নাগরিকত্ব ইস্যুতেও রায় দিয়েছে মানুষ

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।। 

এরপর ১৯৭১ থেকে ১৯৯১ সালে অসমে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার অন্যতম কারণ ছিল বহিরাগত বিরোধী আন্দোলন। এর মধ্যে ১৯৭২ এর ভাষা দাঙ্গা, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ অবধি খেদা আন্দোলন এবং ১৯৮৩ এর আলফা আন্দোলনের ফলে মুসলমান সংখ্যা কমতে শুরু করে। ১৯৯৮ সাল থেকে মুসলমান আধিপত্যের বিষয়টি রাজনীতির অন্দরে চলে আসে। বহিরাগত ইস্যু নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। সেখান থেকেই শুরু করে বহিরাগত ইস্যু চলে আসে এবারেও।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল অবধি অসমে বহিরাগত আন্দোলন করেন ছাত্ররা। অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নেতৃত্বে চলা এই আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ১৯৮৫ সালে অসমের সমঝোতার জন্য অসম অ্যাকর্ড তৈরি করা হয়। সেখানে বলা হয় ২৪ মার্চ ১৯৭১ এর আগে যারা ভারতে এসেছেন তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন। কারণ সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে কম সংখ্যক মানুষ এলেও বেশী সংখ্যক মানুষ তার পরেই এসেছিলেন বলে জানা যায়।

এর পর ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দেয় যারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে এসেছেন তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করা হোক। যদিও এর আগে থেকেই অসম জুড়ে জোরকদমে প্রচার করা হল প্রায় ৪ কোটি অসমের মানুষ এই তালিকার ফলে বাদ পড়তে চলেছেন। কিন্তু এনআরসি করে দেখা যায় প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম উঠেছে এই তালিকায়। যার মধ্যে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ হিন্দু বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার বিরোধিতা করে বিজেপি পরিচালিত সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, এনআরসি তালিকা খতিয়ে দেখার জন্য দাদালতের দ্বারস্থ হবেন তিনি।

একইভাবে ১৯ এর নির্বাচনের ইস্তেহারে এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে সামনে রেখেই প্রচার চালিয়ে যান বিজেপি নেতারা। যার ফলে বাংলা থেকে বিপুল সংখ্যক ভোট জিতে প্রায় ১৮ টি আসন পায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বারের সরকার। বেশীরভাগ যারা এর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মানুষ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কোনও প্রস্তাব না  মেলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন মতুয়ারা। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আশ্বাসে অক্সিজেন পায় মতুয়ারা। এরই মধ্যে নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্রের সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, রাজ্যে যারা বাস করছেন সকলেই নাগরিক। আলাদা করে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

এই মতুয়া ভোট হাশিল করতে অনেক আগে থেকেই পা এগিয়ে রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠাকুর পরিবারের বড়মা বীণাপাণি দেবীর দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করেছিলেন তিনি। ওই পরিবারের মমতাবালা ঠাকুর দীর্ঘদিন ধরে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত ছিলেন। সরকারে থাকাকালীন মতুয়াদের উন্নয়নের জন্য আলাদা করে বোর্ড গঠন করেন তিনি। নির্বাচনের আগে ঠাকুরনগরের সভায় মমতার মন্তব্য তৃণমূলের পালে হাওয়া দেয়। উত্তর ২৪ পরগণা থেকে ২ টি আসন পায় বিজেপি একটি ভাটপাড়া, অপরটি বিষ্ণুপুর। ভাঙড় আসন থেকে উল্লেখযোগ্য জয় আনে আইএসএফ।

মমতার এই বিরাট ফলের পিছনে এই নাগরিকত্বের হাওয়া কাজ করছে বলে মনে করছেন অনেকেই। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একইসঙ্গে সকলকে নাগরিকত্বের অগ্রাধিকার দিয়েই উত্তর ২৪ পরগণার ৩০ টি আসন জয়লাভ করে ঘাসফুল শিবির।

 

সম্পর্কিত পোস্ট