এতদিন তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন! বাম জমানার নিয়োগ নিয়ে মমতার হুঁশিয়ারিকে কটাক্ষ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাম জমানায় তৈরি হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। তার কাজ ছিল রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করা। পরবর্তীকালে এই স্কুলগুলির অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব‌ও এসএসসির কাঁধে তুলে দেওয়া হয়। সেই এসএসসির গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি ও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল বাংলা। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের তৈরি করে দেওয়া বিচারবিভাগীয় কমিশনের রিপোর্টে দুর্নীতি হওয়ার বিষয়টি একরকম পরিষ্কার।

কোনরকম নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে যোগ্যদের পিছনে ঠেলে অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছে এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এখন সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তারা খতিয়ে দেখছে এই নিয়োগগুলির পিছনে কোন‌ও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কিনা।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামে দলীয় সমাবেশের মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, বাম আমলে চিরকুটে লিখে নিয়োগ করা হতো। তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। এতদিন ভদ্রতা করে কিছু বলিনি। এবার সব খুঁড়ে বার করব! মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য তৃণমূলের ভালো করার বদলে যেন তাদের আরও বিপদে ফেলে দিয়েছে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে কটাক্ষের শিকার হয়েছেন খোদ মমতা!

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান মিম, কটাক্ষ ভেসে আসতে থাকে তৃণমূল নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে। প্রশ্ন ওঠে বাম জমানায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য জানা সত্ত্বেও তা নিয়ে ব্যবস্থা কেন নেননি। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বলে বসেন, এটা সরাসরি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া।

তবে বাম শিবিরের পক্ষ থেকে তথ্য তুলে ধরে পরিষ্কার বলা হয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র সহ একাধিক বিষয়ে এগারটি কমিশনের গঠন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিশনের পিছনে গত ১০ বছরে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।

SSC কেলেঙ্কারি থেকে দূরত্ব রাখতে চেয়ে লাভ হয়নি, শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা তৃণমূলের

কিন্তু একটিও কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে পারেনি তৃণমূল সরকার। এই তথ্য তুলে ধরে বামেদের দাবি, মমতা যে ভদ্রতার কথা বলেছেন তা মোটেও ঠিক নয়। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি‌ই করেছেন। কিন্তু বাম নেতারা কোন‌ও দুর্নীতি করেনি বলেই কমিশন কিছু প্রমাণ করতে পারেনি। তাই এই নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট চেপে গিয়েছে রাজ্য সরকার।

কেউ কেউ তো আরও একধাপ এগিয়ে বলে বসেন, তৃণমূল জামানায় তৈরি কমিশনগুলির হালচাল জানতে নতুন করে একটি কমিশন গঠন করা হোক!

বিষয় হচ্ছে বাম জামানাতে শিক্ষক নিয়োগ সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তা কখনোই এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। অন্ততপক্ষে আদালত কখনও এই বিষয়ে তেমন একটা হস্তক্ষেপ করেনি। বাম জমানায় দুর্নীতির তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তাঁর সরকারের শিক্ষা দফতরের বেহাল দশা ও ঘুঘুর বাসা প্রকাশ্যে এসে পরাতেই কী অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন মমতা? তাই কী বাম জামানার কথা তুলে বিরোধী শিবিরকে চাপে ফেলার চেষ্টা করলেন? উল্লেখ্য এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি পথে দেখা যাচ্ছে বামেদের‌ই।

সোশ্যাল মিডিয়া, আড্ডার ঠেকগুলোয় বামেদের সঙ্গে তৃণমূল আমলের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তুলনা শুরু হয়েছে। ফলে সরকারের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট