জাতপাত, ব্রাহ্মণ্যবাদের থাবায় ধুঁকছে আধুনিক ভারত, সাবধান বাঙালি

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ শুদ্র হয়ে উঁচু জাতের কুয়ো স্পর্শের শাস্তি কয়েক দশক আগেও কী হতো তা ইতিহাস-সমাজ সম্বন্ধে ওয়াকিবহালরা ভালোই জানেন। ওমা, এখনও হয় না কে বলেছে! তাই তো নিচু জাতের ছোট্ট ছেলেটা উঁচু জাতের মাষ্টারের জলের পাত্র ছুঁয়ে দেওয়ায় তাকে মরতে হল। এই সেদিনের ঘটনা। ঘটনাস্থল রাজস্থান। সেই গো-বলয়ে ফোটার আগেই ঝরে গেল শিশু ছাত্রের এক কুঁড়ি।

বাদ্যি বাজাও, কাড়া নাকড়া পেট, আবির খেলা গো। আজ উল্লাসের দিন। আমাদের বীর ধর্ষক ভাইরা মুক্তি পেয়েছে! গুজরাটের ছবি। গোধরা কাণ্ড পরবর্তী দাঙ্গায় ‘মুসলিম’ বিলকিস বানো’কে ছিঁড়ে-কুঁড়ে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে ১১ জন ‘হিন্দু’ বীরপুঙ্গব।

হ্যাঁ, আজ এই হিন্দু-মুসলমান পরিচয়টাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিলকিসের ক্ষেত্রে। এরা আবার যে সে হিন্দু নয়, একেবারে ‘ব্রাহ্মণ’ সন্তান। তাই সরকার বাহাদুর নিজের দায়িত্ব ভুলে ভোট ও জোট সমীকরণে এই বীরপুঙ্গবদের মুক্তি দিলে, ‘ব্রাহ্মণ’ মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠে গুজরাট।

এরা শুধু সেই দিন বিলকিস বানোকে ধর্ষণ করেছিল তা নয়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসের গর্ভের সন্তানকে হত্যা করে, চোখের সামনে তিন বছরের মেয়েকে তলোয়ারের ফালায় কচুকাটা করে! পরিবারের ১৪ জন সদস্য বিলকিস ও তাঁর মায়ের চোখের সামনে মুহুর্তের মধ্যে মারা যান।

গোদরা কাণ্ডের সময় ঘটা এই নারকীয় নির্যাতনের বর্ণনা শুনে যে কারোর গা গুলিয়ে উঠতে পারে। তবু যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই ধর্ষকদের মুক্তি দিল সরকার। তাহলে কী ধর্ষকের থেকেও এদের ব্রাহ্মণ পরিচয়টাই বড় হয়ে দাঁড়াল?

ভোট মানেই বাংলায় অশান্তি? রবিবারও দেখা গেল সেই পরিচিত ছবি

এদিকে জানেন তো দেশের নতুন সংবিধান লেখার কাজ চলছে? না না, দেশের নির্বাচিত সংসদ এই কাজ করছে না। অতি উগ্র হিন্দু সাধুদের এক আখড়া বা সংগঠন এই নতুন সংবিধান লেখার কাজ করছে। তাতে দেশের বর্তমান ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সেই প্রাচীন বর্ণাশ্রম প্রথা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এখনকার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আর থাকবে না।

বদলে প্রাচীনকালের মতো গুরুগৃহে গিয়ে আশ্রমে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে সবাইকে। দেশের নাগরিক শুধুমাত্র হিন্দুরাই হতে পারবে। না, বাকিদের দেশ থেকে বার করে দেওয়া হবে না। মুসলমান খ্রিশ্চান বৌদ্ধ শিখ সবাই এই দেশেই থাকবে, তবে নাগরিকের মর্যাদা পাবে না। আর হ্যাঁ, দেশের রাজধানী দিল্লির বদলে উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী কাশিতে স্থানান্তর করা হবে!

উপরের তিনটি ঘটনা বলা হল, তা থেকে কী বুঝলেন? আপনি কী বুঝলেন তা আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারব না। তবে এই ঘটনাগুলো থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, দেশের উত্তর ও পশ্চিমাংশে হিন্দুত্বের নামে বর্ণাশ্রম ও জাতিভেদ প্রথার সেই অন্ধকার যুগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা জোর কদমে চলছে। ইংরেজদের হারিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমাজ যতটুকু এগিয়েছিল, তা ভুলে গিয়ে আবার পূর্ণোদ্যমে পিছন পানে হাঁটা শুরু হয়েছে।

কিন্তু বাঙালি তো সংস্কৃতিগতভাবেই এতটা উগ্র নয়, এতটা অসহিষ্ণুও নয়। সে বরাবরের অন্য ধর্মের মানুষ, সমস্ত জাতকে এক করে নিয়ে বেঁচেছে। থেকেছে তাহলে আপনি মেনে নেবেন উত্তর ও পশ্চিম ভারতের এই মানবতাহীন আগ্রাসন? কী মানবেন, বা না মানবেন সেটা পরের কথা। সবার আগে আপনাকে সচেতন হতে হবে।

উত্তর ও পশ্চিম ভারতে বহু ভালো কিছু আছে, সেগুলো গ্রহণ করুন। কিন্তু ধর্মের নামে, জাত পাতের নামে খারাপ কিছু গ্রহণ করবেন কিনা, একই অন্যায় এখানকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আপনি করবেন কিনা তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। হাতে সময় বিশেষ নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট