মহারাষ্ট্রের বদলা বিহার? লালু ‘বিষ’ পান করতেই কিস্তিমাত বিজেপি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি মামলার অভিযুক্ত হয়ে লালু প্রসাদ যাদব সেই সময় রাঁচির জেলে আছেন। ২০১৩ সালের আশেপাশের ঘটনা হবে। দলের নেতাদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, “বিজেপিকে হারাতে আমি ‘বিষ’ পানেও রাজি”! কিন্তু এই বিষ কে সরাসরি না বললেও রাজনীতির কারবারিরা
ঠিকই বুঝেছিলেন একদা অন্তরঙ্গ বন্ধু নীতীশ কুমারকেই বিষের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন যদু-কুলপতি। কিন্তু বিজেপিকে হারানোর প্রশ্ন এর আগেও সেই বিষ পান করেছেন লালু। ফের তিনি সেই পথে হেঁটে পাটনার কুর্সী থেকে বিজেপিকে শত যোজন দূরে তো ঠেলে দিলেন। এমনকি জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করলেন বলেও মনে করছেন অনেকে।
নীতীশ কুমার গত ২০ বছরের মধ্যে ১৭ বছর বিজেপির সঙ্গে ঘর করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি বিহারে উপর উপর একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পারলেও, সর্বভারতীয় স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের কাছে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা কখনোই প্রশ্নাতীত নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপি যেভাবে হেরে যাওয়া রাজ্যেও পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করছিল তাতে তাদের থামাতে এমনই এক জোরদার ধাক্কার প্রয়োজন ছিল।
তাই পরিকল্পনা মতো মঙ্গলবার দুপুরে আগে রাজ্য মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন নীতীশ। তারপর বিকেল চারটে নাগাদ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল ফাগু সিং চৌহানের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা পত্র পেশ করেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ফের রাজভবনে যান। এবার সঙ্গে ছিলেন লালু প্রসাদ যাদবের দুই ছেলে তেজস্বী ও তেজপ্রতাপ যাদব।
বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়, দুর্যোগ আরও বাড়ার পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের
যথারীতি নীতীশ আরজেডি, কংগ্রেস, বামদলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাজোটের সরকার গড়ার দাবি পেশ করেছেন বিহারের রাজ্যপালের কাছে। তার আগে বৈঠকে বসে মহাজোটের নেতা হিসেবে নীতীশ কুমারকেই নির্বাচিত করা হয়। ফলে একটা বিষয়ে পরিস্কার, বিজেপি হাত ছাড়লেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থেকে যাচ্ছেন নীতীশ। সেই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিয়ে নতুন সরকারের অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে উঠবেন লালু প্রসাদের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় মহাজোটের পক্ষে ১৬৩ জন বিধায়ক আছেন। এই সংখ্যা বেড়ে ১৬৪ ও হতে পারে বলে জল্পনা। ৭৭ বিধায়কের বিজেপি পরিষদীয় দলেও ভাঙন ধরতে পারে বলে কয়েকটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। এবারেও বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরাতে পুরোনো তিক্ততা ভুলে ‘বিষ’ নীতীশকে গ্রহণ করলেন লালু প্রসাদ যাদব।
ঘটনা হল, শত দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়ার পরেও জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের কাছে লালু প্রসাদ যাদবের গ্রহণযোগ্যতা অপরিসীম। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার প্রশ্নে লালু প্রসাদ যাদবকে কেউ এক ফোঁটাও চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। শত ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি কখনও বিজেপির সঙ্গে আপোষের পথে হাঁটেননি।
ঠিক ৪০ দিন আগে যখন পিছনের দরজা দিয়ে শিবসেনার পরিষদীয় দলে ভাঙন ধরিয়ে বিজেপি মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে বাকি বিরোধীদের নতুন করে ভয় দেখাতে শুরু করেছে, তখন খেলা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে বিহারের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হয়েও মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি ছেড়ে দিল আরজেডি। নীতীশ কুমারকে বিজেপির কাছ থেকে সরিয়ে আনলেন লালু। আর তাতেই মাত হলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা।