আফগানিস্তানে তালিবান কব্জার এক সপ্তাহ পার, জঙ্গিরা খুঁজছে টাকা

দ্য কোয়ারি ডেস্ক: এক সপ্তাহ আগের সেই ভয়াবহ রবিবার-১৫ অগাস্ট। ভারত ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছিল। আর ভারতের স্বাধীনতার আগেই স্বাধীন হওয়া (১৯১৯) আফগানভূমি সেই দিনই ঢুকেছিল দ্বিতীয়বার তালিবান কব্জায়। প্রথমবার ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত তালিবান ছিল ক্ষমতায়।

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়া আমেরিকা স্পষ্ট করেছে তাদের অবস্থান। বলেছে সেনা প্রত্যাহার করা ঠিক পদক্ষেপ। তবে আফগানিস্তানে যাবতীয় অর্থ সাহায্য বন্ধ করেছে ওয়াশিংটন।

কঠিন পরিস্থিতি ভারতের। বহু ভারতীয় আটকে পড়েছেন। বিদেশে ভারতের বৃহত্তম বিনিয়োগ এই আফগানিস্তানেই। সেসব লোকসানের খাতায় যাওয়া নিশ্চিত বলেই মনে করছেন দিল্লির কূটনৈতিক মহল। তবে তালিবান সরকারকে ভারত মান্যতা দেবে নাকি দেবেনা সেটা বিশ্বজোড়া প্রশ্ন।

তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার পর থেকে দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থা বন্ধ। খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। কাবুল পতনের পর সাত দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় শুরু হয়েছে ঝকমারি। চারদিকে খাদ্যের হাহাকার বাড়ছে। এমনকি তালিবানের হাত খালি। তারাও হন্যে হয়ে টাকার খোঁজ করছে।

গণহত্যা, ধর্ষণ নিয়মিত। ধর্মের নামে চলছে অত্যাচার। আফগানিস্তানের অবস্থা ফের প্রমাণ করছে, সন্ত্রাসবাদের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম নেই। তার একটাই ধর্ম রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি করা।

এক সপ্তাহ পার হয়েছে তালিবান জঙ্গিরা এখনও সরকার গড়েনি। তবে আফগানিস্থানের এই জঙ্গিদের সককারকে মান্যতা দিতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। আগ বাড়িয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, প্রয়োজন হলে ব্রিটেন তালিবানের সঙ্গে কাজ করবে।

কাবুলে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বন্ধ। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া তাদের দূতাবাস থেকে সব কর্মী সরিয়ে নিল। অন্যদিকে সুন্নি ইসলামিক তালিবানের সঙ্গে নরম সম্পর্ক রাখছে শিয়াপন্থী ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার। তাদের কাবুল দূতাবাস খোলা।

তাৎপর্যপূর্ণ তালিবান জঙ্গিরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করতেই পাকিস্তান সরাসরি সমর্থন করে। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানিরা বিদেশি দাসত্ব থেকে মুক্তি পেলেন। সেই সুন্নি ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান এখন এক কদম পিছিয়ে জানাচ্ছে, অন্যান্য দেশের অবস্থান দেখে নিয়েই তালিবানদের প্রতি বার্তা দেওয়া হবে।

তবে ইসলামাবাদ এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রক। কাবুলে তালিবান সরকার কি বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে হবে নাকি একলাই সরকার গড়বে জঙ্গিরা সেটি নিয়ে পাক রাজনৈতিক মহল তীব্র উত্তপ্ত। বিভিন্ন আফগান গোষ্ঠীর নেতারা এখন ইসলামাবাদে জরুরি আলোচনা চালাচ্ছেন।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ, পাক সামরিক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই তাদের মদতপুষ্ট হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্য হতে চলা তালিবান নিয়ন্ত্রিত সরকারে বড়সড় অংশীদারী চাইছে। কাবুলের সংবাদ মাধ্যম ও রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানাচ্ছে, হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি সংগঠনটি আফগান অর্থমন্ত্রক পাবে। ইতিমধ্যেই হাক্কানি প্রধান আনাস হাক্কানি কাবুলে গিয়ে কথা বলেছে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে।

প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট কারজাই তালিবান শান্তি বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি কাবুলে নিরাপদেই রয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত হয়েই দেশ ছাড়েন আশরাফ ঘানি। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট এখন নিজেকে বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করে তালিবান বিরোধী সংঘর্ষ চালাতে মরিয়া।

আফগানিস্তানের কিছু অংশে তালিবান বিরোধী বিক্ষোভ হলেও দেশটি এখন পুরোপুরি জঙ্গি কব্জায়। আর তালিবান ছাড়া আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে কিছু বিকল্প নেই বলেছেন কাবুলের রুশ রাষ্ট্রদূত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিন  বলেছেন, আফগানিস্তানের ওপর তালিবানের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হচ্ছে একটা বাস্তবতা। এটা মেনে নিতে হবে।

তালিবান কাবুল দখলের আগে জঙ্গি সংগঠনটির নেতা তথা আগামী প্রেসিডেন্ট হতে চলা মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদার চিন সফর করে। তার সঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকের পর আফগানিস্তানের রাজনৈতিক মোড় ঘুরতে শুরু করে। অতি দ্রুত তালিবান দখল করে নেয় কাবুল। চিন এখন সরাসরি তালিবানের পক্ষে বার্তা দিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট