করোনা পর্যোলোচনায় দশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর,বকেয়া সহ একগুচ্ছ দাবি মমতার
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে ফের কেন্দ্রের কাছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া দাবি করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনও করোনা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের অর্থনৈতিক দবিদাওয়া নিয়ে সরব হন তিনি।
গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে অর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে দরবার করেছিলেন তিনি। এরপর ১৫ দিন কেটে গেলেও কেন্দ্রের তরফে কোনও হেলদোল নেই। তাই এদিন ফের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের দাবি নিয়ে সরব হলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ বার বার বলা সত্ত্বেও রাজ্যের দাবি দাওয়া পুরণ হয়। এরফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রাপ্য ৫৩ হাজার কোটি টাকা এখনও কেন্দ্র রাজ্যকে দিন না। এছাড়া জিএসটি বাবদ ৪১৩৫ কোটি টাকাও রাজ্য এখনও পায় নি। রাজ্য যদি টাকা না পায় তাহলে কোভিড পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে।
সেই সঙ্গে তিনি এটআও জানান, করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্র থেকে রাজ্য মাত্র ১২৫ কোটি টাকা পেযেছে। তবে ইতিমধ্যেই রাজ্য ২৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে রাজ্য।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানান। তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে আরও কিছু ভেন্টিলেটর রাজ্যকে দিতে হবে কেন্দ্রের। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাই কেন্দ্রের কাছে এই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি রাজ্য সরকারকে আরও নেজাল ক্যানুলা সরবারহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রয়োজনীয় গাইডলাইন কেন্দ্র অবিলম্বে প্রকাশ করুক। তা না হলে পরবর্তীতে অত্যন্ত সমস্যা হবে।
উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটের টেস্টিং নিয়ে উদ্বিগ্ন মোদি
একইসঙ্গে এই ভ্যাকসিন নিয়ে বেআইনি কাজও হতে পারে। তা রুখতে কেন্দ্রকে কড়া হাতে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের হাজারও অভাব ও প্রতিকুলতা সত্ত্বেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্য যে এগিয়ে যাচ্ছে তার তথ্য তুলেও ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্র করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজ্য ক্রমবর্ধমান জিডিপি রেট প্রধানমন্ত্রীর কলাছে তুলে ধরেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, গোটা দেশে জিডিপি রেট যেখানে ৭.২১ শতাংশ। বাংলায় সেখানে জিডিপি রেট ১৫.০ ৪ শতাংশ। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে জানান,কোভিড মোকাবিলা রাজ্য সরকার সরকার ও সরকার প্রসিত হাসপাতালগুলিতে বিনা পয়সায় কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে-যার বিমারাশির পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টাকা। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ১০০টার বেশি সেফ হোম রাজ্য সরকার তৈরি করেছে। সেখানে প্রায় ৭০০০ বেড রয়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় এমন আরও কিছু সেফ হোম তৈরির ভাবনাচিন্তা সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ শতাংশ মানুষকে বিনা পয়সায় রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯৬ জন ডাক্তারকে দিবারাত্র টেলিমেডিসিন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যাঁরা আতঙ্কিত তাঁদের সুস্থ করার জন্য চেষ্টা চলছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এফআরডিএমের সংখ্যা ৩শতংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করেছে এটা ভালো। এক্ষেত্রে এফআরডিএমের পরিমাণ যে ২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে তারমধ্যে মাত্র ০.৫ শতাংশ নিঃশর্ত করা হয়েছে। বাকি দেড় শতাংশও একবাছের নিঃশর্ত করা হোক।
পাশাপাশি, করোনা চিকিৎসার জন্য সেফ হোম, কোয়ারেন্টিন, অনলাইন সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং, টেলি মেডিসিন, কোভিড ওয়ারিয়রস ক্লাব-সহ রাজ্য যেসব পদক্ষেপগুলি করেছে তার সবকটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,
- একসময় আমরা ডেথ অডিট শুরু করেছিলাম।
- এখন দেখা যাচ্ছে করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে কো-মরবিডিটিও একটি বড় বিষয়।
- রাজ্যের ৮৯ শতাংশ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে কো-মরবিটিতে।
- মাইল্ড ও উপসর্গহীন রোগীদেরও খুঁটিয়ে নজর রাখা হচ্ছে।
- আমরা কোভিড ওয়ারিয়র ক্লাব তৈরি করেছি।
- প্রতিটি জেলায় ওই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ১৫০০।
- এরা কোভিডমুক্ত হয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোজ কোভিড হাসপাতালে রোগী দেখছেন।
- রাজ্যের আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ২.৫ কোটি ঘরে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছেন।
- সিরিয়াস রেসপিরেটরি ইলনেস আছে এমন ২.৫ লাখ মানুষকে সনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।
- রাজ্যে সেল্ফ হেলফ গ্রুপের ১ কোটি সদস্যকে করোনা সচেতনতায় কাজে লাগানো হয়েছে।