পুজো অনুদানঃ রাজনীতি না সামাজিক কর্তব্য
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পুজোর শেষ। অথচ রাজনৈতিক গরমাগরমি এখনও কমার নাম নেই। বিশেষ করে এবার এই করোনা আবহে ক্লাব গুলিকে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উপহার এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিষয়টিকে আরও চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ।
মা-মাটি-মানুষের শাসনে ক্লাব গুলিকে অনুদান কোনও নতুন বিষয় নয়। প্রায় প্রত্যেক বছরই পুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রী এ ধরনের উপহার ক্লাবগুলিকে দেন। কিন্তু এবছর যেভাবে একই বিষয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলো তা লক্ষণীয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পুজো কমিটি গুলির সঙ্গে বৈঠকে ঘোষণা করেছিলেন, করোনা আবহে ক্লাবগুলির হাতে টাকা নেই।এই অবস্থায় পাশে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। তিনি ঘোষণা করেন, ক্লাব গুলিকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে যাতে এই অবস্থায় পুজো ঠিকমতো করতে পারেন।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, এহেন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাটি হাতিয়ার করে বিরোধীরা প্রচারে নেমে পড়ে। বাম কংগ্রেস বিজেপি একজোট হয়ে বলতে শুরু করে এ ধরনের অনুদান আসলে ভোটারদের খুশি করার কৌশল, রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা।
এখানেই শেষ নয় এই সুযোগকে কাজে লাগাতে আদালতের দ্বারস্থ হয় বামেরা। আর হাইকোর্ট এই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলে, গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কোনও একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া যায়না।
আদালতের এহেন ব্যাখ্যায় পালে হাওয়া পায় বিরোধীরা, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাম কংগ্রেস বিজেপি নিজের মত করে তৃণমূলকে আক্রমণ শুরু করে। যেমন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী তো আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর বলেই দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে দেখানোর চেষ্টা করছেন তিনি কত বড় হিন্দু। হিন্দুদের খুশি করতেই এই উদ্যোগ।
বিজেপির তরফ থেকে বলা হয়, তোষণের রাজনীতিতেই অভ্যস্ত রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। অতীতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাটা দিয়ে নিজের ভোট ব্যাংক নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। এবার ক্লাব গুলিকে খুশি করে ভোটে নিজেদের পরাজয় বাঁচাতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল।
আর বামেদের তরফ থেকে বলা হয়, নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বললেও তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে এই অনুদানের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেই প্রমোট করছে।
বিরোধীদের এত আক্রমণের পরও আদালত সরকারের পুজো অনুদানকে অবৈধ বলেনি এবং একথাও বলেনি যে এ ধরনের অনুদান রাজ্য সরকার দিতে পারবে না। বরং আদালতের তরফ থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, করোনা আবহে এবছর ক্লাবগুলোকে এই অর্থের ৭৫ শতাংশ খরচ করতে হবে মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের পেছনে। বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হবে পুলিশ ও জনসংযোগের কাজে।
বিশেষজ্ঞরা বিরোধীদের কার্যকলাপে প্রশ্নে ভুরু কুঁচকেছেন। যেভাবে তারা এই পুজো অনুদানের সঙ্গে ভোটকে জড়িয়ে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন তারও নিন্দা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে ভারতবর্ষের বুকে এভাবে সহজে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি নতুন নয়। অন্যসময় কেন্দ্র থেকে শুরু করে রাজ্য সরকার গুলিকে এ ধরনের পদক্ষেপ করতে দেখা যায়। তবে ভোট ব্যাংকের উপর তার প্রভাব সরাসরি কতটা তা স্পষ্ট করে এখনও জানা যায়নি।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-administration-abandoned-ichhamati-in-accordance-with-the-corona-rules/
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, এই ধরনের রাজনীতি শাসক দলকে বাড়তি সুবিধা দেয়। আবার বহু এমন উদাহরণ রয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সরকার পরিবর্তন হয়েছে অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কাজে আসেনি। এর থেকে স্পষ্ট করে কথা বলা যায়, এই ধরনের উপহার সব সময় ভোটবাক্সে সাফল্য এনে দেয় না।
এখন প্রশ্ন হল রাজ্যের শাসক দল কেন বারবার এ ধরনের অনুদান ক্লাবগুলোকে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে তৃণমূলের ব্যাখ্যা, এর পেছনে ভোটবাক্সে লাভের কোন অংক নেই। মূলত বিগত সময়ে রাজ্যে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের উস্কানির কারণে ক্রমবর্ধমান বিভাজন তৈরি হয়েছে।
কিন্তু সমাজে শান্তি এবং সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখা সরকারের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে ক্লাব গুলি যেহেতু সামাজিক সম্মিলনের প্রতিভূ তাই সরকার চাইছে এক্ষেত্রে সামাজিক সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে ক্লাবগুলির সাহায্য নিতে। আর এতে কোনও অন্যায় দেখছেনা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় তো স্পষ্টভাষায় বলছেন, ক্লাব কোনও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়। ক্লাব কে টাকা দেওয়ার অর্থ কোন রাজনৈতিক দলকে টাকা দেওয়া নয়। আর দুর্গাপুজো রাজনৈতিক দল করে না। করে ক্লাবগুলো। সবদিক বিবেচনা করেই এই অর্থ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে করোনা আবহে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ নেই। ক্লাবগুলিরও চাঁদা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা। কিন্তু এই অবস্থায় সঠিকভাবে হাইজিন এবং করোনা সতর্কতার বিধিগুলো মেনে চলা জরুরি। সেজন্যই আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে ক্লাব গুলিকে। বিরোধীরা তা নিয়েই রাজনীতি করতে শুরু করেছে।