে দীর্ঘদিন নিজেদের কব্জায় রাখতে বিচ্ছিন্নতাবাদের রাজনীতিকে পরোক্ষে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ বারবার তুলেছে বিজেপি। ৩৭০ ধারা বিলাপের সময় আব্দুল্লাহরা, পিডিপি নেতাদের পাশাপাশি গুলাম নবি আজাদ কেও গৃহবন্দি করে রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
জম্মু এলাকার সবকটি বিধানসভা আসন দখল করে গোটা জম্মু-কাশ্মীর শাসন করার যে স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া শিবির, এক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ, সৈয়দ পরিবারের পাশাপাশি বর্ষিয়ান নেতা গুলাম নবি আজাদও তাদের পথের কাঁটা।
এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করলে ভূস্বর্গের বিজেপি নেতাদের অস্বস্তি বাড়বে। শুধু তাই নয় কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দেশের মূল ভূখণ্ডে যে জাতীয়তাবাদের আবেগ উস্কে দিতে চায় গেরুয়া শিবির তাও প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে।
গোপালকৃষ্ণকে প্রার্থী করতে চাওয়ায় কারণ কী পুরনো সম্পর্ক ?
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, দীর্ঘদিনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজাদকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করলে সোনিয়া-রাহুলরা যে বড় ধাক্কা খাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এমনিতেই জি-২৩ এর নেতৃত্বে থাকা এই নেতার সঙ্গে গান্ধি পরিবারের সম্পর্কে শৈত্য প্রবাহ চলছে। ফলে তাঁকে বিজেপি রাষ্ট্রপতি করলে কংগ্রেসের ভাঙন চূড়ান্ত আকার নিতে পারে।
তবে আজাদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করার একটাই সুবিধা হল বিশ্বের দরবারে বার্তা দেওয়া যাবে, জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানকার ভূমিপুত্রও দেশের সাংবিধানিক প্রধান হন। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে এই বার্তা দিতে গিয়ে দেশের মধ্যে প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার এত বড় ঝুঁকি বিজেপি কী আদৌ নেবে?
আন্তর্জাতিক স্তরে বার্তার বিষয়টি খুব একটা ছোট ব্যাপার নয়। কিন্তু টুকটাক অশান্তি বা চাপানউতোর চললেও পাকিস্তানকে নিয়ে কেন্দ্রের মাথাব্যথা এই মুহূর্তে অনেকটাই কম। তাই আন্তর্জাতিক মহল ও পাকিস্তানকে বার্তা দিতে গিয়ে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দুত্ববাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী শিবির, যাকে বিজেপির স্বাভাবিক ভোটব্যাঙ্ক বলে ধরা হয়, সেখানে ফাটল ধরাতে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা কতটা চাইবেন তা নিয়ে সংশয় আছে। সম্ভবত বিজেপির অভিভাবক সংস্থা আরএসএস’ও এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
বরং পাকিস্তানের থেকে চিন এখন ভারতের কাছে অনেক বেশি চিন্তার জায়গা। যদি আন্তর্জাতিক স্তরের পাশাপাশি চিনকে বার্তায় দিতে হয় তবে এই প্রথম দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কাউকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করার চেষ্টা করতে পারে গেরুয়া শিবির।
সেক্ষেত্রে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। এখনও পর্যন্ত অসমের ভূমিপুত্র ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ উত্তর-পূর্ব থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। কিন্তু তিনি অসমে খুব কমই থেকেছেন। তাই এখানকার আদিবাসী কেউ রাষ্ট্রপতি হলে একদিকে যেমন চিনকে কড়া বার্তা দেওয়া যাবে, তেমনই উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরোপুরি নিজেদের দিকে টেনে নিতে সফল হবে বিজেপি।