কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনিটরিং, নাকি রাজ্য নেতৃত্বের গাফিলতি? প্রশ্নে জেরবার গেরুয়া শিবির
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
২১ এর নির্বাচনে লক্ষ্য ছিল ২০০ পার করবেন। কিন্তু তা আর হল না। বরং প্রশান্ত কিশোরের কথাতেই আটকে রইলেন তাঁরা। মাত্র ৭৭ টি আসন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল গেরুয়া শিবিরকে। সারা রাজ্যেও রথ চালিয়েও জনসংযোগে খামতি? এর দায় কি বাংলা নেতৃত্বের? নাকি, বাংলার নেতৃত্বের ওপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছড়ি ঘরানোতেই বিপদ ঘটে গেল?
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের মধ্যে সারা দেশের বিশেষ নজর ছিল বাংলার দিকে। কারণ যেভাবে একের পর এক কেন্দ্রের নতুন আইনের বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছিলেন তাতে বেগ পেতে হয়েছিল দিল্লির নেতাদের। সিএএ আন্দোলনে কলকাতার রাস্তায় দিনের পর দিন প্রতিবাদে শামিল হতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ায় কড়া সমালোচনা করে তিনি। এমনকি গত বছর সেপ্টেম্বরে সংসদে পাশ হওয়া তিন বিলের প্রতিবাদে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোচ্চার হওয়া এবং দিল্লি উপকণ্ঠে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন ২১ এর নির্বাচনে মমতার পালে হাওয়া দেয়। ১৯ এর নির্বাচনে ঠিক যেমনভাবে বামের ভোট বিজেপিতে গিয়েছিল, গোটা দেশের অভিজ্ঞতায় এবার বাম এবং রামের ভোট গিয়ে পড়ল তৃণমূলে।
তাই ১৯ এর নির্বাচনে ১৮ টি আসন পাওয়ার পরেও ব্যাপক হার বিজেপির। বিজেপির এই হার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। বিজেপির একাংশের দাবী, ২১ নির্বাচনে দলের কর্মসূচী স্থির করেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি জেলার কর্মীদের। তাঁদের দাবী, তৃণমূল থেকে একাধিক নেতা বিজেপিতে আসায় আদি এবং নব্য বিজেপির মধ্যে যাতে না কোনও দ্বন্দ্ব তৈরি হয় সেকারণেই হাল ধরেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। বরং বেশ কিছু দুর্নীতির কার্যকলাপে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিজেপিতে যুক্ত হওয়ায় মানুষ আস্থা হারায়। তাতেই ব্যাপক বিপর্যয় হয় গেরুয়া শিবিরের। তার ওপর বিজেপির প্রচারে ধর্মের উস্কানি ভালোভাবে নেয়নি রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষ।
বিজেপি নেতৃত্বের কথায় প্রচারের প্রথম দিন থেকে কর্মীদের সমস্ত বিষয়ে মনিটরিং চালিয়েছিলেন কেন্দ্রের নেতারা। বিজেপির সুফলে যেমন ঢাক পিটিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তেমনিই এবার বিজেপির খারাপ ফলের জন্য তাঁরাই দায়ী। সেইসঙ্গে এনআরসি এবং সিএএ তেও খেপে ছিলেন মতুয়ারা। দাওয়ায় বসে অমিত শাহের ভোজনের আয়োজন করলেও আদিবাসী ভোটে থাবা বসিয়েছে তৃণমূল। ফাঁকা মাঠেই প্রচার সারতে হয়েছে স্মৃতি ইরানী, যোগী আদিত্যনাথদের। আর তাতেই ভরাডুবী। একইসঙ্গে প্রার্থী তালিকা নিয়েও ক্ষোভ দেখা গিয়েছে একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে। হেস্টিংসের বিজেপির দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি নেতারা।
যদিও বিজেপির ৭৭ টি আসন এবং ভোটের শতাংশ বৃদ্ধির পিছনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার এবং আমফান থেকে শুরু করে একাধিক মামলায় তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতার নাম জড়ানোয় মানুষ ভরসা করেছিল বিজেপির ওপর। কিন্তু পাল্টা প্রচারে মমতার অভিযোগ বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।
শেষ মুহুর্তে মানুষের প্রত্যাখানের জন্য দায়ী কারা? তার মূল্যায়নে বসেছে গেরুয়া শিবির। শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে প্রশ্নও ছুঁড়ে দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা । আবার রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, বিজেপি সর্বভারতীয় দল তার কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনেই চলেছে প্রচার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী এবং রাহুল সিনহা প্রচারের ভঙ্গি সহ শাসক দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য বাংলার রাজনীতির সঙ্গে খাপ খায় না। এরই মধ্যে বিশ্বজিৎ কুন্ডুর ৭২ জনকে চাকরী দেওয়ার স্বীকারোক্তিকে হাতিয়ার করে ব্যাপক ফলাফল করে তৃণমূল। তাই টার্গেট থেকে অর্ধেক রাস্তার আগে থমকে গেল ২১ এর জার্নি।