পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রে নয়া ইতিহাস, বাম শূণ্য বিধানসভা সম্মুখ সমরে তৃণমূল-বিজেপি
সহেলী চক্রবর্তী
সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। 292 টি কেন্দ্রের মধ্যে 205 টি কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। 84 টি কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়ে। একটি আসনে এখনো পর্যন্ত সংযুক্ত মোর্চা এগিয়ে রয়েছে। সেটি ভাঙ্গড়। অর্থাৎ সমীকরণ স্পষ্ট। এবারের বিধানসভা বামশূন্য।
34 বছরের বাম দুর্গের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন 2011 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার গোটা রাজ্যজুড়ে পরিবর্তনের যে ঝড় উঠেছিল 2021 এর নির্বাচনেও সেই ঝড় দেখা গিয়েছিল গোটা রাজ্য। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল পরিবর্তন নাকি প্রত্যাবর্তন?
অবশেষে সেই দিনের অপেক্ষা শেষ প্রহরে। অবাক করার মত বিষয়, বামেদের অনেক তরুণ মুখ জয়ের দাবিদার হলেও জনগণের রায়ের কাছে পরাজিত হয়ে গেলেন তারা। কিন্তু কেন? সে প্রশ্ন ঘুরে ঘুরে আসছে বারবার।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে আইএসএফের সঙ্গে জোট বামেদের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিল। একইসঙ্গে জোট নিয়ে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মনোভাব আস্থা অর্জন করতে পারেনি কর্মীদের। তাই মুর্শিদাবাদ এবং মালদা সহ শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু আসনে বাম – কংগ্রেসের গড় থাকা সত্বেও শূন্য হাতেই ফিরতে হল তাদেরকে।
2011 সালের পর থেকে বামেরা ফ্যাক্টর হয়েছে 2016 বিধানসভা নির্বাচনে, 2018 পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবং 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে। লোকসভা নির্বাচনে বামেদের ভোট গিয়ে পড়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। তা নিয়ে বামেদের তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে 2021 এর নির্বাচনের যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট, বাম-কংগ্রেসের ভোট গিয়ে পড়েছে তৃণমূলে। আর তাতেই বদলে গেল এক নিমেষে বাংলার রাজনৈতিক চরিত্র। শিল্প নেই , চাকরি নেই, বেকারত্ব ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী- এসব কিছু নিয়ে বারবার সক্রিয় ভূমিকায় প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে বামেদের।
সম্প্রতি নীরবতা ভেঙ্গে কলম ধরেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে শেষ মুহূর্তে সিঁড়ি ভাঙা অংকের হিসাব নিকাশটা ওলটপালট হয়ে গেল। যেটা তৃণমূলও বোধহয় আশা করেনি।
দাপুটে তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, বাম-কংগ্রেস নিজেরাই আত্মহত্যা করেছে আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করে। তাই এবারের নির্বাচন থেকে একেবারে ভ্যানিশ হয়ে গেলেন।
এবারের নির্বাচন বামেদের বড় শিক্ষা দিয়ে দিল। ঘুরে দাঁড়াতে গেলে আলিমুদ্দিনের অন্দরে আরো ঝাড়াই-বাছাই প্রয়োজন সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাংলার মানুষ।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে আট দফায় নির্বাচন কমিশন যেভাবে ভোট চেয়েছিল ঠিক সেইভাবেই এগিয়েছে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি। কাজেই এবারের নির্বাচনে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কোন প্রশ্ন বিজেপি বা বাম – কংগ্রেসের তরফে তোলা হলেও তা ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে এ রাজ্যের মানুষ।
একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে গেল, 2024 এর লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে অচিরেই বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।