‘ওনলি বার্নিং, নো আর্নিং’-কোথা থেকে আমদানি হবে অনুদানের টাকা? প্রশ্ন বিরোধীদের

সহেলী চক্রবর্তী

সামনেই দুর্গাপুজো। ২৪ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো উদ্যোক্তা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের পুজোর পরিস্থিতি অন্যান্য বারের তুলনায় যে একেবারে আলাদা তা কারোর অজানা নয়।

দুর্গাপুজোয় কী কী বিধিনিষেধ কোভিড মোকাবিলায় আরোপ করা হবে তা নিয়েই আলোচনা হয়। সেসব ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এদিন খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রায় ৩৭ হাজার সরকার স্বীকৃত পুজোগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

একইসঙ্গে পুজোর বিদ্যুৎ বিলে ৫০ শতাংশ ছাড়; পুরসভা ও পঞ্চায়েতের কর সম্পূর্ণ মকুবের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এসব দেখেশুনে আমজনতা বলছে ‘বাজলো পুজোর ঘণ্টা’র মতই একটা কথাই আপাতত মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ‘বাজলো ভোটের ঘন্টা’।

প্রসঙ্গত, ক্লাবগুলোকে নিয়ে রাজনীতি এই বাংলায় প্রথম নয়। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্লাবগুলোকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ভাবে অনুদান দিয়েছেন। যা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী সেসব বিষয়ে কর্ণপাত করেননি।

করোনা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। কখনো তথ্য লুকোনো , কখনো চিকিৎসায় গাফিলতি, কখনো আবার চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম কেনা নিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান থেকে বিরোধীদের নিশানায় পড়তে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।

এবার করোনা পরিস্থিতিকে উল্লেখ করেই পুরোহিত এবং ইমামদের নিয়ে বেশকিছু ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই ঘোষণা ভোটের মাস খানেক আগে হওয়ায় সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি বিরোধীরাও বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।

পুজো অনুদান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত কে মন থেকে সমর্থন করতে পারেননি দলেরই একাংশ। তবে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধিতাও তারা করেননি।

নবান্ন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র পুজো উদ্যোক্তাদের আর্থিক অনুদান বাবদ ১৮৫ কোটি টাকার মত বরাদ্দ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। গত বছরের তুলনায় এবছর পুজোয় সরকারি অনুদান ও বিদ্যুত বিলে ছাড় দুটো অঙ্কই দ্বিগুণ করা হয়েছে। দান খয়রাতি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে বিভিন্ন মহলে।

প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী করোনা মোকাবিলার প্রথম দিন থেকে বারবার কেন্দ্রের অর্থনৈতিক অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন রাজ্য বাসির সামনে। তাহলে এখন এই টাকা কথা থেকে আসছে ?

দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সাংবাদিক সম্মেলনে তার ভাঁড়ার শুন্য। ওনলি বার্নিং নো আর্নিং। তাহলে এখন আর্থিক অনুদান কিভাবে দেবেন?

তৃতীয়ত, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে টালবাহানা অনেক দিন ধরে চলছে। সেখানেও অজুহাত উঠে এসেছে ভাড়ার শূন্যের। তাহলে পুজোর আগে অনুদানের ভাড়ার টা কোথা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জোগাড় করলেন ?

চতুর্থত, পুজো অনুদান ছাড়াও, পুরোহিত ও ইমামদের আর্থিক সহায়তার কথা আগেই ঘোষণা করেছেন তিনি । এবার আশা কর্মী, সিভিক ভলেন্টিয়ার, হকারদের জন্যেও আর্থিক ভাতা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করলেন তিনি। এই টাকা কোথা থেকে আমদানি করবেন তিনি ?

পঞ্চমত,  করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি তে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচাতে ফিরে এলেও পেট বাঁচাতে এখন তারা বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজের নিজের জায়গায়। লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক যুবতী চাকরি না পেয়ে এদিক ওদিক ঘুরছেন পায়ের শুকতলা খুইয়ে।  জীবিকা সেবকরা ৪২মাস বেতনহিন। তাদের প্রতি কী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কোনো দায়িত্ব নেই ?

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-struggle-for-the-protection-of-the-extended-pen-in-the-21st-century/

প্রসঙ্গত, করোনা এবং আম্ফান পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার রীতিমতো হিমশিম খেয়ে গিয়েছে। বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করলেও সেখানেও দুর্নীতির মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিরোধীরা বলছেন, অসহায় মানুষদের প্রাপ্য রেশনে নিজেদের উদরপূর্তি করেছেন শাসকদলের নেতারা। যতই মুখ্যমন্ত্রী উদাত্ত কণ্ঠে বলুন অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না, তবে আদতে বাস্তবে কি হয়েছে সেটা সকলেরই জানা।

করোনা রেশ কাটতে না কাটতেই আম্ফান ঝড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও যেন উত্তাল হয়ে ওঠে। ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সেখানেও কিন্তু স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠে এসেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ আদতে কতটা সত্য তারও কিন্তু প্রমাণ পাওয়া গেছে হাতেনাতে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যে সমস্ত নেতারা কাটমানি সহ আমফানের ক্ষতিপূরণ নিজেদের পকেটে ভরে ছিলেন তারা কিন্তু তা ফিরিয়ে দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন।

এরপর একের পর এক শাসক দলের নেতাকর্মীদের শোকজ করার ঘটনাও উঠে আসে। তবে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে যেকোন মূল্যে উঠেপড়ে লেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসকদের নেতা কর্মীরা।

নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরই তাকে একহাত নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। তাঁর কথায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুরোটাই নির্বাচনকে মাথায় রেখে ঘোষণা করেছেন। দুর্গাপূজায় অর্থ দিয়ে বিনাশকালকে আটকানোর চেষ্টা করছে এই সরকার। মানুষ জানে নির্বাচন চলে গেলে আবার এই সরকার নিজের মূর্তি প্রকাশ করবে ।

অতীতের অভিজ্ঞতা অন্তত সে কথাই বলছে । তিনি আরো বলেন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতি পদে পদে বিজেপির ভয় কাজ করছে। তিনি কাটা হয়ে আছেন বিজেপির ভয়ে। একই সুর শোনা গিয়েছে সুজন চক্রবর্তী ও অধীর চৌধুরীর গলাতেও।

প্রসঙ্গত বিধানসভা নির্বাচন আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। সম্মান রক্ষার লড়াই এর পাশাপাশি বঙ্গ সাম্রাজ্যে অধিকার কায়েমের লড়াইও সেয়ানে সেয়ানে চালিয়ে যাচ্ছে সবপক্ষ। নির্বাচনের আগে যে কোনো রাজনৈতিক দলই মুহুর্মুহ প্রতিশ্রুতি এবং অঙ্গীকারে ভরিয়ে দেয় আমজনতার মনকে এটাই চিরাচরিত রীতি।

কিন্তু সেই স্তোক বাক্য আদতে কতটা বাস্তবে পূরণ করা সম্ভব হয় ভুক্তোগীরা মানুষ তা ভালো করেই জানেন। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের নির্বাচন বেশ কঠিন। কারণ মানুষ সচেতন।

২০২১ সালে কার হাতে পশ্চিমবঙ্গের চাবিকাঠি থাকবে এখন থেকে বলা বেশ কঠিন। ততদিন রাজনৈতিদলগুলির প্রতিশ্রুতি এবং তর্যাতেই মনোনিবেশ করতে হবে রাজ্যবাসীকে।

সম্পর্কিত পোস্ট