প্রশ্নবিদ্ধ পার্থ-পরেশ ফের স্বমহিমায়, তবে কী SSC কেলেঙ্কারির কোন‌ও মূল্য নেই সরকারের কাছে?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সম্প্রতি এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য। শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, এসএসসির মাধ্যমে অশিক্ষক কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল ও ডিভিশন বেঞ্চের বিভিন্ন রায়ে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই ৩৮২ জন নিয়ম ভেঙে নিয়ম নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীর বেতন বন্ধ করে দিয়েছে আদালত।

শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। নানান বিষয় এসে এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনার তীব্রতা সামান্য কমলেও তার রেশ মিলিয়ে যায়নি। বিরোধীরা আজও এই ইস্যুতে কলকাতার রাজপথের পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। এই নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। আর তাতেই প্রাথমিকভাবে বেশকিছু চমকে দেওয়া তথ্য সামনে উঠে এসেছে।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রতিটি এসএসসি কেলেঙ্কারির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ পেয়ে রাজ্যের বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজাম প্যালেসে জেরা করেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

আদালতের নির্দেশে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পত্তির হিসেব জমা পড়েছে। তার যেটুকু খবর বাইরে এসেছে তা চমকে দেওয়ার মতো। রাজ্যের এই প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির পাশাপাশি তাঁর সারমেয়র নামে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট পর্যন্ত আছে। বিদেশে থাকা তাঁর মেয়ে-জামাই প্রভূত পরিমাণ সম্পদের মালিক বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এই কেলেঙ্কারির তদন্তের সূত্র ধরে জানা গিয়েছে পরেশ অধিকারী শুধু নিজের মেয়েকে নয়, তিনি তাঁর পরিবারের মোট ৩২ জনের বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অন্তত বিরোধীদের এমনটাই অভিযোগ। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগই রাজ্যের খাদ্য দফতরের পাশাপাশি শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন পদে কর্মরত। উল্লেখ্য বাম জমানায় এই পরেশ অধিকারী দীর্ঘদিন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন।

এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচে বিরোধী এমএলএ-এমপি’দের বাধা, এ কোন ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথে বাংলা?

এই সমস্ত তথ্য দেখেই রাজ্যের এই দুই মন্ত্রীকে এসএসসি কেলেঙ্কারির নায়ক বানিয়ে দিয়েছে বিরোধীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ। এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে শাসকদল তৃণমূলকে। অনেকেই মনে করেছিলেন শেষ পর্যন্ত এই দুই মন্ত্রীর বিষয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি এই দু’জনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ‌ও দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে নিজের এলাকা মেখলিগঞ্জে ফিরে গিয়ে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে স্বমহিমায় রাজনীতি করছেন পরেশ অধিকারী। তাঁকে আবার সংবর্ধনা দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিকে প্রথম কয়েকটা দিন একটু চুপচাপ থাকলেও ফের স্বমহিমায় ফিরেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যে শিল্পে আদানিদের বিনিয়োগ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন‌ও করছেন। আবার আগের মতোই দাপটের সঙ্গে সরকার ও দলের কাজ শুরু করেছেন।

গোটা ঘটনাক্রম দেখে রীতিমতো হতবাক এসএসসি আন্দোলনকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, তবে কী এই সরকার ন্যায় বিচার দেবে না? যারা অন্যায় করল, যাদের মদতে এত বড় কেলেঙ্কারি ঘটল তাদের কোন‌ও শাস্তি হবে না? হতাশার সুরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আন্দোলনকারী আমাদের বললেন, “এ রাজ্যে ভোট‌ই সব। ন্যায়-অন্যায়ের কোন‌ও মূল্য নেই। আমরা যেহেতু সরকারকে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি না তাই আমাদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া এত বড় অন্যায়ের কোন‌ও শাস্তি হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মুখে যাই বলুক তিনি মোটেও সমব্যথী নন”!

সম্পর্কিত পোস্ট