পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক আইনের শাসন বজায় রাখতে হবে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য

শুভজিৎ চক্রবর্তীকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকার…

নির্বাচনের পর নারদকাণ্ডের অগ্রগতি। ৪ জন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হল। শুধুমাত্র নির্বাচনের পর বলা ভুল হভে। যখন গোটা দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখনই দেখা যাচ্ছে এরকম একটা পরিস্থিতি। যেখানে কেন্দ্র সরকার এবং সিবিআইয়ের তরপফে মামলার অগ্রগতি ঘটানো হল গোটা বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যঃ  না না এটা মিডিয়া তৈরি করছে এবং তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি বলে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না এরকম একটা ধারণা অপরাধীরাই তৈরি করতে চাইছে। কারণ, এই করোনা পরিস্থিতিতে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বাড়ছে। অপরাধ হলে কিছু করা যাবে না। ধর্ষণ হলে কিছু করা যাবে না। এধরনের অযৌতিক কথার গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন আইনের শাসন বজায় রাখতে হবে।

আর এটাতো তৃণমূল কংগ্রেসের তৎপরতায় হয়নি। এটা হয়েছে হাইকোর্টের তৎপরতায়। আমরা কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলা করেছি কেন সিবিআই চার্জশিট জমা দিচ্ছে না। চাপের মুখে পড়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন অপরাধীদের আড়াল করার জন্য অনেক যুক্তি খাড়া করা যায়। কিন্তু সেইসব যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

সিবিআই আইনত যেকাজ করতে বাধ্য, তাঁরা সেকাজ করছেন। সেই কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অপরাধীরা ধরা পড়ে যাচ্ছে। দেশে রাজনীতির সঙ্গে দুর্নীতির সমন্বয় তৈরি করার চেষ্টা করছে তৃণমূল এবং বিজেপি। এখন হয়তো আদালতে না গেলে কিছু হতো না। এখন আদালতে গিয়েছে বলেই এসমস্ত কথা বলে হচ্ছে। সুতরাং তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী চিত্র খাড়া করে কোনও লাভ নেই।

আমরা জানি শোভন চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখার্জী, মদন মিত্র এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। আদালতের গৃহবন্দীর নির্দেশকে উপেক্ষা করেই একই জায়গায় বৈঠক করছেন। সেখানে আরও নেতা বা নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এক সংবাদমাধ্যমেও ভিডিওতে তা উঠে এসেছে। কী বলবেন?

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যঃ  এটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাঁরা আসলে অসুস্থ নন। যেহেটু আদালতে তাঁদের জামিন দেয়নি এবং তাঁদেরকে জেল হেফাজতে রাখার কথা বলেছে তখনই তাঁরা অসুস্থতার এই নাটকটি করছেন। এটা করেই এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।

তাঁরা যে অসুস্থ নন, তার প্রমাণ হল যে মুহুর্তে আদালত বলল আমরা পরিবর্তিত অর্ডারে গৃহবন্দী থাকার কথা বলছি। তখনই সবাই সুস্থ হতে শুরু করলেন। এটা আমাদের রাজনীতিতে সম্প্রতিকালে হয়েছে। যখনই অপরাধীরা ধরা পড়েন, তাঁরা অসুস্থতার ভান করেন।

তাঁরা এখন তো হেফাজতে রয়েছেন। সেই হেফাজতে থাকাকালীন বাইরের অন্য একজন কী করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন? তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। যতদিন হেফাজতে থাকেন এগুলো করা যায় না। অর্থাৎ গোটা ব্যাপারটাকেই তাঁরা প্রহসনে পরিণত করছেন।

আজকে যদি এখানে একটা রাজনৈতিক বন্দী থাকতো। বা রাজ্যজুড়ে মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক কর্মীরা গ্রেফতার হয়ে আছেন দিনের পর দিন, চার্জশিটও ফাইল হচ্ছে না। তাঁদের সঙ্গে বাড়ির লোকজন কীভাবে দেখা করেন। সেই কঠোরতা এঁদের ক্ষেত্রে রক্ষা হচ্ছে না।

অতএব আদালত এবং গোটা ব্যবস্থাকে আশ্বাসচ্যুত করার ব্যবস্থা চলছে। যার ফলে মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে সিবিআই দফতরে ৬ ঘন্টা বসে থাকে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর অপরিসীম সময়। ৬ ঘন্টা হদরে তিনি বলেন আমাকে গ্রেফিতার করতে হবে। অথবা এঁদেরকে ছেড়ে দিন। গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমরা দেখলাম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সহ দু’জন বিচারপতির বেঞ্চের রায়ে মতপার্থক্য থাকার কারণে মামলাটি ৫ জন বিচারপতির বেঞ্চে চলে গেল। একজন আইনজীবী হিসাবে গোটা বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যঃ এটা পাল্লভারী বা পাল্লা হাল্কা হওয়ার কোনও বিষয় নয়। আমাদের বিচারব্যবস্থার এটাই একটা সুস্থ দিক যে বিচারপতিরা, তাঁদের স্বাধীন মতামত রাখতে পারেন। সেক্ষত্রে দু’জন বিচারপতির মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এটা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

এর মধ্যে অস্বাভাবিক হওয়ার কিছু নেই। এর আগে বহুবার দুই বিচারপতির মধ্যে মতপার্থক্য হয়েছে। এখন প্রধান বিচারপতি ঠিক করেছেন বিষয়টি ৫ জন বিচারপতির বেঞ্চে পাঠাবেন। তবে এটা জামিনের আবেদনের জন্য নয়। এভাবে একজন মুখ্যমন্ত্রী তদন্তকারী সংস্থার কাজে বাধার সৃষ্টি করবেন। তার আইনি পরিণতি কী হবে? সেটাই ৫ জন বিচারপতির বেঞ্চে যাবে।

আপনার মনে হয় ইডি প্রসিকিউশান সার্টিফিকেট জমা দেওয়ায় আইনি জটিলতা বাড়বে?

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যঃ এটা তো আইনের পদ্ধতি। আমাদের দেশে এই সমস্ত পদ্ধতি তৈরি হয় বলেই অপরাধীরা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেই করেই বলে কোথায় অপরাধ করলাম। এই সমস্ত তদন্তগুলি দ্রুত সম্পন্ন হওয়া উচিত।

আমাদের দেশে এই তদন্তগুলি অনেক সময় নেয়। যত দ্রুত এই সমস্ত তদন্ত সম্পন্ন হবে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তত সমাজ শক্ত হবে।

আপনার সঙ্গে আগেও কথা হয়েছিল, আপনি বলেছিলেন এই ঘটনায় যেসমস্ত সাংসদ অভিযুক্ত, যারা সাংসদ ছিলেন অবিলম্বে স্পিকারের অনুমোদন নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হোক। আপনি কী এখনও আপনার বক্তব্যে স্থির রয়েছেন?

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যঃ নিশ্চয়ই। আমি তো বলছি কোনও অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। সিবিআই অবিলম্বে সকলকে হেফাজতে নিয়ে চার্জশিট জমা করুক। অনুমোদনের বাহানা করে কিছু লোককে আড়াল করা যায় না। অবিলম্বে চার্জশিট জমা দিয়ে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হোক।

সোমবার দুপুর ১১ টা থেকে মামলার শুনানি কী আশা রাখছেন?

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যঃ আদালত বিচারসম্মত পদক্ষেপ নেবে। যাতে গোটা বিষয়টা দ্রুত সম্পন্ন হয়। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট