কবিগুরু গড়তে চেয়েছিলেন আদর্শ গ্রাম, বীরভূম হয়েছে বোমা-গুলি ও গণহত্যার জেলা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ শিক্ষা ও যাপনকে এক করে তুলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের তপবনের ঐতিহ্য অন্তরে ধারণ করেন। তবে পাশ্চাত্য শিক্ষা ভাবনার প্রতিও তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। এই দুইয়ের মেলবন্ধন এবং প্রকৃতিকে কোলে বেড়ে ওঠার ভাবনা থেকেই ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলেন বিশ্বভারতী।
Malda Blust: মর্মান্তিক বিস্ফোরণে মৃত তিন বছরের শিশু, চাঞ্চল্য মালদায়
১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। সময় বয়ে গিয়েছে, বিশ্বভারতীর বয়স ১০০ পেরিয়েছে। আজও সেখানে আর পাঁচটা জায়গার থেকে একটু অন্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হয়। তবে যে ভাবনা, আশা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী তৈরি করেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার, ভেবেছিলেন এই ভাবনা ধীরে ধীরে গ্রাম বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে তা কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে! বদলে বিশ্বভারতীর জেলা বীরভূম পরিচিত হয়েছে গণহত্যার চারণভূমি হিসেবে। সেখানে আজ আর প্রকৃতির কোলে শিক্ষা নয়, বরং বোমা-গুলির শব্দের সঙ্গে সখ্যতা করে বেড়ে ওঠে শৈশব।
সরকার বদলায়, ক্ষমতার রঙ পরিবর্তন হয় কিন্তু বীরভূমে মারধর, খুনোখুনি, গণহত্যার ছবিটা একই থাকে। বাম আমলে নানুরের সূচপুরের গণহত্যা বা লাভপুরে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতার উস্কানিতে একই পরিবারের তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার ট্র্যাডিশন আজও চলছে। তৃণমূল আমলে রামপুরহাটের এই বগটুই গ্রামেই বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরনে মৃত্যু হয়েছিল ৮ জনের। গ্রামবাসীদের দাবি ছিল মৃতরা সকলেই শাসক দলের কর্মী। সেই ঘটনার বছর দশেক পর হল বগটুই গণহত্যা। এর মাঝেও বারেবারে বোমা-গুলির ঝলকানিতে কেঁপে উঠেছে বীরভূমবাসী।
আসলে শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতীর জেলায় বালি খাদান-পাথর খাদানের মতো উপার্জনের বিকল্প পথই এই অশান্তির অন্যতম কারণ। এদিকে রবীন্দ্রনাথের গ্রাম জীবনের ভাবনা এতোটুকু আন্দোলিত করেনি বাঙালিকে। সে বীরভূমের হোক অথবা কলকাতা, গল্পটা একই। বদলে দু’দিনের জন্য শান্তিনিকেতনে ঘুরতে গিয়ে কেবল ছবি তোলায় মন দিয়েছে বাঙালি। উপলব্ধির ভাঁড়ার শূন্য। তাতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে, আর তার অন্তরাত্মার হাহাকার বীরভূমের গ্রামে গ্রামে আর্তনাদ হয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।