তৃণমূলে ফিরলেন মুকুল শ্যালক সৃজন

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল রায়ের শ্যালক সৃজন রায়। বুধবার তৃণমূল ভবনে এসে রাজ্যের শাসক দলে যোগ দেন তিনি। সেখানে তাঁকে দলে স্বাগত জানান রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

বছর খানেক আগে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন।এদিন তাঁর আবার ঘর ওয়াপসি হল। আর এই ঘটনায় অস্বস্তিতে বিজেপি। উল্টোদিকে ঘটনায় ‘উল্লসিত’ তৃণমূল।

নির্বাচন যত নিকটে আসছে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার যেন হিড়িক লেগেছে। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির শ্যালকের ঘরওয়াপসিকে ‘উলটপুরাণ’ হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল।

প্রসঙ্গত, মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রেলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ২ কোটি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সৃজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছিল মুকুল রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই নাকি ৫০-৬০ জনের কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছিলেন। সেই মামলায় ২০১৮ সালে তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল রাজ্য পুলিশ।

প্রায় ১ বছর জেলে থাকতে হয় তাঁকে। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেন তিনি। তারপর এদিন তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়া যথেষ্টই তা‍ৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

বুধবার তৃণমূলে ফিরে আসার কারণ জানতে চাইলে সৃজন বলেন, পরিবারে অশান্তি হয়। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের অশান্তি হয়। তাতে কিছু দিনের জন্য কোনও এক ভাই পরিবারের বাইরে থাকে। কিন্তু মনোমালিন্য মিটে গেলে সবাই ঘরে ফিরে আসে। আমার সঙ্গেও তেমনই হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে এ সব বলতে পারব না। দলের অন্দরের ব্যাপার। ভুল বোঝাবুঝির জন্যই যেতে হয়েছিল আমাকে।

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বার করছেন মাননীয়া, বাতিল করুন বন সহাসকের প্যানেল- মমতাকে কড়া জবাব রাজীবের

হঠা‍ৎ বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? সৃজন বলেন, বিজেপি করা যাবে না। ভারতবর্ষ একটা এত বড় দেশ। এখানে নানা মত, নানা পথ। ধর্মের রাজনীতি ভারতে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। কারণ, দেশের সংবিধানই ধর্মনিরপেক্ষতার উপর দাঁড়িয়ে।

তিনি তৃণমূলে ফিরে এলেও মুকুলের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কে কোনও ‘প্রভাব’ পড়বে না বলে দাবি করেন সৃজন। দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার সময় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছিলেন সৃজন। কিন্তু এমন কোনও মন্তব্য করেননি বলে বুধবার দাবি করেন তিনি।

তাঁর দাবি, আমি এমন কোনও মন্তব্য করেছি বলে ভিডিয়ো দেখান! তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।

বিজেপি-র অন্দরের অবশ্য খবর, সম্প্রতি মুকুল-সৃজন সম্পর্কে একটা ‘শৈত্য’ এসেছিল। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, সৃজনের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। সেটা থাকা অন্যায়ও নয়। কিন্তু মুকুল’দা সে ভাবে কখনও ওঁকে সামনে এগিয়ে দেননি। বরং উনি অনেক বেশি নজর দিয়েছিলেন শুভ্রাংশু রায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারের উপর। সেটাও সৃজনের ক্ষোভের কারণ হয়ে থাকতে পারে। তবে সৃজন আমাদের দল ছেড়ে তৃণমূলে ফেরায় মুকুল’দা যে খানিক বিড়ম্বনায় পড়লেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

প্রসঙ্গত, সোমবার কালনায় দলীয় সভায় ‘জায়গা ছেড়ে দেওয়া’র কথা বলতে শোনা গিয়েছিল মুকুলকে। তৃণমূল-ত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে নিয়ে মুকুল বলেছিলেন, জায়গা ছেডে় দেওয়ার পালা শুরু হয়েছে। আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। জায়গা ছাড়তে জানাটাও একটা আর্ট। কখন জায়গা ছাড়তে হবে, সেটা শিখতে হবে।

মুকুলের ওই বক্তব্য নিয়ে স্বভাবতই জল্পনা শুরু হয়েছিল। যে তিনি কি আবার ‘ঘর ওয়াপসি’-র কথা ভাবছেন! পাশাপাশিই, মুকুল ইদানীং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিশেষ কোনও ‘আক্রমণাত্মক’ মন্তব্য থেকে বিরত থাকছেন।

সংখ্যালঘুদের মধ্যে তৃণমূলের আধিপত্য কার্যত মেনে নিয়ে তিনি সম্প্রতি বলেছেন, পরীক্ষাটা ১০০-য় দেব। যদি ৩০ বাদও দিই, তা হলেও ৭০-এ ৫১ পেতেই হবে। নিজে হিন্দু হলেও সব ধর্মের মানুষকেই সম্মান করেন বলেও মন্তব্য করেন মুকুল।

তবে মুকুলের ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, ‘সরে যাওয়া’র কোনও চিন্তাভাবনা তাঁর মাথায় নেই। তবে রক্তে শর্করা রোগ এবং বয়স তাঁকে খানিকটা কাবু করেছে। সেই কারণেই তিনি আগের মতো অত বেশি সময় দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তিত। ওই বক্তব্য সেই সূত্রেই।

সম্পর্কিত পোস্ট