সহজ ভোটে ছোট ছোট উত্তেজনার ছোঁয়ায় মিটল পরবর্তী রাষ্ট্রপতি বাছাইয়ের কাজ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সোমবার দেশের ১৫ তম রাষ্ট্রপতিকে বেছে নেওয়ার ভোট ছিল এটা জানা কথা। কিন্তু কেমন হল সেই ভোটগ্রহণ পর্ব? দিল্লির পার্লামেন্ট থেকে কলকাতার বিধানসভা ভবন, সর্বত্রই সকাল ১০ টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যায়। প্রায় ৭৭০ সাংসদের পাশাপাশি চার হাজারের বেশি বিধায়ক এদিন ভোট দেন।
লোকসভা বিধানসভা বা স্থানীয় প্রশাসনের ভোটের মতো এখানে রিগিং হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ক্রস ভোটিংয়ের জল্পনায় দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম সর্বত্রই বিধানসভাগুলি মঁ মঁ করেছে। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি দিল্লির সংসদ ভবনও।
এই যেমন তৃণমূলের সাংসদ হয়েও শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে দিল্লিতে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। প্রবীণ শিশিরবাবু দলনেত্রীর কথা মেনে ভোট দেওয়ার কথা জানালেও অধিকারী পরিবারের এই দুই সংসদের ভোট শেষ পর্যন্ত যশবন্ত সিনহা পেয়েছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। আবার অর্জুন সিং খাতায়-কলমে বিজেপির সাংসদ হলেও তাঁর ভোট দ্রৌপদী মুর্মুর ঝুলিতে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
রাজ্য বিধানসভায় তালিকা ধরে বিজেপির হয়ে যে ৭০ জন বিধায়ক ভোট দিলেন তাঁরা সকলেই দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দিলেন তো? তৃণমূল কংগ্রেসের খাতায়-কলমে থাকা রাজ্যের ২১৫ জন বিধায়কের সকলের ভোট যশবন্ত সিনহা পাবেন তো?
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে হঠাৎ উধাও ছত্তিশগড়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী, আতঙ্কে কংগ্রেস
তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে বিজেপির প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করেছে। কিন্তু দক্ষিণের এই দলটি বর্তমানে দুই শিবিরে আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছে। তাই তাদের সব বিধায়কের ভোট আদৌ বিজেপি প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়ে পড়ল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা বিহারে যথেষ্ট পরিচিত মুখ। ফলে বিজেপিকে সমর্থন করলেও নীতিশ কুমারের দল জেডি(ইউ) এর সব বিধায়ক আদৌ দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দিলেন কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে। কিছুটা এমনই অবস্থা ওড়িশায়। সে রাজ্যেরই ভূমিকন্যা দ্রৌপদী মুর্মু। ফলে ওড়িশার কংগ্রেস বিধায়করা আদৌ দলীয় নির্দেশ মেনে যশবন্ত সিনহাকে ভোট দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছে।
এদিকে ভাইপো অখিলেশ যাদবের নির্দেশ অমান্য করেই সমাজবাদী পার্টির প্রতীকে জেতা বিধায়ক তথা মুলায়ন সিং যাদবের ভাই শিবপাল যাদব ভোট দিয়ে বেরিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দেন তিনি দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করেছেন।
এদিনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদান পূর্বে মুলায়ন সিং যাদবের সঙ্গে কার্যত এক আসনে বসলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নীশিথ প্রমাণিক। এই দুজনেরই প্রথম ভোট ঠিকভাবে পড়েনি। তাই তাঁরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নিয়ম মেনে দ্বিতীয়বার ব্যালট পেপার নিয়ে ভোট দেন।
আবার দেশের টানা দুবারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসে সংসদ ভবনে এসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন। তাঁকে দেখে সংসদ ভবনের পুরনো কর্মীদের মন রীতিমতো ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আবার করোনা হওয়ায় পিপিই কিট পরে ভোট দেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিং।
তবে এদিনের সবচেয়ে চমকপ্রদ ছবিটি উঠে এসেছে কেরলে। সে রাজ্যে শাসক সিপিএমের তীব্র বিরোধী কংগ্রেস। কিন্তু সোমবার কেরলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই পক্ষের বিধায়করা বিরোধীর শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিনাকে ভোট দিলেন। তবে কেরল থেকে যদি দ্রৌপদী মুর্মু একজনও বিধায়কের ভোট পান সেটা নিঃসন্দেহে বড়সড় চাঞ্চল্য তৈরি করবে। কারণ ১৪০ সদস্যের বিধানসভায় বিজেপি বা তার শরিক দলের কোনও সদস্যই নেই ‘ভগবানের আপন দেশে’।
তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলা এই প্রথম রিসর্ট রাজনীতির সাক্ষী থাকল। ভোটের আগের দিন রাতে বিজেপি তাদের ৭০ জন বিধায়ককে নিউটাউনের এক পাঁচ তারা হোটেলে নিয়ে গিয়ে তোলে। যা নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।