পাহাড়পুরের চতুর্ভূজা মা চণ্ডী… ৩৫০ বছরের পুজোকে ঘিরে রয়েছে অবাক করা ইতিহাস
মহাসপ্তমীর ঊষালগ্নে সিংহ বাহিনী পৌঁছলেন পাহাড়পুরের চণ্ডী মন্দিরে। রাজকীয় শোভাযাত্রার আয়োজনে দেবী চণ্ডী চললেন। সঙ্গে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারন। ঢাকের বাদ্যি। মুখরিত গোটা শহর। এই রীতির অনুসরণ আজকের নয়।
বিগত ৩০০ বছরের পুরনো রীতি অনুযায়ী আজও চাঁচলে সিংহ বাহিনীকে সপ্তমীর ঊষালগ্নে নিয়ে যাওয়া হয় চাঁচলের পাহাড়পুরের চণ্ডী মন্দিরে। এরপরেই শুরু হয় সমগ্র চাঁচলে পুজো।
এই প্রথা ৩০০বছর আগে চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরী প্রথম প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে আজও রাজার প্রাচীন প্রথা মেনে চাঁচলের রাজ ঠাকুর বাড়ি থেকে সপ্তমীর সকালে মহা শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে দেবী চণ্ডীর কোষ্ঠী পাথরের মূর্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় চাঁচলের পাহাড়পুর চণ্ডী মন্দিরে।
তবে এই প্রথার পিছনে রয়েছে রাজ পরিবারের কাহিনী। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ। সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি।
কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন। তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী। রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভূজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে। রাজমাতাকে দিয়ে সেই মূর্তি নদী থেকে তুলে রাজাকে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো ।
আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা। স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে রাজমাতা তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি। সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।
চাঁচল রাজ ট্রাস্টিবোর্ডের সুপারভাইজার দেবাজয় ভট্টাচার্য। এই পুজোর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর হতে চলল। প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে পাহাড়পুর দুর্গা দালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভূজা মা চণ্ডীকে।
দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান। সপ্তমীর সকালে মহা ধুমধাম সহকারে ঢাকঢোল বাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো মা সিংহবাহিনীকে। সেখানে তিনদিন ধরে চলবে তার পুজো। মঙ্গলবার সপ্তমীর ঊষালগ্নে করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোভাযাত্রা সহকারে দেবী চণ্ডীকে নিয়ে যাওয়া হয় দু কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পাহাড়পুর চণ্ডীমণ্ডপে।
তবে করোনার কারণে নিয়মে কিছুটা বদল আনা হয়েছে। মন্দিরের মূল ফটক বাসের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। গর্ভগৃহে ঢোকা নিষেধ। ঠাকুরদালানের বাইরে থেকেই মাকে পুজো দিতে পারবে। পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধকারী মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের দিকে বিশ্বাস গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।