আমার চোখে মন্ত্রী ‘রবি’…

নয়ন রায়

সাংবাদিকতা করার সুবাদে ভারতবর্ষের বহু নামজাদা রাজনৈতিক নেতাদের দেখা ও ইন্টারভিউ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। জর্জ ফার্নান্ডেজ, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, বৃন্দা কারাট- এদের মত ক্ষুরধার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে রবি ঘোষ ক্ষুদ্র।

তৃণমূলী শাসনের বাইরে রবিদার নাম না জানাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবু বলি আমার অভিজ্ঞতার নিরিখে রবি ঘোষ একজন নিপাট ভালো মানুষ। খুব বড় মাপের নেতা না হলেও তিনি জনগণের খুব কাছের একজন নেতা। মমতার মন্ত্রিসভায় রবি ঘোষ নামটাই উত্তরবঙ্গের দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে অতি পরিচিত।

মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে সাংবাদিকতা করাটা বেশ চাপের। অনেক সমস্যা আছে আর আগামীদিনে থাকবেও। তবে নিজস্ব ভঙ্গিমায় সাংবাদিকতা করাটাই  আমার কাছে বেশী শ্রেয়।

একজন সাংবাদিক হিসাবে আমার চোখ দিয়ে দেখা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথকে ঘোষকে নিয়ে কভারস্টোরি করার ইচ্ছা হল।আগেই বলেছি আমি স্বাধীনচেতা সাংবাদিকতায় বেশী স্বচ্ছন্দ। যদিও এক্ষেত্রে রবিদার অনুমতি নিলাম। তিনি রাজিও হলেন।

এই প্রতিবেদনে আমার সাংবাদিকতা সত্তায় রবি ঘোষ সম্পর্কে যা মনে হয়েছে সেটাতেই ভরপুর। এর অন্য কোন মানে না করাটাই ভালো।

২০১৬র বিধানসভা নির্বাচনে বাম কংগ্রেস জোট ছিন্নভিন্ন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন। পেশার তাগিদে অন্য একটি মিডিয়ায় চাকরি করি। সেই সুবাদে রবিদাকে সেই অফিসেই প্রথম দেখা। দুজন অপরিচিত মানুষের প্রথম আলাপ যেরকম হয়, অর্থাৎ নাম মাত্র কথাবার্তা, আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।

সেদিন রবি ঘোষকে নিয়ে বেশ জল মাপছিলাম। আমি যে তাঁর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সেটা প্রকাশ করিনি কখনো।

ভাবছি মমতার মন্ত্রিসভার উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ মুখ তিনি। তারওপর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। আমাকে কি আদৌ পাত্তা দেবেন? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়।

২০১৬ সালে ব্যক্তিগত কাজে কোচবিহার গিয়েছিলাম। বিকেলের দিকে রবি দাকে ফোন করলাম। বললেন আমি হোটেলে আসছি। এসেও গেলেন। তারপর কত কথা। রাজনীতির মারপ্যাঁচ আর উত্তরবঙ্গের ভূগোল নিয়ে ঘন্টাখানেক গল্পে রবি ঘোষ সেদিন অন্যভাবে ধরা দিলেন।

যাইহোক পরের দিন কোচবিহার ছাড়লাম। যাওয়ার আগে রবিদাকে বলে এসেছিলাম কলকাতায় আপনার সঙ্গে দেখা হবে। হয়েছেও বহুবার। আমি অন্য একটি চ্যানেলে চাকরি করার সুবাদে ফের রবিদাকে স্টুডিওতে আমন্ত্রন করলাম।কোনোদিন না করেননি তিনি।

ঘড়ি ধরে ঠিক সন্ধ্যে ছটা নাগাদ রবিদা আমাদের অফিসে এসে উপস্থিত হলেন এক মুখ দাঁড়ি নিয়ে। সম্ভবত তাঁর কোন আত্মীয় মারা গিয়েছিলেন। রবি ঘোষের সাক্ষাৎকার নিতেই হবে। আমি স্টুডিও কালচার থেকে একটু দূরেই থাকি। সহকর্মী রুমেলা চক্রবর্তীকে বললাম রবি ঘোষের সাক্ষাৎকার নিতে হবে। এক কথায় রাজি। চমৎকার ইন্টারভিউ হল। রুমেলা এখন অন্য একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।

এরকমভাবে রবি ঘোষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকলো। এরপর আমি একটি গ্রাউন্ড চ্যানেলে কাজে যোগ দিলাম সেখানেও রবি দা কে ফোন। যাহা বলা তাহাই কাজ। সন্ধ্যায় হাজির হলেন মন্ত্রী রবি ঘোষ। আমার সহকর্মী সহেলি চক্রবর্তীর উপর সেদিনের ইন্টারভিউ-র দায়িত্ব চাপিয়ে দিলাম। তাতে চ্যানেলের মালিক ও ম্যানেজমেন্ট বিরোধিতা করেছিল। কেন জুনিয়ারকে বসানো হলো!

আমি বসাবো জুনিয়ারকে এটাই আমার টার্গেট। ২০১৭ সালে রবি ঘোষের সাক্ষাৎকার সহেলী চক্রবর্তী নিয়েছিল। বর্তমানে আমরা একই অফিসে কাজ করি। রবি ঘোষ কে না বুঝলে তাঁকে প্রেডিকশন করা যাবে না। সেদিনও অদ্ভুত লেগেছিল।

জুনিয়ার বলে ইন্টারভিউ দেবো না এই দর্শনের ধার তিনি ধারতেন না। বারবার বলতেন তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো আমি উত্তর দেব। আমি দু-একবার রবি ঘোষের ইন্টারভিউ নিয়েছি।

২০১৮ সালে একটি অন্য হাউস আমরা কর্মরত। একটি বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় অতিথি ছিলেন রবি ঘোষ। এক কথার মানুষ রবি ঘোষ সেদিন ঝড়-জল উপেক্ষা করেই হাজির হয়েছিলেন। তিনি বারবার বলতেন লড়াইটা জারি রাখুন। তারপর অজস্র বার কোচবিহারে রবিদার বাড়িতে ইন্টারভিউ হয়েছে। রবিদার কথায় আধঘণ্টায় হবে না আরও সময় বাড়াও।

২০১৬ থেকে রবি ঘোষের রাজনৈতিক কেরিয়ার নিয়ে বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছি আমি। নিজে বসতাম কম ইন্টারভিউতে।  সহকর্মীদের ওপরই দায়িত্ব বর্তাতো বেশিরভাগ সময়। তাঁরও ভালো লাগত এই নবীন প্রজন্মের সাংবাদিকদের সঙ্গে ইন্টারভিউ করতে। এতে অনেক আলোচনা হতো। তবে বিশেষ পাত্তা আমি দিইনি কোনোদিন।

রবি দা রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছেন একাধিকবার। একসময় বিজেপির টার্গেট হয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৯ এ কোচবিহার লোকসভার আসন বিজেপির হাতে চলে যাওয়ায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব দায়ী।

জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। সেদিনও কোচবিহার ছিলাম। বিজেপির তাণ্ডব চলছে। তৃণমূল ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে। পুলিশ দিশাহারা। রবিদাকে জিজ্ঞাসা করলাম কী বুঝছেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি? তাঁর উত্তর একদিন ঝড় থামবে।

সত্যিই ঝড় থেমে গেছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচন দোরগোড়ায় কোচবিহারে এখন দল চালাচ্ছেন অন্য কেউ। রবি ঘোষ রাজ্য সহ-সভাপতি। একুশের লড়াইটা কি হবে তা বলা কঠিন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস যেদিন গঠন করেছিলেন সেদিনও ছিলেন রবি ঘোষ। বর্তমানেও আছেন। মাঝখানে অনেক পরিবর্তন হলেও রাজনীতিবিদ রবি ঘোষের পরিবর্তন হয়নি। রবি ঘোষ ভাল না খারাপ সেটা বিচার করার দুঃসাহস আমার নেই। কারণ যার ৪০ বছর রাজনৈতিক জীবন সেখানে নতুন করে আমার কিছু না বলাটাই ভালো।

লড়াইটা জারি রাখুন রবি দা। আমরা আপনার সঙ্গে আছি…

সম্পর্কিত পোস্ট