চতুর্থ দফাতেও বিশেষ নজরে হগলী
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলার ৪৪ টি আসনের বিধানসভা নির্বাচন । এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জেলা হল হুগলী। এই জেলার ১৮ টি আসনের মধ্যে ১০ টি আসনে রয়েছে চতুর্থ দফার নির্বাচন ।
এই জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন হল সিঙ্গুর। কারণ, এই সিঙ্গুর আন্দোলন কে সামনে রেখে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন প্রতিপক্ষ ছিলেন বামেরা। আন্দোলনে পাশে থেকেছিলেন বিজেপি। সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে এখনো অবধি তৃণমূল এবং বাম শিবিরের রাজনৈতিক বিবাদ এখনও মেটেনি । তারই মধ্যে এই জেলায় পদ্ম শিবিরের প্রভাব বেড়েছে।
এই কেন্দ্রে এবার বামেদের তুরুপের তাস এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্ন এবং শিল্পের দাবীকে সামনে রেখে এবারেও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বিগত দিনে এই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কিন্তু এবার আশি বছরের উর্ধ্ব তালিকায় নাম থাকায় টিকিট পাননি রবীন্দ্রনাথ বাবু। এবারে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের তৃণমূলের প্রার্থী বেচারাম মান্না। যিনি সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
টিকিট না পেয়ে করে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ বাবু। এবার লড়াই করছেন পদ্মফুলের টিকিটে। যা কেন্দ্র করে বিজেপির অন্দরের ক্ষোভ প্রকট হয়ে ওঠে। অনেক বিজেপি কর্মী প্রার্থী হিসাবে রবীন্দ্রনাথ বাবুকে মেনে নিতে চাননি। ঠিক এই জায়গাতেই সুজন ভট্টাচার্য তরুণ মুখ সিঙ্গুরে বামেদের লড়াইয়ের পথ মসৃণ করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে চন্ডীতলা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন সিপি(আই)এম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তাঁর লড়াই গত দু’বারের বিধায়ক স্বাতী খাণ্ডেকরের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে এই কেন্দ্রে তারকা প্রার্থী যশ দাশগুপ্তকে টিকিট দিয়ে চমক এনেছে বিজেপি। ফলে এই কেন্দ্রে লড়াই ত্রিশঙ্কু এবিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই।
গতবারের মতো এবারেও সাহেব নগরীতে প্রার্থী হয়েছেন গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। গায়ক দিয়ে নিজের পরিচয় শুরু করলেও এখন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ট এবং রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রীও। এই কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই বিজেপির দীপাঞ্জন গুহর বিরুদ্ধে।
তারকা সমাবেশে নজর কেড়েছে উত্তরপাড়া। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। তাঁর লড়াই গতবারের জয়ী বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের বিরুদ্ধে। যিনি সদ্য জেলা তৃণমূলের একাধিক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন চাটার্ড ফ্লাইটে দিল্লি গিয়ে।
চুঁচুড়া কেন্দ্রে বিজেপির হয়ে লড়ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের হয়ে হুগলী কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করে চমকে দিয়েছিলেন লকেট। বিজেপির যেসমস্ত সাংসদকে বিধানসভায় প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে লকেট চট্টোপাধ্যায় অন্যতম। বিপরীতে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করছেন অসিত মজুমদার। গত দু’বার এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছেন তিনি।
তারকা না হলেও তৃণমূলের তালিকায় এবার বিশেষ চমক হুগলীর বলাগড়ের প্রার্থী মনোরঞ্জন ব্যাপারী। রিক্সা চালক থেকে লেখক। এবার রাজনীতি। মানুষের হয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দলনেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী।
শ্রীরামপুর কেন্দ্রে গতবার জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের সুদীপ্ত রায়। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের শুভঙ্কর সরকারকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। এবার এই কেন্দ্রে অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন অনুযায়ী ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকবে না বিজেপিও।
তবে কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে ফের নজর কেড়েছে হুগলীর চাঁপদানি আসনটি। এবারেও এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। প্রতিপক্ষ তৃণমূলের অরিন্দম গুঁই। পাশাপাশি বিজেপির টিকিটে লড়ছেন লড়াকু নেতা দিলীপ সিং। তাই এবারে নির্বাচনের লড়াই আবদুল মান্নানের জন্য শজ হবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
পান্ডুয়া কেন্দ্রে এবারেও সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন সিপি(আই)এমের আমজাদ হোসেইন। প্রতিপক্ষ তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগ। বিজেপির হয়ে এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন পার্থ শর্মা। লড়াই ত্রিশঙ্কু হলেও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী গত দুই বারের বিধায়ক।
গতবার হুগলী জেলায় ব্যাপক ফলাফল করে তৃণমূল। কিন্তু জেলার গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব ক্রমশ বিজেপিকে জায়গা করে দেয়। যার ফলে একটি আসন হাতছাড়া করতে হয় ঘাসফুল শিবিরকে। আরও একটি আসনে গুটিকয়েক ভোটে জয়লাভ করে তৃণমূল। ড্যামেজ কন্ট্রোলে মাঠে নামতে হয়ে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোকে। এরই মধ্যে তৃতীয় দফায় আরামবাগ, গোঘাট এবং খানাকুলের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করেছে কমিশন। এর প্রভাব কি নির্বাচনে পড়বে? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।