পিএম কেয়ার এখন পিএম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী: ডেরেক

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রত্যাশিতভাবেই মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-এর ভার্চুয়াল সভা থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে বিজেপি।

এদিনের বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন অমিত শাহ। সভার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক করে তার জবাব দিলেন বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, রাজ্য সভার সাংসদ দিনেশ ত্রিবেদী ও দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন।

এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত মিত্র অভিযোগ করেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিন ধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।

প্রথমত, রাজ্যকে নকল করা, দ্বিতীয়ত, মিথ্যা বলা এবং তৃতীয়ত, তথ্য গোপন করা। একেবারে তথ্য তুলে তুলে অমিত শাহ-এর অভিযোগ নস্যাত করেন তিনি।

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বিরোধীতাঃ

অমিত শাহ তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা গোটা ভারত পেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার এই প্রকল্প গ্রহণ করেনি বলে বাংলার মানুষ তার সুবিধা পাচ্ছেন না।

এই নিয়ে অমিত মিত্র বলেন,

  • ২০১৬ সালের ডিসেম্বরেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিল।
  • এতে ৭.৫ কোটি পরিবার সুবিধা পেয়েছে।
  • চিকিৎসার, শুশ্রষার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
  • ১৫১৮টি নেটওয়ার্ক হসপিটাল যুক্ত রয়েছে এই প্রকল্পে। তার আড়াই বছর পর কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের এই প্রল্পকে নকল করে চালু করেছিল আযুষ্মান ভারত।
  • তাই, বাংলায় ওই স্বাস্থবীমা প্রকল্পের নতুন করে দরকার ছিল না।

শাহের ভার্চুয়াল সভার মূল লক্ষ্য বাংলার তখত, একযোগে জবাব অভিষেক-পার্থ-অরূপের

করোনা ও আমফান পরবর্তী পরিস্থিতি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও অমিত শাহ এদিন তাঁর বক্তৃতায় বহু মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। অমিত মিত্রের অভিযোগ

  • পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্যাকেজ নিয়েও অমিত শাহ মিথ্যা বলছেন।
  • এদিন অমিত শাহ বলেছিলেন, করোনা মহামারির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের রেশন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ৭.৬ কোটি মানুষ সুবিধা পেয়েছেন।
  • অমিত মিত্রের দাবি এই সুবিধা পেয়েছেন ৬.০১ কোটি মানুষ।বাকী ৪.০৯ কোটি মানুষকে সুবিধা দিয়েছে রাজ্য সরকার
    এছাড়া জিডিপির যে ১০ শতাংশ কেন্দ্র আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা আসলে জিডিপির ০.০১ শতাংশও নয়।
  • অর্থনীতিতে তাঁদের সরকার যে দারুণ নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে দাবি করছেন, তার কোনও বাস্তবতা নেই।
  • বরং মোদি সরকারের শাসনে দেশের অর্থনীতি কোমায় চলে গিয়েছে। নাহলে বেকারত্বের পরিমাণ ৪৫ বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।
  • তাঁর অভিযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ কিছু কথা চেপেও গিয়েছেন।
  • রাজ্য সরকার যে ৪.০৯ কোটি মানুষকে গত তিন মাস ধরে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিচ্ছে, সেই কথা তিনি বলেননি।
  • তিনি বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুতের বিষয়ে দারুণ কাজ করেছে, আর রাজ্য সেক্ষেত্রে ব্যর্থ।
  • কিন্তু বাস্তব হল, ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলায় বিদ্যু‍ৎ পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্র খরচ করেছে ৫৮০০ কোটি টাকা।
  • আর রাজ্য খরচ করেছে ২৭৫০০ কোটি টাকা।
  • এছাড়া বিভিন্ন সেন্ট্রাল স্কিম, জিএসটি, খাদ্যের ভর্তুকি ইত্যাদি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য ৫৩০০০ কোটি বকেয়া রয়েছে।
  • যা দিচ্ছে না কেন্দ্র সেই কথা না তুলে অমিত শাহ শুধুই বলেছেন ১০০০ কোটি সহায়তা করেছেন ঘূর্ণিঝড় আমফানে।

শুধু অমিত মিত্র নয় এদিন অমিত শাহের সমালোচনা করেন জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনও। এদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে করা অমিত শাহের যাবতীয় আক্রমণের জবাব দেন তিনি।

তাঁর অভিযোগ,পরিযায়ী শ্রমিকদের কেন গরু-ছাগলের মত ট্রেনে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভার্চুয়াল সভায় অমিত শাহ এই প্রশ্নের জবাব দিন। কোন মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার বীমা করেছেন ? অমিত শাহ এই প্রশ্নের জবাব দিক।

তাঁর আরও অভিযোগ, আমফানের তাণ্ডবের পর কেন্দ্রের কাছ থেকে ১০০০ কোটি টাকা পেয়েছে রাজ্য কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। কেন এখনও বাকি টাকা দেয়নি কেন্দ্র?

তাঁর আরও অভিযোগ,দেশের জিডিপি-র থেকে রাজ্যের অবস্থা অনেক ভালো। অথচ সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছে বিজেপি।তাঁর কথায়, এখন সরকার আর দল একাকার হয়ে গেছে।আর তাই পিএম কেয়ারস এখন পিএম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক সভাও ডিডী ন্যাশনালে লাইভ’

করোনা ও আমফানের জোড়া সংকটের সময়কে রাজনীতির জন্য নয় বলেছেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবাদী।

তাঁর কথায়, অমিত শাহ এই ভার্চুয়াল সভা পুরোটাই রাজনীতিতে ভরা।এই সময় কেন রাজনীতির কথা বলছেন অমিত শাহ ?অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু বিজেপির জন্য নয়, দেশেরও। এখন একসঙ্গে লড়াইয়ের প্রয়োজন। তা না করে রাজনীতি করছেন তিনি।

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যদি সত্যিই চিন্তিত হতেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী যখন ১৮ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন তখন তাঁকে ফোন করতে পারতেন, জানতে পারতেন।

তিনি আরও বলেন,আমার জামা আপনার থেকেও সাদা, এটা এখন বলার সময় নয়। রাস্তায় নেমে নিজের জীবনের পরোয়া না করে কাজ করছেন মমতা। দিল্লি থেকে আপনারা ফরমান দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী সেটা কার্যকর করেছেন। আসুন এই সময়ে সবাই মিলে মানুষের জন্য কাজ করি। এটা রাজনীতি করার সময় নয়।

সম্পর্কিত পোস্ট