করোনা নয়, নির্বাচনী প্রচার প্রাধান্য পাচ্ছে বিহারের রাজনীতিতে
শুভজিৎ চক্রবর্তী
গত পরশু সকাল বেলা ঘুম ভাঙার আগেই ফোন এল। ফোনটা এসেছিল পড়শি রাজ্য থেকে। পাটনার বাসিন্দা বন্ধু সুমিতের। গত চার মাস ধরে দুরদুরান্তের মানুষের সঙ্গে যে মারন ভাইরাস নিয়ে আলোচনা চলছিল, এদিনও সেটার ব্যতিক্রম হল না।
বরং শুরুটা হল বেশ কিছু আশঙ্কাজনক বিষয় নিয়ে।
সুমিতের ফোনে যা জানতে পারলাম তাতে এটাই বোঝা গেল চার মাস কেটে যাওয়ার পরেও করোনা মোকাবিলায় এখনও অবধি কোনও গঠনমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিহারের নীতিশ কুমারের সরকার।
গত কয়েকদিন ধরে যে সমস্ত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেখানে কোথাও ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীকে বাইরে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কোথাও হাসপাতালের ভিতর রোগীর সঙ্গে মৃত ব্যক্তির দেহ ফেলে রাখা হয়েছে। এই গাফিলতি কার? তার উত্তর মেলেনি।
শুরু থেকেই পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে গোটা দেশের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিহার। কারণ এই রাজ্য থেকেই বেশী সংখ্যক মানুষ অন্য রাজ্যে পাড়ি দেন কাজের জন্য। পুর্বাঞ্চলে শিল্প না থাকায় এখানকার মানুষকে অন্য রাজ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।
মন কি বাতে এমনটাও সাফ করে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু বিহারে পরিযায়ী শ্রমিকদের টেস্টিং হচ্ছে না। অভিযোগ উঠে আসে সরকারের বিরুদ্ধে। শ্রমিকদের করোনা টেস্টিং দুরে থাক। বিহারের কাটিহারে ট্রেন ফিরত অভুক্ত শ্রমিকদের খাবারের জন্য লড়াইয়ের ছবি আমরা এখনও ভুলিনি।
সম্প্রতি পড়শি রাজ্যের এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার শবদেহ নিয়ে যেতে এম্বুলেন্সের সঙ্গে কোনও কর্মীকে পাঠানো হয়নি। বরং সেই মৃতদেহ সতকার্যের জন্য তাঁর ছেলে এবং এক আত্মীয় পিপিই পড়ে এগিয়ে এসেছেন।
একজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালের বাইরে যথেচ্ছভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। কোনওরকমে তার মুখে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাস্ক লাগানো হয়েছে।
লকডাউনের দিনগুলিতে বন্ধ থাকবে বিমান ও স্পেশ্যাল ট্রেন চলাচল, সম্মতি কেন্দ্রের
শুরু থেকেই বিহারের জনগণের তরফে অভিযোগ উঠে আসছিল সঠিক সময়ে টেস্টিং না করায় বিহারে ক্রমশ মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। তার ওপর কম টেস্টিং হওয়ার কারণে অনেকের শরীরে করোনা ধরা পড়ছে না।
সূত্রের খবর, গোটা দেশ যখন করোনার সমস্যায় ভুগছে তখন সংখ্যাতত্ত্বের কথা মাথায় রেখেই টেস্টিং কম করাচ্ছে বিহার সরকার। এতে করে নির্বাচনী প্রচারে তাঁদের সুবিধা হবে।
করোনা কালেও বিহারের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ভোট রাজনীতির গুরুত্ব বেশী করে প্রাধান্য পাচ্ছে। এমনও অভিযোগ উঠে আসছে।
অভিযোগ, গত কয়েকমাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার কোনও সাংবাদিক বৈঠক করেননি। বদলে ভার্চুয়াল র্যালির দিকেই বেশী জোর দিয়েছেন তিনি।
চলতি মাসেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, দিল্লিতে লাগাতার মৃত্যুর ঘটনার পর দিল্লি সরকারের তরফে একটি সার্ভে করা হয়। যেখানে অত্যাধিক করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসাবে উঠে আসে কম টেস্টিং। দ্বিতীয় এম্বুলেন্স ব্যবস্থা।
গোটা বিশ্ব মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সরকার পক্ষ কিভাবে স্বাস্থ্য বিষয় এড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারে জোর দেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা।
স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশ্নে একাধিকবার সরকার পক্ষকে বিদ্ধ করেছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। নির্বাচনী প্রচার ছেড়ে মানুষের পাশে দাঁড়াক সরকার এমনটাই আর্জি লালু পুত্রের৷
যে সমস্ত হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে সেখানে জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা বেশী। সিনিয়র ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নও বিহারের মানুষকে তুলতে দেখা গিয়েছে।
বেতন বৃদ্ধি সহ একাধিক ইস্যুতে ডাক্তারদের পথে নামতে দেখা গিয়েছে৷ যার ফল ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
মধ্যপ্রদেশের সরকার বদল এবং রাজস্থানের রাজনৈতিক ডামাডোলের মাঝে গেরুয়া শিবিরের নজরে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। তারই মধ্যে বন্যা বিপর্যস্ত একাধিক জেলা।
প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ অনবরত লড়াই করে চলেছেন করোনা এবং বন্যার সঙ্গে। যে আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়ার ডাক প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন, বিহারে সেই আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়তে হলে মানুষের প্রয়োজন সরকারী সাহায্যের।
কিন্তু নির্বাচনী গুতোগুতিতে বিহারের মানুষের ভবিষ্যৎ বিশ বাও জলে।