প্রয়োজনে CBI হেফাজতে পার্থ, মাঝপথে গা ঢাকা পরেশের ; প্রশ্নের মুখে মমতার সততা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে যে পরিবর্তন যে শুধু ক্ষমতার হয়েছে এমন নয়। পরিবর্তন হয়েছে অনেক তাবড় রাজনীতিবিদদের পরিচয়েও। একটি দল ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই দলের অনেকেই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে নতুন দলে নাম লেখাতে শুরু করেন। এক কথায় জার্সি বদল।

তারপর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি অব্যাহত থেকে যায়। তেমনই এক নেতা পরেশ অধিকারী। বাম জমানায় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ অধিকারী মেখলিগঞ্জ বিধানসভা থেকে জিতেছিলেন। পেয়েছিলেন খাদ্যদপ্তরের দায়িত্ব। এরপর রাজ্যের পালা বদল ঘটে। এককালীন বামেদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা পরেশ অধিকারী কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

জার্সি বদল করে ২০১৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে পর্যুদস্ত হন গেরুয়া শিবিরের কাছে। তার পরেও চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হন পরেশ অধিকারী। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর মেয়ে অঙ্কিতার নাম তপশিলি মেধাতালিকার ওয়েটিং লিস্টের এক নম্বরে চলে আসে। শুধু তাই নয় ছয় মাসের মধ্যে কোচবিহারের একটি স্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজাম প্যালেসে আজই হাজিরার নির্দেশ

এরপরে বিরোধীরা অভিযোগ করেন প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মেয়ের নাম এসএসসির মেধাতালিকার এক নম্বরে তুলে দিয়েছিলেন পরেশ অধিকারী। এবার সেই দুর্নীতি মামলায় সিবিআই দপ্তরে হাজিরা ডাক পড়ল পরেশ অধিকারীর।

রাজনীতিতে পরেশ অধিকারী এখনও স্বমিহমায় জ্বলজ্বল করছেন। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে মেখলিগঞ্জ বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন পরেশ। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে দল। প্রসঙ্গত তিনি মঙ্গলবার কলকাতায় আসার জন্য পদাতিক  এক্সপ্রেসে উঠলেও নামেননি শিয়ালদহ। মাঝপথে কোথায় নামলেন প্রশ্ন সেখানেও।

যদিও সোজা পথে পরেশ অধিকারী যে সিবিআই দপ্তর হাজিরা দেবেন না সে কথা কম বেশি সকলেই বুঝেছিলেন। আজই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হবেন তিনি। ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরে পরেই বোঝা যাবে আগামী দিনে কি হতে চলেছে পরেশ অধিকারী এবং তাঁর মেয়ে অঙ্কিতার ভবিষ্যৎ।

উল্লেখ্য এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে একের পর এক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে একটিও শব্দ খরচ করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তদন্তের স্বচ্ছতার স্বার্থে অবিলম্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পরের অধিকারীকে সমস্ত পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। এই বিষয়টি নিয়েও কি ভাবছে তৃণমূল কংগ্রেস তা এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

বিরোধীদের কটাক্ষ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারংবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তার নিজের দলে যখন একের পর এক মন্ত্রীরা জড়িয়ে পড়ছেন দুর্নীতি কাণ্ডে তখন কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন দলনেত্রী।

বিরোধীদের কটাক্ষ যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কোন কারণে সিবিআই হেফাজতে নেয় তাহলে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম। এরপরেও কোন মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন? সে প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট