পরিযায়ীরাই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হবে না তো!
সর্নিকা দত্ত
এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রাজ্য সরকার স্বীকার করুক অথবা না করুক, এই মুহূর্তে তাদের বড় চিন্তার কারণ এই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। সরকারের তরফ থেকে সবরকম চেষ্টা করার পরেও যেভাবে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেটা আদৌ রাজ্যবাসীর জন্য সুখবর নয়।
এরমধ্যে আবার নতুন বিপদ হিসাবে উপস্থিত হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু।মানবিকতার দিক থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর বিষয়টি সমর্থনযোগ্য হলেও বৃহত্তর স্বার্থে এই অবস্থায় তাদের ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত কতটা সংগত তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
বলতেই হচ্ছে, বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের একটানা চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তারা মেনে নিল বিভিন্ন রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হবে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ১০৫ টি ট্রেনের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার।
সরকারের এই সিদ্ধান্তই আগামীতে তার জন্য শাঁখের করাত হবে না তো! কারণ এই মুহূর্তে এক একটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি এক এক রকম। মহারাষ্ট্র, দিল্লি গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে যেভাবে পরিস্থিতি সরকারের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে তাতে এই সমস্ত রাজ্যের থেকে কাউকে নিয়ে আসা যথেষ্ট শঙ্কার কারণ বৈকি।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার
বিরোধীদের এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা রয়েছে, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের না আনলেও তাদের লাভ, সহানুভূতির ভোট আদায় করতে গেল গেল রব তুলবেন। আবার আনলেও তাদের লাভ। কারণ এক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়লে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যর্থতা ফলাও করে প্রচার করা যাবে।
রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর দিন থেকেই রাজ্য সরকার বারবার ঘোষণা করেছে এই মুহূর্তে তারা কোন রাজনৈতিক লড়াই চায়না। বরং কেন্দ্রের দেখানো পথে, দুজনে মিলে এই সংকটের মোকাবিলা করতে চায়। এরপর রাজনীতি হবে না এই ভাবনাই স্বাভাবিক ছিল।
কিন্তু গত 50 দিনে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে যেভাবে রাজনীতির ময়দানে উপস্থিত হয়েছে তার ছবি গোটা বাংলা দেখেছে। বিশেষ করে বিজেপি, তৃণমূলকে বিপাকে ফেলতে কখনো রেশন দুর্নীতির নাম করে কখনো স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না দেওয়ার অছিলায় রাজ্যের শাসক দলকে কাটগড়ায় তুলেছে। রাজ্যের মানুষও সেগুলিকে বেদবাক্য মনে করে নিয়েছে।
কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে ফাঁসাতে কোথাও বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ গাড়িকেই তৃণমূলের বলে চালিয়ে চাল পাচারের দুর্নীতি দেখানো হয়েছে। আবার কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত কিট না দেওয়া সত্বেও করোনা টেস্ট হচ্ছে না বলে রাজ্যকে বাপ-বাপান্ত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরে ও নিজের দায়িত্ব থেকে সরে যাননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজে পথে নেমে সামনে থেকে করোনার লড়াই লড়ছেন তিনি। একটা অজানা রোগ। যার চিকিৎসা এখনও গোটা বিশ্বের কাছে অজানা। আঁধারে খোঁজার মতো করে ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসা করছেন। এরকম একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে রোগীর সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা নিয়েও রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। তলিয়ে দেখলে খুব সহজেই বোঝা যাবে এটাও কিন্তু নোংরা রাজনীতিরই অংশ।
প্রাণের তাগিদ, হরিয়ানা থেকে অটো চালিয়ে রাজ্যে ফিরলেন ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক
এরপরেও লড়াইটা ভালোই দিচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হয়তো ভুলটা হয়ে গেল, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর সিদ্ধান্তে। আগামী কয়েকদিনে এদের হাত ঘুরে যদি সংক্রমনের সংখ্যা গুজরাট বা দিল্লির মতো আকার নেয় সে সময় কিন্তু সবার আগে আঙ্গুল উঠবে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই।
রাজ্যবাসী কেউ মনেও রাখবেন না, এই পরিযায়ী শ্রমিকরা যাদের জন্য সংক্রমনের এই বাড়বাড়ন্ত তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বিরোধীরাই। বলতেই হয়,সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এ দেশ। নইলে এভাবে রাজনীতির ভরে হয়ে ব্যাকফুটে যেতে হয় একসময় বাংলার অগ্নিকন্যা বলে পরিচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।