স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান ও নাগরিক পরিষেবা সম্পূর্ণ ভিন্ন, মানুষের জন্য জিটিএ নির্বাচন করতেই হত

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাম জমানায় সুভাষ ঘিসিংয়ের হাত ধরে পৃথক গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গোর্খা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন সেই কাউন্সিলের মাথায় বসে ছিলেন জিএন‌এল‌এফ প্রধান ঘিসিং। পরে তাঁর হাত ছেড়ে আলাদা দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তৈরি করে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন বিমল গুরুং।

বাম জামানার শেষের দিকে পাহাড়ের জন্য আরও একটু স্বায়ত্তশাসন আদায় করে নেন। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয় গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ। ষষ্ট তফসিলের অধীনে এই স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ গঠিত হয়। তবে গোর্খাল্যান্ডের সমর্থনকারীদের মধ্যেই এখন মতভেদ তৈরি হয়েছে।

একটা অংশ চাইছে ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে স্বায়ত্তশাসনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই থেকে যেতে। এদের সংখ্যাই বর্তমানে বেশি। তবে পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও মন ঘিসিংয়ের নেতৃত্বাধীন জিএনএল‌এফ পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনড়।

পাহাড়ে একটা দাবি উঠেছে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের পর স্থানীয় স্তরের নির্বাচন হোক। কিন্তু ২০১৭ সালে জিটিএর মেয়াদ ফুরানোর পর পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে সেখানে ভোট হয়নি। ফলে নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে।

এমনিতেই সাংসদ-বিধায়করা সরাসরি নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। সেটা সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েত দিয়ে থাকে। পাহাড়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও জটিল। সেখানে পুরসভা, পঞ্চায়েতের পাশাপাশি নাগরিক পরিষেবা, কর্মসংস্থান সহ নানান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে জিটিএর।

উত্তর-পূর্ব ভারতকে ঘাঁটি করে দেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতি বদলে দেওয়ার পথে অভিষেক

সশাসিত পরিষদ হওয়ায় জিটিএর নিজস্ব বাজেট আছে। তারা নিজেদের মতো করে অল্পবিস্তর কিছু কর আদায় করতে পারে। তাদের মত করে পাহাড়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়। নির্দিষ্ট প্রকল্পের অর্থের জন্য সরকারের কাছে দরবার করে টাকা আদায় ব্যাপার থাকে। বলতে গেলে পাহাড়ের উন্নয়নের মূল সংস্থা হল তারা।

এখানে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কেবলমাত্র সহযোগীর। পুরোটাই সংবিধানসম্মত ব্যাপার। তাই দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নাগরিক পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছিল।

এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অপেক্ষা করা মানে পাহাড়বাসীর বর্তমান প্রয়োজনকে উপেক্ষা করা। স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান কোন‌ও খোলামকুচি নয়। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে, তার পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকবে। এমনকি তা নিয়ে আন্দোলনও হতে পারে। বিষয়টা বেশ সময় সাপেক্ষ। তার জন্য নির্বাচন ফেলে রাখার কোন‌ও মানে হয় না।

স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য প্রশাসন পাহাড়ের নির্বাচনের পাশাপাশি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে পাহাড়ের বুকে পঞ্চায়েত নির্বাচন বোধহয় এখনই হচ্ছে না। সেটার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট