বছর শেষে একনজরেঃ ঘটনাপ্রবাহের দ্বিতীয় পর্ব

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এরই মধ্যে বদলে গেল মধ্যপ্রদেশের সরকার। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সহ ১৬ জন বিধায়কের দলবদলের পরে ক্ষমতায় এল শিবরাজ সিং চৌহানের সরকার। সরে যেতে হল কমলনাথের কংগ্রেস সরকারকে।

মার্চের বসন্ত যেতে না যেতেই সারা দেশে করোনা থাবা বসাতে শুরু করে। ২২ মার্চ দেশজুড়ে জনতা কার্ফু লাগু করেন প্রধানমন্ত্রী। ধীরে ধীরে থমথমে হচ্ছে পরিস্থিতি। বন্ধ হতে শুরু করে ট্রেন চলাচল। ২৪ শে মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় গোটা দেশের ছবি।

সময় এগোতে না এগোতেই সারা দেশ থেকে কাতারে কাতারে মানুষ বেরিয়ে আসেন রাস্তায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের বাঁচার তাগিদে কর্মস্থান ছেড়ে রওনা দেন ভিটেমাটির উদ্দেশ্যে।

সারা বিশ্বে এই নজির ভারত গড়লেও তা সত্যিই বেদনাময়। বহু সংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোথাও ট্রাকে করে ফিরছেন মানুষ। আবার কারোর ভরসা নিজের রিক্সা অথবা ভ্যান। কেউ ব্যবহার করছেন তিন চাকা।

নিজের ঘুমন্ত বাচ্ছাকে সুটকেসে চাপিয়ে সকাল থেকে হাঁটা দিয়েছেন ক্ষুধার্ত মা। আবার কোথাও মায়ের কষ্ট বুঝতে পেরে নিজের পায়ে হাত বুলিয়ে নিচ্ছে ৫ বছরের শিশুটি। আবার ‘মৃত’ মা ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে তার আঁচল ধরে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে ক্ষুধার্ত শিশু।

রাজনৈতিক দলগুলি ঢাক পিটিয়ে প্রচার করলেই ট্রেনে ফিরত যাত্রীদের জন্য জোতেনি কিছু। গাড়ি বন্ধ হতেই খাবার দেখতে পেয়ে রীতিমতো হামলে পড়ার উপক্রম। কতজন পথ্যে হাঁটতে গিয়ে মারা গেছেন তার সঠিক হিসেব কোনও সরকার দিতে পারা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

বরং শ্রমিকদের মুখে শোনা যায় “পুলিশ মাবহেন কা গালি দেতা হেয়। পুলিশ ডান্ডা মারতে হেয়। বিমারি সে কেয়া মারেঙ্গে, ভুখা মার যায়েঙ্গে”। যারা ফিরলেন তাঁদেরকে রাত কাটাতে হল ময়লা শৌচালয়ে, কোথাও জঙ্গলের গাছে। এই অবস্থা ভারতের মানুষ দেখবে তা কোনওদিন আশা করেনি।

আবার দেশে ফিরেও নতুন সমস্যা। যারা ভিন রাজ্য থেকে ফিরলেন তাঁদের থাকার জায়গা নিয়ে শুরু হল নতুন করে বিবাদ। কোথাও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নেই। আবার কোথাও তা থাকলেও পরিষেবা নেই। এই ছবি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেখেছে সারা দেশের মানুষ।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/round-up-2020-part-1/

কর্মহারা হয়েছেন বহু মানুষ। এমনকি এখনও লকডাউনের কারণে এবং অবসাদে কর্মহারা হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। যার সঠিক সংখ্যা সরকারের কাছে নেই। একমাত্র মানুষের ভরসা কৃষিকাজ। ক্ষতিগ্রস্ত হল বড় শিল্প থেকে শুরু করে ছোট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।

বহু মানুষ কৃষিকাজকেই বেছে নিলেন। কেউ বেছে নিলেন অস্থায়ী সবজি বিক্রি। চুক্তিভিত্তিক কিছু শিক্ষকের কর্মসংস্থানের ঠাঁই হল সাইকেলের দোকানে। এতটাই আতঙ্ক রাস্তায় পড়ে থাকা চারদিনের সাইকেলেও হাত দিল না কেউ।

করোনার মধ্যেই উত্তর ভারতের বিরাট অংশের কৃষকরা আক্রান্ত হলেন পঙ্গপালের হাতে। বিরাট পরিমাণ ফসলের ক্ষতি বাঁচাতে কৃষকদের ব্যবহার করতে হল ডিজে, থালা সহ একাধিক জিনিস। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা সহ একাধিক রাজ্যের কৃষকরা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

একে করোনায় রক্ষে নেই। তার ওপর দক্ষিণবঙ্গ সহ ওড়িশ্যার উপকুল এলাকাগুলি আক্রান্ত হল আমফানে। মে মাসের ঘুর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হলেন মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, হুগলী এবং দুই ২৪ পরগণার মানুষ। নষ্ট হয়েছে বিপুল ফসল।

সেই দিন সারা রাত নবান্নে জেগে তদারকি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের দিন হেলিকপ্টারে করে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সুন্দরবন সহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নিজের তদারকি করেন বাম নেতা কান্তি গাঙ্গুলি।

রাজ্যের ক্ষতিপূরণ বাবদ এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিডিওদের তরফে তালিকা পরকাশ করতেই দেখা যায় উল্টো ছবি। ক্ষতিগ্রস্তরা কোনও টাকা পাননি।

টাকা পেয়েছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদের নেতৃত্ব। অনেক এলাকায় ক্ষতিপূরণের অর্ধেক দেওয়ার দাবী করেন তাঁরা। এনিয়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। একাধিক ব্লকে ডেপুটেশন জমা দেন বিরোধীরা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্যাকফুটে চলে যায় তৃণমূল। এতদিন পরে নতুন করে চোখ খুলে যায় সাধারণ মানুষের।

সম্পর্কিত পোস্ট