রাজস্থানে গেহলোট সুপার পাওয়ার
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে সরব হওয়া উচিত ছিল বিরোধী দল গুলির। কিন্তু এই প্যান্ডেমিকের আগে এবং পরে দলের ক্ষত মেরামত করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ভারতের প্রবীণ রাজনৈতিক দলকে৷
চার মাসে আগে মধ্যভারতের পর এবার পশ্চিম ভারতের দিকে নজর। গত এক মাস যাবত মরুপ্রদেশে যে রাজনৈতিক ডামাডোল তৈরি হয়েছে তাতেই খানিকটা ভাটা পড়েছে। তবে এর ফলে কংগ্রেসের আখেরে কতটা লাভ হল সেই বিষয় নিয়েই আলোচনা করব।
১৪ অগাস্ট রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্রের কথামতো রাজস্থানে বিধানসভা অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই সোমবার পার্টি হাইকম্যান্ডের সঙ্গে দেখা করলেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট। সূত্রের খবর, প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেন পাইলট।
বৈঠকে পাইলটের ঘর ওয়াপসির কথা নিয়ে আলোচনা হলেও মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। এমনটাই কংগ্রেস সূত্রের খবর। এমনটাও জানানো হয়েছে, যদি পাইলট দলে ফিরতে চান তবে দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা মেটানোর আগে তাঁকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
গত এক মাস ধরে মানেশ্বরের একটি হোটেলে ছিলেন কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়করা। বহু চেষ্টা করেও দলের হাই কম্যান্ড এবং প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কেউই বৈঠক করতে পারেননি।
তাই এদিনের বৈঠক রাজস্থানের রাজনৈতিক অস্থিরতা দুর করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল। যদিও শুরু থেকেই বিদ্রোহী বিধায়কদের দাবী কংগ্রেস তাঁরা ছেড়ে দেননি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদে শচীনকে দেখতে চান তাঁরা। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব চরমে পৌছায়, যখন বিদ্রোহী বিধায়কদের ওপর সরকার ভাঙার অভিযোগ আনা হয়। তাই দলে ফেরার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব হাইকম্যান্ডের সামনে রাখা হয়।
২৪ ঘন্টায় কমল দেশজুড়ে সংক্রমনের হার, আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩,৬০১
শুরু থেকেই পাইলট এবং তার সঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে আসছিলেন মুখ্যমন্ত্রী গেহলোট এবং তার অনুগামীরা। গত রবিবার জয়সলমীরের বৈঠকে সেই কথাই বারবার উঠে আসছিল। কিন্তু সরকার রক্ষা করতে এবং নিজেদের অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখতে দিল্লির নেতাদের গলায় ঠান্ডা স্বর শোনা যাচ্ছিল।
এমনকি এবিষয়ে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরা স্পষ্ট করেন পাইলট শিবিরের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ না থাকায় তাদের সিদ্ধান্ত দলের হাই কম্যান্ডের তরফে নেওয়া হবে৷ তবে রাজস্থানে গেহলোটের সরকার থাকবে। এটুকু বার্তা দেন তিনি।
এখন প্রশ্ন হল, এতদিন ধরে যে ৩০ জন বিধায়কের কথা শচীন শিবিরের তরফে জানানো হচ্ছিল, সেই সংখ্যাতত্ত্ব কি মেলেনি? তার জন্যেই কি খানিকটা সমঝোতার পথে হাঁটলেন পাইলট? তবে বাকি ৭১ জন কারা ছিলেন? বিজেপি! নাকি বসুন্ধরা রাজের শেষ চালে তিনি বুঝতে পারলেন কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই?
শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট রাজস্থানের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বিজেপিকে বারবার দুষেছেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সতীশ পুনিয়া রাজস্থান কংগ্রেসের ওপর আক্রমণ শানিয়ে বলেন , মুখোশ খুলে এবার কংগ্রেসের আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে। এতদিন ধরে বিজেপিকে নিশানা করলেও এই ইস্যু এড়িয়ে গিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
তাহলে পাইলট ফিরে আসলে আখেরে লাভ কার হবে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইলট এবং তাঁর আনুগামীরা কংগ্রেসে ফিরলে আখেরে লাভ মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোটের হবে। এর ফলে ১৪ অগাস্ট বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে সুবিধা হবে তার।
প্রশ্ন এও উঠতে শুরু করেছে, গত একমাসে উপমুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ খুইয়েছেন পাইলট। ঘর ওয়াপসির ক্ষেত্রে কোন সমঝোতায় তিনি হাঁটবেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে সঙ্গি বিধায়কদের পদ নিরাপদ রেখেই দিল্লির দিকে পা বাড়াবেন তিনি।
তবে সোমবারে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে যখন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোটের সঙ্গে দেখা করলেন অভিযুক্ত বিধায়ক ভানওয়ার লাল শর্মা। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর গেহলোট সরকার থাকবে। সেই দলে তিনিও রয়েছেন। বাকি সমস্ত বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান তিনি।
পাইলট ফিরলেও শান্তি ফেরেনি কংগ্রেস শিবিরে। গেহলোট ঘনিষ্ঠ বিধায়করা কার্যত ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য অশোক গেহলোটের কাছে সংখ্যা রয়েছে। রাজস্থানে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য দায়ী শচীন পাইলট। তাকে ফিরিয়ে আনা মানে মুখ্যমন্ত্রীর গালে চড় মারার সমান। তার চেয়ে ভালো কিছু সময় তাকে রাজস্থান থেকে দুরে রাখা হোক৷