EXCLUSIVE: কানহাইয়ার জনসভা দেখে ভয় পাচ্ছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলঃ বিশ্বজিৎ কুমার
সম্প্রতি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা এনেছে কেজরিওয়াল সরকার। যা নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মেরুদণ্ডহীন বলে কটাক্ষ করেছেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। দ্য কোয়ারিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কি বললেন বিহার এআইএসএফের প্রাক্তন মহাসচিব বিশ্বজিৎ কুমার।
আমরা দেখলাম কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে দিল্লি সরকার দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনল। হঠাৎ করে এই দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনার বিষয়টি আশ্চর্যজনক নয়?
বিশ্বজিৎ কুমারঃ এটা খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা। ৪ বছর পর দিল্লির সরকার ডিফেন্স চার্জেসকে পারমিট দিল। আপনি যদি দেখেন একদিকে দিল্লিতে দাঙ্গার ঘটনা, তারপর কানহাইয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা। আবার তাঁর বিরদ্ধে ঠিক তখনই মামলা আনা হল, যখন গোটা বিহারে কানহাইয়া কুমার একের পর এক বড় বড় র্যা লি করছে। যেখানে প্রচুর মানুষ এসে ভিড় করছে। পাটনার গান্ধী ময়দানে কানহাইয়ার একটি বড় র্যাখলির ঠিক পরেই এই ঘটনা ঘটে।
এটা একেবারে স্পষ্ট যে আরএসএস এবং বিজেপির চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একজন ছাত্র নেতা যখন জনগণের স্বার্থে লড়াই করছে, তখনই তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও আমরা সকলেই এই ঘটনার পর পিছু হটতে নারাজ। বরং এরপর যা ঘটবে তার সম্মুখীন হওয়ার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। আর আমাদের সকলের বিচার ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। সত্যের জয় ঠিক হবেই। আমরা এটা বিশ্বাস করি।
কানহাইয়া তো নিজেই আর্জি জানিয়েছে যাতে মামলা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত সম্পন্ন হয়। এখন দেখার কি হয়, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। তিনি চাপের মধ্যে পড়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা একেবারে বেঠিক।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সাম্প্রতিক দিল্লির ঘটনার পর বিজেপি এবং আপের সুমধুর সম্পর্কের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপনি কি তাই মনে করেন?
বিশ্বজিৎ কুমারঃ অনেকটাই। কারণ আমি আগেও বলেছি, যখন দিল্লিতে হিংসার ঘটনা ঘটছে ঠিক তখনই দিল্লি সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দিচ্ছে তাঁরা একজোট হয়েছে। আর নয়তো তাঁদের কাছে নির্বাচনী প্রচারের জন্য আর কোনও ইস্যু নেই। তাই এই ইস্যুটিকেই হাতিয়ার করতে চাইছে তাঁরা।
পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ টুইটারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কত টকার বিনিময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? এবিষয়ে আপনার কি মত?
বিশ্বজিৎ কুমারঃ এটা একপ্রকার সম্ভাবনা রয়েছে। হয় উনি নিজেকে বিক্রি করেছেন, তা নাহলে দিল্লির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের মুঠোয় চলে এসেছেন। যার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যদিও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে কেজরিওয়াল সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
কিছুদিন আগে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে কানহাইয়া কুমার নিজে বলেছেন, বিহারের নির্বাচন দোরগোড়ায় চলে এসেছে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপনিও কি তাই মনে করেন?
বিশ্বজিৎ কুমারঃ একদমই তাই। সম্প্রতি যে জনগণ যাত্রা হয়েছে, সেই যাত্রায় মানুষের ভিড় বিহার তথা দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে যত বড় সভা কানহাইয়া করছে। এর আগে এত বড় জনসভা কোনও নেতা করেনি। এর জন্য দেশের নেতারা চিন্তায় পড়ে গেছেন । যদি বিধানসভা নির্বাচন পার করতে হয়, তাহলে কোনও প্রকারে কানহাইয়া কুমারকে আটকে রাখা দরকার। এই গোটা বিষয়টির মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে।
দিল্লির ঘটনার পর দিল্লি হাইকোর্টের তরফে জানানো হল যারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হোক। কিন্তু রাতারাতি বিচারপতির বদল হয়ে গেল। কিভাবে দেখছেন গোটা বিষয়টাকে?
বিশ্বজিৎ কুমারঃ এই মুহূর্তে দেশ একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর এই কঠিন পরিস্থিতি ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে। স্বাধীনতার সময় যে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, সেই একই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে। দেশের রাজধানীতে যা ঘটেছে, তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এখন যা চলছে তার বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। চুপ করে নয়, প্রতিবাদে সরব হতে হবে।
আমরা শুরু থেকেই দেখছি সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন। কিন্তু তিনিই আবার ওড়িশ্যাতে গিয়ে বৈঠক করছেন। এমনকি কলকাতায় সভার জন্য অমিত শাহ অনুমতি পেয়ে গেলেন…
বিশ্বজিৎ কুমারঃ দেখুন আমি ওড়িশ্যার ব্যাপারে বিশেষভাবে কিছু জানিনা। তবে শুরু থেকেই দেখেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর এর বিরোধিতা করে আসছেন। যদি এখন সেই ঘটনার বদল হয় তাহলে বলব সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ধরনের নেতারা আসলে পুঁজিবাদী নেতা। তাঁরা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রাখেন। হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এজন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর জন্য জনতাকে সজাগ হতে হবে।
বাংলা থেকে রাজ্যসভায় সাংসদ হিসাবে সীতারাম ইয়েচুরি এবং কানহাইয়া কুমারের নাম উঠে আসছে…
বিশ্বজিৎ কুমারঃ আমরা এবিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না। তবে আমার মনে হয় বামপন্থীরা সংসদে না হলেও রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আর এখন তো তাই হচ্ছে। মানুষের পাশে থেকে লড়াই আমাদের জারি থাকবে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভজিৎ চক্রবর্তী, দ্য কোয়ারি
(বক্তার মত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত)