তৃণমূল ভবনে উত্তরীয় পরিয়ে বরণটা কী ‘কুমিরডাঙা’ খেলা ছিল? মুকুলকে নিয়ে বিমানের রায়ে গুলিয়ে যেতে বাধ্য যাবতীয় যুক্তি

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বুধবার দীর্ঘ টালবাহানার পর রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন! তাই তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন খাটছে নূর। ফলে বিধায়ক পদ খারিজ করা হচ্ছে না।

এই রায় দিতে, থুড়ি যাবতীয় তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে বিধানসভার অধ্যক্ষের প্রায় এক বছর সময় লাগল। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার বিধানসভার অধ্যক্ষ হয়েও মাত্রা অতিরিক্ত ‘পার্টি ম্যান’ বিমানকে এবার বোধহয় আদালতের মুখোমুখি হতে হবে! কারণ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য থেকে সেটাই মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

আচ্ছা, মুকুল রায় বিজেপিতে আছেন এটা মুকুল নিজে বিশ্বাস করেন তো? সম্ভবত বাংলার কেউই বিশ্বাস করেন না মুকুল বিজেপিতে আছেন। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের মাসখানেকের মধ্যে মুকুলের ঘর ওয়াপসির দিনের দৃশ্যটি একবার মনে করার চেষ্টা করে দেখুন। দুপুরের পর সল্টলেকের বাড়ি থেকে ছেলে শুভ্রাংশুকে নিয়ে তৃণমূল ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হল মুকুলের বিশাল কনভয়।

মিনিট কুড়ির মধ্যে তিলজলার তৎকালীন তৃণমূল ভবনে পৌঁছে গেলেন তিনি। মুকুলকে স্বাগত জানাতে তৃণমূলের সব শীর্ষ নেতারা উপস্থিত। এমনকি খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত চলে এসেছেন। এর কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হল। সকলের সামনে শুভ্রাংশু ও মুকুলের গলায় তৃণমূলের উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সাংবাদিকদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেন মুকুল। তখনও পাশে বসে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, মুকুল আবার ঘরে ফিরে আসায় তাঁর ভালো লাগছে।

হাসপাতালে থেকেও কী করে অসুস্থ আনারুল ?

কিন্তু এইসব ফুটেজ, ছবি কোন‌ও কিছুই নাকি মুকুলের দলত্যাগের যথোপযুক্ত প্রমাণ বলে মনে হয়নি, তেমনটাই বক্তব্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপির সূত্রে খবর, বিধানসভার অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, মুকুল ঐদিন তৃণমূল ভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন।

কিন্তু তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি! মুকুল রায়ের আইনজীবী নাকি তাঁর কাছে দাবি করেছেন, মানসিক এবং শারীরিকভাবে এখনও নিজেকে বিজেপির বিধায়ক মনে করেন তিনি।

তাই অধ্যক্ষের রায় মুকুল বিজেপিতেই আছেন, তিনি তৃণমূলের কেউ নন। অথচ সেদিন তাঁর সঙ্গে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটা শুভ্রাংশু এখন কাঁচরাপাড়া পুরসভায় তৃণমূলের উপ-পুরপ্রধান। কি অদ্ভুত না! মুকুল রায় বিজেপির বিধায়ক, অথচ নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর উত্তরের কোন‌ও বিজেপি নেতা-কর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না, নিজের এলাকাতেও যান না।

কেন মুকুল রায় এমনটা করলেন বা তাঁর বর্তমান দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন এমন অবস্থান নেওয়া হল তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই জনান্তিকে বলছেন, “মুকুলকে নিয়ে দলের এই অবস্থানে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হল। বিষয়টা নিয়ে সাধারন মানুষ তো বটেই দলের কর্মীরা পর্যন্ত হাসাহাসি করছে”।

তবু বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিত মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন। সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই রাজনীতি!

সম্পর্কিত পোস্ট