সরকারের পক্ষে থাকায় পুরষ্কার বিচারপতিকে, রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনীতিকদের
দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত করার পর এভাবেই সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধী রাজনীতিকরা।
দ্য কোয়ারি ডেস্ক : অবসরের আগের কাজের পুরস্কার জুটল অবসরের পরে। কেন্দ্রীয় সরকার পুরস্কৃত করলেন তাঁকে।
কেন্দ্রের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত করলেন। দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত করার পর এভাবেই সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধী রাজনীতিকরা।
তাঁর এই মনোনয়নে কেউ অবাক হয়েছেন, আবার কেউ এর ফলে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে মত প্রকাশ করেছেন। বিচারপতির স্বাধীনতার প্রতি কিভাবে মানুষ ভরসা রাখবেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা টুইটারে বলেছেন, আমি আশা করি প্রাক্তন বিচারপতি বিচার বিবেচনা করে তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করার প্রস্তাবে ‘না’ করবেন। না হলে বিচার বিভাগের সুনামের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবেন তিনি।
অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এমন নিয়োগ নিয়ে গতবছর প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নিজেই। তখন তিনি বলেছিলেন, অবসরের পর একজন বিচারপতির নিয়োগ বিচার ব্যবস্থার স্বতন্ত্রতায় দাগ ফেলে।
সোমবার প্রাক্তন বিচারপতিকে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত করার পর কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র আইনজীবী জয়বীর শেরগিল বলেছেন, এটা বিচার ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের পক্ষে দুঃখের দিন।
ফের ধাক্কা খেল যোগী সরকার, এলাহাবাদ হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও মান্যতা দিল না হোর্ডিং পদক্ষেপকে
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সরকারকে রক্ষা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বাল।
আরও একধাপ এগিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছে তেলেঙ্গানা কংগ্রেস। তারা তাদের অফিসিয়াল টুইটারে স্পষ্ট বলেছে, অবসরের পরের নিয়োগের তাগিদেই তাঁর অবসরের আগের বিচার।
অসম এনআরসি, রাফায়েল বিচার, অযোধ্যা বিতর্ক, ৩৭০ ধারা ও সিবিআই ডিরেক্টর পদ থেকে অলোক বার্মার অপসারণ মামলাকে উল্লেখ করেছে তেলেঙ্গানা কংগ্রেস।
প্রাক্তন বিচারপতির সাংসদ মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এআইএমআইএম নেতা সাংসদ আসাদদুদ্দিন ওয়াইসিও।
তাঁর প্রশ্ন, বিচারপতির স্বাধীনতার প্রতি কিভাবে ভরসা রাখবেন মানুষ? আবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত করায় তিনি অবাক হননি। তাঁর কথায়, এনআরসি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। দ্রুত শুনানি করে রামমন্দির মামলার রায় দিয়েছেন।
রাফায়েল ও জম্মু-কাশ্মীর মামলার শুনানি করেছেন এবং নিজের যৌন নিগ্রহ মামলায় আইনকে ব্যবহার করেছেন।
রাজনীতিক এবং বিচারপতি সবাই এক উল্লেখ করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, লোভী প্রভু। পাশাপাশি স্বরাজ পার্টির নেতা যোগেন্দ্র যাদব দাবি করেছেন, বিচারপতি তাঁর রাজনৈতিক গুরুদের দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছেন। এটা লজ্জ্বা।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে এত সমালোচনার কোনও জবাব দেননি রঞ্জন গগৈ। মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, আগে শপথ নিতে দিন, তারপর সংবাদমাধ্যমের সামনে বলব, কেন রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।
সিন্ধিয়ার দলত্যাগ, গুরুত্ব না দিলে গভীর সঙ্কটে পড়বে কংগ্রেস
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির সাংসদ হওয়ার ঘটনা যদিও এদেশে নতুন নয়। এর আগে অবসর গ্রহণের পর সাংসদ হন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র। ১৯৯২ সালে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে কংগ্রেস। যদিও তখন কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল না।
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্রের সাংসদ হওয়াকে কেন্দ্র করেও বিতর্ক দেখা দিয়েছিল সেসময়। কারণ, ১৯৮৪ সালে শিখ গণহত্যার তদন্তে নিযুক্ত করা হয় বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনকে।
একাধিক কংগ্রেস নেতা ওই হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত ছিলেন। তারা অনেকেই পার পেয়ে যান। ফলে তাঁকেও পুরস্কৃত করা হয় বলে অভিযোগ।