অজানা জ্বরে নাজেহাল উত্তরবঙ্গ, পরিস্থিতি পরিদর্শনে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ প্রতিনিধি দল
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাসি ও অন্য উপসর্গ জনিত ভাইরাস জনিত সংক্রমণের ঘটনা খতিয়ে দেখতে এবার উত্তরবঙ্গে পরিদর্শনে এলো রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সোজা উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে ওই আসেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এদিন স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাঃ সুশান্ত রায়, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা, মেডিকেল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক সহ অন্য চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক বা শিশু বিভাগ ঘুরে দেখেন। পরে এখান থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালেও পরিদর্শনে যান বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রতিনিধি দলটি। সেখানেও এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের দেখার পর এই দলটি পরে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালেও যান।
অজানা জ্বর মোকাবিলায় শিশুদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলিতে বাড়ছে বেড
বৈঠকের শেষে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ সুশান্ত রায় জানান, পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। তবুও কোভিড সিচুয়েশন চলছে। তার মধ্যে হঠাৎ করে শিশুদের মধ্যে জ্বর দেখতে পাচ্ছি। সেই জন্য নিজেদের ও সামজকে সতর্ক করতে আমরা একটি মনিটরিং টিম তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখছি। কলকাতা থেকে একটি স্টেট লেবেলের টিম এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ওনারাই এই জায়গাটা ফলো আপ করছেন। ওনারা দেখবেন আমাদের প্রিপিয়ার্ডনেস কি আছে এবং কোন ঘাটতি থাকলে তা সমাধান করবে। বেড আপগ্রেডেশন নিয়েও কথা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের বিষয়েও কথা হয়েছে। কলকাতা থেকে বিভিন্ন ডাক্তাররা আছেন। আমরা বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে বেশি চিন্তিত।
তাঁর কথায়, কোভিড পরিস্থিতি চলছে। দেখা হচ্ছে সার্স কিছু আছে কিনা। কোভিড টেষ্টও করে নেওয়া হচ্ছে প্রতিটি বাচ্চাকেই। সেক্ষেত্রে সবটাই নেগেটিভ আসছে। এছাড়াও যেসব ভাইরাল টেষ্ট আছে তা সবটাই ৬-৭টা করে করছি। এছাড়া এসটিএম এ ১০টা কেস পাঠানো হয়েছিল তাতে দেখা যাচ্ছে যে রেসপারিটরি ইনসিক্সক্ট বা আরএসপি ভাইরাস, আর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বি কিছুটা রয়েছে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, “এগুলি সাধারণত প্রতিটি বছর এই মরসুমে হয়েই থাকে। পরিসখ্যান দেখা গেলে ২০১৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যে সংখ্যাটা দেখেছি, তার চাইতে এবছর এখন পর্যন্ত কেস অনেক কম আছে।
তার কারন হিসেবে ডাক্তার রায় বলেন, গত দুবছর আমরা মাস্ক পরছি। আমরা বড়োরাই মাস্ক ব্যবহার করছি। বড়োদের থেকেও বাচ্চাদের হতে পারে তাই মাস্ক ব্যবহার করায় কেস অনেক কম আছে।
তিনি আরও জানান, এই ভাইরাস ক্লোনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ছোয়াচে টাইপের। তাই সব জায়গাতেই আইসোলেটেড বেড করার কথা বলা হয়েছে। আরএসডি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ কেস আসছে সেই সব বাচ্চাদের আইসোলেটেড বেডে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি জানান, ১২০জন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি আছে। সবাই মোটামুটি সুস্থ। তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোন সম্পর্ক নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমানে ভাইরাল ফিভার নিয়ে ভর্তির পরিসখ্যান দিয়ে ডাঃ রায় জানান, ডেঙ্গিতে ৩জন, ম্যালেরিয়ায় ১৩জন, স্কাপ টাইফাসে ৩জন ও জেই-তে ৩জন ভর্তি আছেন মেডিক্যাল কলেজে।এসএসকেএম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ রাজা রায়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল গড়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রতিনিধি দলই উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে এদিন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে স্কাপ টাইফাস ,ডেঙ্গু ও জাপানি এনকেফেলাইটিস এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পর শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে রওনা দেন পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলটি।