ঝলমলে রবিবারে পাহাড়ের বুকে রাজনীতির নয়া সমীকরণ

।। নয়ন রায় ।।

কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে হিমশীতল অপরূপ মায়ানগরী হল দার্জিলিং। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল হতে শিরশিরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ম্যাল থেকে সুদুরে কাঞ্চনজঙ্ঘার চুড়া একেবারে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। সকালে তারই গা থেকে ঠিকরে আসা আলো গোটা এলাকাকে ঝলমলে করে তুলেছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে এখন ধোঁয়াশা কাটেনি। এরই মধ্যে পাহাড়ে প্রত্যাবর্তনের পর রবিবার ভাষণ দেবেন মোর্চার তাবড় নেতা বিমল গুরুং।

রবিবার মোর্চা নেতার সভার আগে সেজে উঠেছে চকবাজার।  সমস্ত প্রস্তুতি শেষ। হাজার ওয়াটের মাইক থেকে ভেসে আসা বিমল গুরুংয়ের শব্দে কেঁপে উঠবে গোটা পাহাড়। এই চকবাজারের সভাস্থল থেকে রাজনীতিতে উত্থান হয়েছিল বিমল গুরুংয়ের, তা এখন ইতিহাস। ২০১৭ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে তাঁকে পাহাড় ছাড়তে হয়েছিল । একটানা বহুদিন অবরুদ্ধ হয়েছিল পাহাড়। ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিককে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।

এর পর সিকিম-নেপাল হয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন বিমল। পাহাড়ের আড়ালে থেকেই এনডিএর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়ে রাজনৈতিক সমীকরণ ঠিক করেছেন। কিন্তু একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল এই বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে। তাঁর ডানা ছাটতে একাধিক পন্থা অবলম্বন করেছিল রাজ্য সরকার। পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং দীর্ঘ অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি দিতে পাহাড়ে নতুন মুখ হিসাবে উঠে এলেন বিনয় তামাং এবং অনিত থাপা। জিটিএর পদে মুখ্যমন্ত্রী বসালেন তাঁদেরকে। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াংয়ের পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাতে শুরু করে।

রবিবার উইক এন্ডে ম্যালে ভিড় করা বাঙালী পর্যটকরা আজও বিমলের ভাষণ শুনবেন। তিনি প্রত্যাবর্তনের কোনও রোমাঞ্চকর কথা বলেন কিনা তা নিয়ে সারা রাজ্যের নজর থাকবে। সকাল থেকেই মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। রাজ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকদের ভিড়ে থিকথিক করছে চকবাজার। কারণ এবারে শাসক দলের সমর্থন পেয়ছে বিমল।

আরও পড়ুনঃ ভোটের আগে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত, গুরুঙের সভা ঘিরে সাজো সাজো রব পাহাডে

নেপালের জাতীয় কবি ভানুভক্ত আচার্যের নামে থিয়েটার হলে ২০১৭ এর আগে অনেক ভাষণ দিয়েছেন পাহাড়ের দাপুটে নেতা বিমল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা বদলে গিয়েছে। আমাদের মনে আছে ২০১৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষের কথা। গোর্খাল্যান্ডের দাবীতে পাহাড়ে মানুষের উত্তাপ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন সময় কাঁটা বেছানো পথে লড়াই চলছিল। সেইসময় পাহাড়ে জল এবং খাদ্য সংকটের কারণে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা থেকে কাটিয়ে পরে বিজেপিকে জব্দ করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মেলালেন বিনয়।

পাহাড়ে একাধিকবার রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। প্রয়াত সুভাষ ঘিশিং এবং প্রয়াত মদন তামাংয়ের ইতিহাস সকলের জানা। নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বিনয় তামাং এবং অনিত থাপাদের নিয়ে। পাহাড়ে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে এনডিএর সঙ্গে হাত মেলাতে চাইছেন তাঁরা। এনডিএ শিবিরে তাঁরা যাবেন কি না, অথবা পরবর্তীকালে তাঁরা কি পদক্ষেপ নেন সেদিকে নজর থাকবে। কারণ গত তিন বছরে  তাঁদেরও শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে।

সব মিলিয়ে আজকের সভা থেকে পাহাড়ের নেপালি ভাষাতেই বক্তৃতা দেবেন বিমল গুরুং। পাহাড়ের মানুষের মধ্যে জনমত তৈরি করতে এটাই হবে তাঁর কাছে প্রধান অস্ত্র। শনিবার মেদিনীপুরের ময়দানে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য যেমন বাংলার রাজনীতিতে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে, ঠিক তেমন হিমশীতল প্রদেশে বিমল গুরুংয়ের রাজনৈতিক ভাষণ ভীষণভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট