আঁধারেই NH34: জ্যোতি-বুদ্ধ-মমতা, কথা রাখেনি কেউ
অঙ্কিত মুখার্জী, বারাসাত
জিন্দেগি কি সফর এক মোড় সে শুরু হোতা হ্যায়……
এই কথা বাস্তবে বেশ যুক্তিযু্ক্ত। জীবনে চলার পথের সব রাস্তা মসৃণ হয় না। একথা আমরা জানি। তবে খানাখন্দে ভরা রাস্তাকে আমরা মসৃণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিছুক্ষেত্রে সাফল্যও অর্জন করে ফেলি। তবে আজ যে রাস্তার কথা বলব, সেই রাস্তায় আমাদের প্রায় সর্বক্ষণই চলাচল করতে হয়। ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক। সেই রাস্তার নাম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক।সড়কপথে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের লাইফলাইন।
যারা নিত্যযাত্রী তাদের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মানেই জীবন যন্ত্রনা। বাস বা গাড়িতে যারা যাতায়াত করেন তবুও কষ্টেসৃষ্টে তারা চালিয়ে নিতে পারবেন। কিন্ত যারা বাইক, সাইকেলে যাতায়াত করেন বা যারা গন্তব্যে পৌঁছতে অটো বা টোটোকে বেছে নিচ্ছেন- যেকোন মূহুর্তে ঘটতে পারে বড় দূর্ঘটনা।বারাসাতের ১১ নম্বর রেলগেট পার হওয়ার বাইক, সাইকেল, অটো, টোটো উল্টে যাওয়া রোজনামচায় পরিণত হয়েছে।
পিচ উঠে বেরিয়ে দাঁত বের করে রয়েছে খানাখন্দ। ক্রমশ প্রলেপ উঠতে উঠতে দিনের আলোর মত প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়েছে জাতীয় সড়কের কঙ্কালসার চেহারা। কোনো মুমুর্ষ রোগীকে এই পথ ধরে হাসাপাতালে নিয়ে যেতে গেলে প্রবল ঝাঁকুনিতে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে বাধ্য। কোনো প্রসূতির কাছেও এই রাস্তা বিভীষিকা। কিন্ত দায় কার? রাস্তার এই বেহাল অবস্থার জন্য কাঠগড়ায় কাকে তোলা হবে?
এটা নতুন সমস্যা নয়। দীর্ঘ দিনের। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে রাস্তা মুখ থুবড়ে পড়ছে। রাজ্য আঙুল দেখায় কেন্দ্রকে। কেন্দ্র বাঁকা আঙুল দেখায় রাজ্যকে। NH34 দিনের পর দিন পড়ে থাকে একই অবস্থায়।
উল্লেখ্য বারাসাত থেকে কৃষ্ণনগর অংশে দীর্ঘ ৮৪ কিমি অংশে রাস্তা সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ আটকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে। প্রায় প্রতি বছর কয়েক রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক হয়। কিন্তু জট কাটাতে দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে দু’বার ঠিকাদার সংস্থা বদলে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বারাসত থেকে বড়জাগুলি ১৭ কিমি অংশে উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় জমি হাতে পায়নি ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া৷ তাই এই অংশে রাস্তা সম্প্রসারণ কবে হবে কেউ জানে না।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জি দূর্ঘটনায় পড়ার পর শুরু হয়েছিল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ। ২০০৭ সালে নদীয়া জেলায় জাতীয় সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী। তারপর বয়ে গিয়েছে অনেক জল। অবস্থার এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের।
ন্যাশানাল হাইওয়ে ডেভল্পমেন্ট অ্যাক্টে জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু করেছিল সরকার। এর মাঝে জমি ও ব্যবসা বাঁচাও কমিটি করে শুরু হয় অন্দোলন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্ব পার করে দেশে জায়গা পায় জমি অধিগ্রহনের নতুন আইন ২০১৩ সালে। সেই আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবী তোলেন জমি হারা মানুষরা। আজও সেই জটিলতা কাটিয়ে এগোতে পাড়েনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। ইতিমধ্যে রাস্তা দুধারের মানুষ এক কিস্তি টাকাও নিয়েছেন। তবুও তাদের দাবী বাড়তি টাকা না পেলে কোন ভাবেই তারা কাজ এগোতে দেবেন না।
৩৪ নম্বর সড়ককে, জাতীয় সড়কের পরিবর্তে অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলছেন ‘ন্যাশানাল নরক’। জমি দাতারাও স্বীকার করেন বর্তমান রাস্তার উন্নয়ন হওয়া দরকার। বড় বড় গর্তে ভর্তি রাস্তায় চলাফেরা করতে হয় একপ্রকার জীবন হাতে নিয়ে। সবাই বলছেন রাস্তা সারাই হবে। কিন্ত কবে হবে রাস্তা সংস্কার? নাকি রাজ্য বনাম কেন্দ্র দ্বন্দ্বেই প্রতিনিয়ত পেন্ডুলামের মত দুলবে আমজনতার জীবন?