Nandigram Diwas : উন্নয়ন হয়নি, হয়েছে রাজনীতি ; মুখ্যমন্ত্রীর দেখা চাইছে নন্দীগ্রাম

নয়ন রায়

নন্দীগ্রাম সব সময় রাজনীতির শিরোনামে থেকেছে। রক্তাক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এরাজ্যে বামেদের বিরুদ্ধে সেই সময়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বর্তমান শাসকদল। তাতে বহু মানুষের প্রাণ গেছিল সেদিন। তারপর বহু জল গড়িয়ে গেছে হলদি নদী দিয়ে। গোপালনগর, কখনো বয়াল, কখনো সোনাচূড়া বা বিভিন্ন গ্রাম সেই সময় উত্তপ্ত হয়েছে বারবার দোদর্ডপ্রতাপ বাম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের নোটিশকে কেন্দ্র করে।

সেই সময় অভিযোগ বহু মানুষের মৃতদেহ তালপট্টি নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। সেই সময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব ছিলেন প্রসাদ রঞ্জন রায়। তাঁর মন্তব্যকে ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল বামশাসক দলের অন্দরে। স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তাঁর বক্তব্যো হাড় হিম করা সন্ত্রাসের তত্ত্ব কার্যত আলিমুদ্দিনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

সারা ভারতবর্ষে জুড়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মুখ হয়ে দাঁড়ায়। শুভেন্দু অধিকারী নেতৃত্বে আন্দোলন ঘনীভূত হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসকে শাসন ক্ষমতায় এনে দিয়েছে। এই তথ্য তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে আজ অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই।

ভূমি উচ্ছেদ রক্ষা কমিটির নামে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তারা। ২০০৬ -২০০৭ থেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস মহাকরণ থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উপড়ে ফেলার যে ডাক দিয়েছিল তা সফল হয়েছিল অবশ্যই। তার কারিগর ছিল শুভেন্দু অধিকারী।

 

বর্তমানের তৃণমূল কংগ্রেস তা মানতে নারাজ। প্রতিবছর গোকুলনগরে ১৪ মার্চ গণহত্যা দিবসে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করা হয় হয়। তৃণমূল কংগ্রেস বনাম শুভেন্দু অধিকারীর লড়াই বিগত এক বছর ধরে নন্দীগ্রামের মানুষ দেখেছে। কারণ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে।

নির্বাচনের হারের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নন্দীগ্রামে আসেননি। এটাই বাস্তব সত্য। অথচ প্রতিমাসে না হোক নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী আসেন। গোকুলনগর, সোনাচূড়া সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এ তথ্য এলাকার মানুষ বলছেন।

Nandigram Diwas

কিন্তু দুদিন নন্দীগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে যা দেখলাম তাতে উঠে আসে অন্য তথ্য। রেয়াপাড়া শিব মন্দির এলাকার রানি পারুইয়ে বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের সময় যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে কথায় অজানা তথ্য উঠে এল। সেই রানি পারুই তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা।

তাঁর বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার সময় তাঁর মেয়ের একটি চাকরি করে দিয়ে গেছেন। ফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। উক্ত একটা চিত্র। আরেকটি চিত্র নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে গ্রামের উন্নয়ন হয়েছে। জল ধরো জল ভরো, পানীয় জল বেশকিছু সেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।

উন্নতি যেটা হয়েছে তা হল পারাদিপের শক্তিপুর থেকে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের একটি গ্যাসের লাইন নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিরুলিয়া গ্রামের উপর দিয়ে গিয়ে সোজা হলদিয়াতে সংযুক্ত হয়েছে। আর কয়েক বছরের মধ্যে যারা জমি দিয়েছেন তারা জমির দাম পেয়েছেন এবং বাকিরা পেয়ে যাবেন।

এখানে জমি নিয়ে কোন আন্দোলন শোনা যায়নি। কিন্তু বাস্তবে নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি ভালো না।  নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক, নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকে সার্বিকভাবে রাস্তাঘাটের বেহাল পরিস্থিতি চোখে পড়ার মতো। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের উন্নয়নের কথা বলছেন। ২৯৩ কেন্দ্রে তিনি যখন ছুটে বেড়াচ্ছেন তাহলে একটি কেন্দ্র তার নজরে নেই কেন ? তার দলের লোকেরাই প্রশ্ন করছেন।

জনজাতিদের নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে ত্রিপুরার অঙ্ক জমিয়ে দিলেন ‘মহারাজা’

এলাকার মানুষের বক্তব্য, সিভিক পুলিশের চাকরি দিয়ে আর কন্ট্রাকচুয়াল সার্ভিস দিয়ে নন্দীগ্রামের উন্নতি হবে না। নন্দীগ্রামকে সার্বিকভাবে বিকাশের মোড়কে তৈরী করতে গেলে দরকার মাছ চাষের বৃহৎ বাজার তৈরি করা। কৃষি ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে এখানে সেই সাফল্যকে সামনে রেখে কৃষিভিত্তিক শিল্পের পরিবেশ তৈরী করা।

সরকারের সুনজরে না থাকার কারণে এখানকার কৃষকরা তাদের ফসলের দাম পাচ্ছে না। এটাই বাস্তব। বসন্তের দুপুরে হাওয়া যখন শিরশির করে বইছে তখন এক বুক আশা নিয়ে নন্দীগ্রামের বহু বেকার যুবক-যুবতী যারা শিক্ষিত, যাদের যোগ্যতা অনুযায়ী স্কুলশিক্ষক হওয়া উচিত ছিল বা কোন কলেজের অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা ছিল কিংবা কোন সরকারি হওয়ার সমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা বেকার।

নন্দীগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল সামগ্রিক উন্নয়ন হয়নি। শুধু রাজনীতি হয়েছে। তাই এতগুলো বছর নন্দীগ্রাম শুধু থেকেছে ইতিহাসে।তাদের নাম লেখা হয়েছে বিপ্লবের সরণিতে। বাস্তবের ছবিটা কিন্তু আলাদা। দ্বিমুখী লড়াইয়ের মধ্যে নয়, লড়াই হোক উন্নয়নের। এই দাবি এলাকার মানুষের।

সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন না করতে পারলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিন্তু ফলাফল খুব একটা ভালো হবে না বলে মনে করছেন এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা। এখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। দীর্ঘ করোনাকালের পরিস্থিতি খুব খারাপ কেটেছে। তাই কঠিন কঠোর বাস্তবের উপর দাঁড়িয়ে বর্তমানে নন্দীগ্রাম চাইছে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা পেতে।

সম্পর্কিত পোস্ট