আওয়াজ একটাই ‘লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তান’

।। পার্থ প্রতিম বিশ্বাস ।। 

।। আইনজীবী, বারাসাত কোর্ট।।

দিল্লির ঘটনায় আপাতত নিহত ৩৯ আহত ৩০০। এই সংখ্যাগুলোর পাশে বসতেই পারতো আরও কয়েকটা শুন্য থেকে নয়, যদিএ ভক্তদের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয় সেটা। যে ভাবেই হোক, রাজাকে খুশি করা চাই। সমস্যা হচ্ছে ওই গণতন্ত্র নামক শব্দটাকে নিয়ে। গতবছরেই দেশের ৬৭ শতাংশ জানিয়েছিলেন, তারা গণতন্ত্র চান।

কিন্তু পাশার চালে সে সংখ্যা হেরে ভুত। তাই দাঙ্গা হলেও বলতে নেই, ক্ষিদে পেলেও বলতে নেই। বাকী রাখা খাজনায় ঘৃন্য অপরাধ খুঁজে পাওয়া গেলেও মানুষ খুনের ঘটনায় ভগবানের নির্দেশ অনায়াসেই মেলে। সেই ভগবান, যাঁর চিরাচরিত পরিচিতি প্রজাবৎসল সহৃদয় রুপে। সেই ভগবান যিনি পিতৃসত্য পালন করতে ক্ষমতা ছেড়ে বনবাসে যান এবং সেই ভগবান, যাঁর মন্দির গড়তে তাঁরই ভক্তের নির্দেশে ভাঙতে হয় অন্য এক আরাধ্যের মন্দির।

আরও পড়ুনঃ অঙ্কিত শর্মার খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তাহির হোসেনকে সাসপেন্ড করল আম আদমি পার্টি

ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছেন, ‘যত মত তত পথ’, বলেছেন ‘জীবের সেবাই শিবের সেবা’। কিন্তু আজকের ভক্তদের মতে শিবকে পেতে হলে জীবের মাঝে নয় মন্দিরেই যেতে হবে। কোনও একসময় দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা হিসাবে শিব বা তার সহচররা পূজিত হতেন।

কিন্তু আজকের দুনিয়া ভক্তদের দখলে। তাই শিব আজ মন্দিরে বন্দী। অতএব মন্দির চাই, আরও বড় মন্দির চাই, আর তাই চাই প্রভূত সম্পত্তি। আর সে সম্পত্তি জোগাড় করতে জীব হত্যাও পূণ্যের কাজ।

এমনই কিছু জীব হত্যার ঘটনা মানতে পারেননি ভগবান কৃষ্ণ তথা মুরলীধর। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি শ্রী মুরলীধর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে তথা বিবেক দংশনের কারণে মানবতার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। ফলও পান হাতেনাতে।

কিছু সময় পরেই মধ্যরাতে তার বদলীর নির্দেশ আসে। ভক্তদের মতে, এই বদলী রুটিন মাফিক। তাই বিষয়টা বিতর্কিত নয়। কিন্তু বদলীর নির্দেশের ভাষা মোটেও তেমন কথা বলছে না।

আরও পড়ুনঃ দিল্লি কমিশনার পদে রদবদল, নতুন কমিশনার হলেন এসএন শ্রীবাস্তব

তাছাড়া সেই পুরানো প্রবাদ অর্থাৎ ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না’ও এক্ষেত্রে পদদলিত হয়েছে। হাকিমও নড়েছে হুকুমও নড়েছে। মহান ভক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মুরলীধরের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ বা জল ঢালা হয়েছে। অতএব পুনঃ মুষিক ভবঃ।

ভক্তদের শাসনে দেশ যাক উচ্ছন্নে। শাসকের হাতে পড়ে আজকের গণতন্ত্র প্রসব করুক শতশত মৃত সন্তান। তাতে কিইবা যায় আসে। একদা বিখ্যাত সভ্যতার নামে অধর্মের দর্শন যদি সীমাবদ্ধ হয়, অন্ধকারে ঢেকে দেয় আকাশ অথবা জন্ম দেয় অসংখ্য মৃত্যুপুরীর, তবুও এবং অপ্রয়োজনীয় হলেও লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তান।

।।এই প্রতিবেদনের সমস্ত দায় প্রতিবেদকের। এই বক্তব্যের জন্য #TheQuiry কোনোভাবেই দায়ী না।।

সম্পর্কিত পোস্ট