কেবল মমতাই নয়, বিজেপির ভয় এখন অভিষেককেও

বাংলা দখলের লড়াইয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দূর্বল করাই এতকাল লক্ষ্য ছিল বিজেপির। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আক্রমণের অভিমুখ বদলে গিয়েছে। গেরুয়া শিবিরের এখন টার্গেট মমতার ভাইপো অভিষেক।

দিলীপ রায়

বাংলা দখলের লড়াইয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দূর্বল করাই এতকাল লক্ষ্য ছিল বিজেপির। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আক্রমণের অভিমুখ বদলে গিয়েছে। গেরুয়া শিবিরের এখন টার্গেট মমতার ভাইপো অভিষেক।

পিসির পাশাপাশি ভাইপোই আক্রমণের লক্ষ্য এখন। যার ফলে পুরসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে অভিষেককে বাংলার ‘রাজকুমার’ বলে খোঁচা দিয়েছেন অমিত শাহ।

লক্ষ্য ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন। তাই কলকাতায় শহিদ মিনারের জনসভায়  দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিঁধেছেন অভিষেককে। গণতন্ত্রে পরিবারবাদের কোনও স্থান নেই দাবি করে অমিত শাহ বলেছেন, এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কোনও রাজকুমার হবেন না, মুখ্যমন্ত্রী হবেন একজন ভূমিপুত্র। যিনি জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসবেন।

আরও পড়ুনঃ সংসদ বিরোধী আচরণের জন্য সাত কংগ্রেস সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন স্পিকার

এর আগে লোকসভা ভোটের সময়েও ‘দিদি’র পাশাপাশি মোদি-শাহের টার্গেট ছিলেন অভিষেক। রাজ্য জুড়ে তোলাবাজি-সিন্ডিকেট রাজ তাঁর নেতৃত্বেই চলে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পর শহরে প্রথমবার সভা করতে এসে মমতাকে তেমন আক্রমণ করেননি অমিত শাহ। তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যই ছিলেন অভিষেক।

অভিষেকের বয়স এখন মাত্র ৩২ বছর। দুবারের সাংসদ, বিপুল ধনসম্পদের মালিক। সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের প্রার্থী হিসাবে হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি ১.৩৮ কোটির সম্পদের মালিক এবং একজন বেতনভূক কর্মী তিনি।

ফলে অভিষেককে নিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। কোথা থেকে তাঁর এত সম্পদ হল,  কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থা কেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে না, তানিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বামেরা ও কংগ্রেস।

তাদের অভিযোগ, দিদি-মোদি সেটিং-এর কারণে বহাল তবিয়তে আছেন অভিষেক। ভাইপোই মমতার দূর্বলতা মনে করে তাঁকে নিয়ে বারবার আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

দলের সুপ্রিমোর ভাইপোকে প্রথমদিকে নেতৃত্বের একাংশ মেনে না  নিলেও এখন গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে তাঁর। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অভিষেক। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে এই নির্বাচনে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হয়। ২০১৯-এর নির্বাচনে তাঁর দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রেও খারাপ ফল করে দল।

কিন্তু এরপর থেকে নিজেকে  জনমানসে অন্যভাবে তুলে ধরতে শুরু করেন অভিষেক। রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের কেউ কেউ বলেন, ‘কোটিপতি ভাইপো’কে নিয়ে বিজেপি প্রশ্ন তুললেই তখন চুপ করে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিলাসবহুল আবাস এবং জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তিনি যে মমতার উত্তরসূরি তা এখন স্বীকৃত।

দলের পোড়খাওয়া নেতাদের দাবি, অভিষেক এখন পরিণত রাজনীতিক। তার প্রমাণও মিলেছে অভিষেকের সাম্প্রতিক বক্তৃতায়। সংসদে এবং একটি সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক এক ইভেন্টে তাঁর নজরকাড়া বক্তৃতা সাড়া ফেলে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ রাজনীতি এখন ইভেন্ট নির্ভর, নিখোঁজ জনগণের মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন

সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ফ্যান বাড়ছে তাঁর। বর্তমান প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সহ বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার আক্রমণ বিদ্ধ করেছে গেরুয়া শিবিরকে। সুবক্তা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন অভিষেক।

যতদূর খবর, এখন তিনি ভোটকুশলি প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে কাজ করছেন। তৃণমূলের পাঁচজনের শীর্ষ কমিটিতে প্রশান্ত কিশোরের পাশপাশি তিনিও  আছেন।

দলের লক্ষ্য ২০২৪ সালে ৬৫ বছরের প্রাজ্ঞ রাজনীতিক মমতা পা রাখবেন জাতীয় রাজনীতিতে। আর রাজ্য সামলাবেন অভিষেক। ফলে মমতার পাশাপাশি বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, বিজেপির চাই বাংলা। 

সম্পর্কিত পোস্ট