বিজেপি নয়, কেজরিওয়ালরা জিতিয়ে দিচ্ছে আরএসএস-কে!
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ গান্ধি হত্যার পর আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে কড়া মনোভাব দেখিয়ে যিনি গোটা বিষয়টি করেছিলেন সেই বল্লভভাই প্যাটেলকেই পরে পুজো করা শুরু করেছে বিজেপি। এই বিজেপি বলতে গেলে আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা। আবার বিজেপিকে হারানোর কথা বলা অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি চাইছেন!
ভারতীয় রাজনীতিতে আজ নয়, বেশ অনেকদিন ধরেই এমন পরস্পর বিরোধী স্রোতের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এখানে বিরোধীতা মানে স্রেফ ক্ষমতার বিরোধিতা, আদর্শের নয়। সহজ করে বললে, আমার আদর্শগত শত্রুকেও পুজো করব যদি তাতে ভোট পাওয়া যায়। বিজেপির বল্লভভাই প্যাটেল ভজনা তারই প্রমাণ।
বা জহরলাল নেহেরুকে ভিলেন বানাতে সুভাষচন্দ্র বসুকে তুলে ধরাটাও এরই অংশ। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এই সুভাষই বারবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও হিন্দু মহাসভার রাজনীতি, তাদের হিন্দুত্ববাদী পথ নিয়ে মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এমনকি বিজেপির যিনি প্রাণপুরুষ সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যথেষ্ট খারাপ সম্পর্ক ছিল নেতাজির।
একাধিক বক্তব্য এবং লেখা প্রমাণ হিসেবে আছে যেখানে সুভাষ তাঁর অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদের সাম্প্রদায়িক সভা যেন ভণ্ডুল করে দেওয়া হয়! অথচ ইমেজ বিল্ড আপের জন্য সেই সুভাষকেই ব্যবহার করছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল চান নরেন্দ্র মোদির বিকল্প হিসেবে ভারত শাসন করতে। আর তা চান আদর্শের লড়াই লড়ে নয়। বরং বিজেপিকে ছাপিয়ে গিয়ে আরও গোঁড়া বিজেপি হয়ে উঠে। বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদিদের সমালোচনার অন্যতম বড় কারণ হল, তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ভারতবর্ষকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার বিরোধিতা।
চাপ বাড়াচ্ছে বাম, তাই কি ‘ফুটছে’ মুকুল
কিন্তু নিজেকে গরিবের মসিহা হিসেবে তুলে ধরা বিজেপির কট্টর সমালোচক কেজরিওয়াল মোটেও এই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সমালোচনা করেন না। বরং দেশের মুদ্রায় লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপার কথা বলে তিনি বিজেপির থেকেও একধাপ উপরের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করতে চান।
কিন্তু আইআইটি পাস কেজরিওয়াল ভালো মতোই জানেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মুদ্রায় কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতীক বা দেব-দেবীর ছবি ছাপা সম্ভব নয়। তবে কেন এমন বললেন আপ প্রধান?
ভোট এবং ভোট। তার জন্য বিজেপির মতাদর্শ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পথকেই যদি আরও ভালো করে আঁকড়ে ধরতে হয় অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা তবে তাই করতে প্রস্তুত। আর এতেই জিতে যাচ্ছে আরএসএস।
কারণ একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, কোনও কারনে বিজেপি ভোটে হেরে গেলেও আরএসএসের হিন্দু ভারত গড়ার লক্ষ্য ধাক্কা খাবে না। তার জন্য কেজরিওয়ালরা আছেন তো! এই অবস্থায় শুধু বিজেপির বিরোধিতা নয়, বিজেপির বিরোধী বাছতেও আরও সতর্ক হতে হবে আম-আদমিকে। নাহলে কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না।