বেদনাগ্রস্থ শিল্পী-সাহিত্যিক মহল, শঙ্খ ঘোষের চলে যাওয়া মানতে পারছেন না বিদ্বজনেরা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সকলেই শোকগ্রস্ত ৷ তবু বাঙালি শিল্প ও সাহিত্য সমাজ বলছে, এ হয়ত চলে যাওয়া নয়, চিরকালের হয়ে থেকে যাওয়া ৷ কবির মৃত্যুই যেহেতু মহাকালের পরীক্ষায় কবির জন্মদিন ৷ কিন্তু 89 বছর বয়সে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাবরের প্রার্থনা, লাইনেই ছিলাম বাবার কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে বাঙালি সারস্বত সমাজে বিষাদের ছায়াও ঘোর বাস্তব ৷
শোকগ্রস্ত কবি সুবোধ সরকার ৷ তাঁর মতে শঙ্খ ঘোষ একজন ভারতীয় কবি ৷ সুবোধ সরকারের বলেন, “শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণ বাস্তবিক নক্ষত্র পতন ৷ বাংলা সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ আজ যে কারণে বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমরা গর্বিত ৷ ”
সুবোধ বলেন, “পাশাপাশি একথাও বলব, বাংলা ভাষাকে চেনা ভূগোলের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি ৷ আমি দেখেছি ৷ বিশেষ করে যখন থেকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি সূত্রে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার কবিদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, তখন দেখেছি তাঁরাও শঙ্খ ঘোষকে কতখানি শ্রদ্ধা করেন ৷ অর্থাৎ, শঙ্খ ঘোষ কেবলমাত্র বাঙালি কবিই নন, একজন ভারতীয় কবি ৷ শেষে বলব, একদিন সকলকে যেতে হয় ৷ বয়স হয়েছিল শঙ্খ ঘোষের ৷ ফলে আমার কাছে এই যাওয়া যাওয়া নয়, পাঠকের কাছে চিরকালের হয়ে থেকে যাওয়া ৷”
বস্তুত শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের পাঁচ মহারথী কবি শক্তি-সুনীল-শঙ্খ-উৎপল-বিনয়-এর শেষজনেরও বিদায় ঘোষণা হল ৷ সংক্ষেপে যেন সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন বাংলা থিয়েটার ও সিনেমার মুখ তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷ বললেন, “একটা যুগের অবসান হল ৷ আমি বেদনাহত ৷”
কেবল তাঁর সাহিত্য নয়, শঙ্খ ঘোষ জীবন অদর্শও দৃষ্টান্ত ৷ মনে করেন আজকের বাংলা কথা সাহিত্যের প্রতিনিধি প্রচেত গুপ্ত ৷ বললেন, “শঙ্খ ঘোষ একজন বিরল প্রতিভার মানুষ ছিলেন ৷ বাংলা সাহিত্য যতদিন থাকবে, ততদিন শঙ্খ ঘোষ থাকবেন ৷ তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা থাকবে ৷ কিন্তু, এর বাইরেও উনি আরও এক অসামান্য উদাহরণ ৷ তা হল তাঁর ছোট বড় সকলকে সমানভাবে দেখার বিরল ক্ষমতা ৷
বিখ্যাত থেকে অখ্যাত লেখক, প্রবীণ থেকে নবীন কবি, নামী থেকে অনামা ছোট প্রকাশক, বড় পত্রিকা থেকে ছোট পত্রিকা, সকলকে একভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ ৷ এ এক অসামান্য দৃষ্টান্ত ৷ প্রচেত বলেন, “বড় প্রকাশককে যেমন গুরুত্বপূর্ণ বই দিয়েছেন, ছোট প্রকাশককেও গুরুত্বপূর্ণ বইটিই দিয়েছেন ৷ এই কারণে লিটল ম্যাগাজিনে শঙ্খ ঘোষের কত কত অসামান্য কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ৷ ব্যক্তিগতভাবে তাঁর স্নেহ পেয়েছি ৷ সে কথা একান্ত ব্যক্তিগত ৷
কিন্তু, সাহিত্য ছাড়াও তিনি যা রেখে গেলেন, তা হল এই- এক আশ্চর্য ভেদাভেদহীনতা ৷ এতখানি উচ্চতায় ওঠার পরেও, সমস্ত পুরস্কার পাওয়ার পরেও… ৷ সবচেয়ে বড় কথা, একাজ কেবল বাইরে থেকে করতেন না তিনি, অন্তর থেকে বিশ্বাস করতেন ৷ ”
“তাঁর কীর্তির চেয়েও মহৎ তিনি ৷” বলছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি রণজিৎ দাশ ৷ রণজিতের কথায়, “শুধু সাহিত্যের নয়, বাঙালি জাতিসত্তার এবং তার বিশ্বজনীন মানবতার এক অটল প্রতিভূ ছিলেন শঙ্খ ঘোষ ৷ সঙ্গতভাবেই তাঁকে মনে করা হত বাঙালি জাতির বিবেক৷
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে শুধু কলকাতায় বাড়ছে হাজার বেড
তাঁর কীর্তির চেয়েও মহৎ ছিলেন তিনি ৷ তাঁর প্রতিটি কাজে তিনি আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন ৷ এক উদার মানবিক শুভবোধের জাগ্রত আদর্শে ৷ আজ এই তেজস্বী অভিভাবককে আমরা হারালাম ৷ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন আমার এক পরম স্নেহময় গুরুজন ৷ সেই শূন্যতা আর আমার জীবনে পূর্ণ হওয়ার নয়৷
এই দুর্দিনে বাঙালি জাতি সত্তার মর্যাদা রক্ষার কথা স্মরণ করেই আমি তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাব৷””অসুস্থ ছিলেন, তবু তো ছিলেন”, বললেন তরুণ কবি ও কথা সাহিত্যিক বিভাস রায়চৌধুরী ৷
তাঁর কথায়, “বাঙালি সমাজ জানে শঙ্খ ঘোষ কত বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৷ এইরকম একটা সময়, আপসহীন মানুষ ছিলেন তিনি ৷ একটা চূড়ান্ত সংকটকালে, নানারকম সামাজিক রাজনৈতিক বিপন্নতার মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়েও ছিলেন তো ! তিনি ছিলেন এটুকুই এক ধরনের ভরসা যোগাত ৷ এবার সেটুকুও রইল না ৷ আপাতত এর বেশি বলতে পারছি না ৷”