Poila Baisakh 2022 : বাংলা নববর্ষ – বিভেদহীন মিলনের একটি দিন

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  Poila Baisakh 2022 বাঙালির নববর্ষ ( Bengali New Year 2022 ) তাদের জন্য এক অনন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জির উৎপত্তির কারণ ধর্ম। তবে বাংলা নববর্ষের সঙ্গে ধর্মের কোন যোগ নেই। মূলত খাজনা এবং কৃষিকাজ ঘটিত ব্যবস্থাকে ঘিরে এই উৎসবের প্রচলন।

অবশ্য পরবর্তীকালে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যবসা-বাণিজ্যে দেনা পাওনা। ক্রমশ বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখ ( Poila Baisakh 2022  ) হয়ে ওঠে একটি সাংস্কৃতিক আনন্দ উৎসব। তাই বৈশাখ মাস এলেই  বাঙালির মনে জেগে ওঠে উচ্ছাস। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে বাংলা নববর্ষ সাধারণত ১৪ বা ১৫ এপ্রিল পড়ে। এই বছর বাংলার সাল ১৪২৯,তারিখ ১৫ই এপ্রিল।

সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকা শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকার এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। সৌর বছরের প্রথমদিন বঙ্গ,কেরল, মনিপুর, আসাম, ওড়িশা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত।

International Mother Language Day : ভাষা দিবসের দিন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির আত্মানুসন্ধান!

সম্রাট আকবর প্রাচীন বর্ষপঞ্জিকার সংস্কার আনার আদেশ দেন। তার আদেশ অনুযায়ী সেই সময়কার বাংলার বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেউল্লাহ সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা বর্ষের নিয়ম নির্মাণ করেন।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই বা ১২ ই মার্চ থেকে বাংলার সন গণনা করা শুরু হয়। তবে এই গণনা কার্যকারী হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের(৫ই নভেম্বর,১৫৫৬) সময় থেকে।

Poila Baisakh 2022

প্রথমে বাংলা সনের নাম ছিল ফসলি সন পরে বাংলা বর্ষ নামে তার পরিচয় ঘটে। এখন শুধু পয়লা বৈশাখ ( Poila Baisakh 2022 ) নয়, গোটা বৈশাখ মাস বাঙ্গালীদের প্রাণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বৈশাখ ঘিরে বাঙালি বরাবরই আবেগপ্রবণ।

এই আবেগ অর্থবহ হওয়ার কারণহ হল সমস্ত উৎসাহ দেশীয় সংস্কৃতির মিলন এই একই মাসে। কলকাতায় এই উৎসব চৈত্র সেল নামে পরিচিত। এছাড়া পয়লা বৈশাখ ( Poila Baisakh 2022 ) এলেই বাঙালি হালখাতা নামে ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন করে সব শুরু করে।

যেহেতু কোন জাতিকে কিংবা ধর্ম ভেদ নেই এবং এই উত্তর দিচ্ছ মাটি ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাই দেশের সব প্রান্তের বাঙ্গালীদের মনকে আলোড়িত করে পয়লা বৈশাখ। এছাড়া বাঙালির গর্ব রবীন্দ্রনাথ বৈশাখ নিয়ে লিখেছিলেন ও সুর দিয়েছিলেন,”এসো হে বৈশাখ”।

সারাবিশ্বে যেখানে ধর্ম নিয়ে এত মাতামাতি সেখানে পয়লা বৈশাখ ( Poila Baisakh 2022 ) বিভেদবিহীন সমাজ গঠনের ডাক দেয়। বৈশাখে তাই  সার্বজনীন উৎসব এ দেশের প্রতিটি মানুষ নানাভাবে নতুন ঐতিহ্যের ভাবনায় সমৃদ্ধ হন। পয়লা বৈশাখ উৎসব মূলত পালন করা হতো গ্রামাঞ্চলে। নিত্য সঙ্গীত খেলাধুলা, গ্রামীণ মেলা ছিল এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ।

ক্রমশ তার শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।  স্কুল বা কলেজ পড়ুয়ারা কিংবা চাকুরীরত মানুষের জীবনে ও নতুন আহ্বান নিয়ে আসে পয়লা বৈশাখ ( Poila Baisakh 2022 )। ঐদিন বাঙালি শিশু এবং নারীরা নানা রঙের পোশাকের সাজে সেজে ওঠে। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ভরে ওঠে কবি,সাহিত্যিক, শিল্পীদের  মাধ্যমে সৃষ্ট  বিভিন্ন গান,কবিতা,লেখায়।

পয়লা বৈশাখ ( Poila Baisakh 2022 ) এলে মানুষের মনে পড়ে গ্রামে হওয়া চড়ক সংক্রান্তির মেলা, শিবের গাজন কিংবা নীল পুজো। চৈত্রসংক্রান্তির বিকেলে বিভিন্ন গ্রামে বসত মেলা। মেলায় পাওয়া যেত চুরি, টিপ,জিলিপি, সিঙ্গারা,খাজা,গজা,বাসনপত্র এছাড়া নাগরদোলার ভয় মানুষের মনে এখনও বোধহয় রয়ে গেছে। পয়লা বৈশাখ ঘিরে ছিল মিষ্টি মুখের হাসি, বিভিন্ন জামাকাপড়ের বায়না এবং ভুরিভোজ।

এখনও পয়লা বৈশাখ এলেই বিভিন্ন বইয়ের দোকানের সামনে দেখা যায় কচি আম পাতা, মঙ্গলঘট কলাগাছ। কিংবা গণেশের ছবিতে একটি মালা। বইয়ের গন্ধে ঘিরে থাকে গোটা দিন। তবে উৎসবে জৌলুস কিছুটা ফিকে হয়ে পড়েছে ইদানিং। হয়তো দোকানে এখন মিষ্টির বাক্স বিতরণ হয়না বা কম্পিউটার,খাতায় সিঁদুরের টিপ দিতে দেখা যায়না।

তবে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আড্ডার সঙ্গে সফট ড্রিংকস এবং ভুরিভোজ সারাদিন ধরে চলতে থাকে। রাজনৈতিক বা সামাজিক শুধু নয় বিশেষত করোনা পরিস্থিতি পর মানুষের মনে এক প্রকার বিভাজন দেখা দিয়েছে, ক্রমশ আমরা একটা দ্বীপ হয়ে উঠছি। এইসময় বিভেদহীন উৎসবের মাধ্যমে মানুষের মনের মিলন এক নতুন আশার আলো ফুটিয়ে তোলে।

সম্পর্কিত পোস্ট