West-Bengal assembly: কুংফু-ক্যারাটের প্যাঁচ, বিধানসভার ভিতর বিধায়ক ঠাঙানোর ঐতিহ্য ধরে রাখল বাংলা!

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: আবার মুখ পুড়ল বাংলার (West Bengal)। বামেরা যখন শ্রমিক ও কৃষকদের একাধিক দাবি-দাওয়া নিয়ে ভারত বনধ (All India Strike) সফল করতে রাস্তায় নেমেছে, তখন রাজ্য বিধানসভায় দেখা গেল কুংফু-ক্যারাটে প্যাঁচ, কুস্তির মাত। ঘটনার সময় যদি উপস্থিত থাকতেন তবে নির্ঘাত মনে হতো বিকেলে পাড়ার মাঠের খেউড় দেখছেন! সোমবার সকাল সকাল রাজ্য বিধানসভায় শাসক-বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে পরিবেশটা ঠিক এমনই হয়ে উঠেছিল! যদিও বাংলার বিধানসভায় বিরোধীদের ধরে পেটানোর ঘটনা নতুন নয়।

 

JU in fire : একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রথম তৃণমূল সরকারের আমলে সুদীপ্ত সেনের সারদা চিটফান্ড কোম্পানির পতন দিয়ে শুরু। তারপর একে একে রোজভ্যালি, টাওয়ার, আইকোর, এনভিডি সহ প্রায় কয়েক শো চিটফান্ড সংস্থার লোক ঠকানোর ব্যবসা লাটে ওঠে। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ এই সংস্থাগুলোতে টাকা রেখে প্রতারিত হন। পঞ্চাশের বেশি রাজ্যবাসী সর্বস্বান্ত হওয়ার ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে সেই সময় আত্মঘাতী হয়েছিলেন। এই ভয়াবহ আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় আলোচনার দাবি জানায় তৎকালীন বিরোধী বামফ্রন্ট। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র আলোচনার দাবিতে অনড় ছিলেন।

সেদিন কিছুতেই বিরোধীদের বাগে আনতে না পেরে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে তৃণমূল বিধায়করা আক্রমণ করেন বলে বামেদের অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ইতিহাসে সে ছিল এক কালো দিন। প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রমকে সেদিন ব্যাপক হেনস্থা করা হয়, শাড়ি ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়কে মেরে মাথার খুলি ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অর্জুন সিংদের বিরুদ্ধে। ব্যারাকপুরের এই বাহুবলী বিজেপি সাংসদ তখন তৃণমূলের ছিলেন।

গুরুতর আহত ৪-৫ জন বাম বিধায়ককে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়নি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হয়। উল্লেখ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় তৃণমূল বিধায়করা বিধানসভায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছিলেন। বিভিন্ন শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহাসিক আসবাবপত্র অর্জুন সিং, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অশোক দেব, ফিরহাদ হাকিমরা ভেঙে চুরমার করে দেন।

এদিন বিধানসভার ঘটনা সেই দুই পুরনো স্মৃতিকে মনে পড়িয়ে দিল। বগটুই গণহত্যা নিয়ে বিরোধী দল বিজেপি আলোচনার দাবি জানিয়েছিল। তাকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনার আবেদন খারিজ করে দিলে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা ওয়েলে নেমে আসেন। সেই সময়ই শাসকদলের বিধায়কের সঙ্গে তাঁরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।

কিন্তু এই হাতাহাতির যে সমস্ত ফুটেজ বাইরে এসেছে তাতে বিধানসভা না বলে ওটাকে দুই পাড়ার চ্যাংফচকেদের ঝামেলা ভেবে নিলে মানসিক চাপ কম হবে! যাদের হাতে রাজ্যের আইন প্রণয়নের দায়িত্ব তারাই নাকি কুংফুর কায়দায় ঘুসি ঝাড়ছেন সতীর্থ বিধায়কের চোয়ালে! সেই ঢুসো খেয়ে ওই বিধায়ক বিধানসভার বাইরে এসে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেন! আবার আরেকজনের অভিযোগ তাঁর জামা ছিঁড়ে ফালা ফালা করে দেওয়া হয়েছে। সেই নমুনা বিধানসভার বাইরে বেরিয়ে এসে সকলের সামনে উদোল হয়ে দেখাচ্ছেন ওই আক্রান্ত বিধায়ক!

বিধানসভা, যাকে গণতন্ত্রের পীঠস্থান মনে করা হয় সেখানে বিধায়করা যদি এই ধরনের আচরণ করেন তবে আমজনতা কীসের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভরসা রাখবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এই সমস্ত ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের শোরগোল ছেড়ে আর‌ও গভীরে গিয়ে প্রভাব পড়ে!

সম্পর্কিত পোস্ট