কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বার করছেন মাননীয়া, বাতিল করুন বন সহাসকের প্যানেল- মমতাকে কড়া জবাব রাজীবের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে আক্রমণ করেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সরাসরি তিনি বলেন বন সহায়ক পদে দুর্নীতি করে এখন বিজেপিতে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। ওয়াশিং মেশিন ভাজপা। সেখানে কালো জিনিস সাদা হয়ে যায়। বন সহায়ক নিয়োগ নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত করবে রাজ্য সরকার।
পাল্টা আজ গুড়াপে জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রীর জবাব দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজীবের নাম না করলেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী সম্মোধন করে তার বক্তব্য শুরু করেন।
বন সহায়ক পদের কারসাজি নিয়ে রাজীবের স্পষ্ট জবাব, “বন সহায়কের নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য আমি বোর্ডের হাতে সেই দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলাম। ৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল দশটার সময় আমি আপনাকে মেসেজ করে জানিয়ে ছিলাম বীরভূমের এক বড় তৃণমূল নেতা আমাকে ধমকি দিয়ে বলছে বন সহায়কের সব চাকরি তাকে দিতে হবে। আপনি তার পাল্টা আমায় ফোন করে বলেছিলেন জেলায় জেলায় তৃণমূলের কয়েকটা কোটা তুমি দিয়ে দাও।”
সরাসরি আক্রমণ করে রাজীব বলেন, “আমি এতদিন মুখ খুলিনি। আজ আপনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম। আমার কাছে সব তথ্য রয়েছে। ৮ ই অক্টোবর সকাল ৯.৫৮ নাগাদ আপনার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছিল। ”
তিনি আরও বলেন, “আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দিতে চাই আমার কাছে সব তথ্য রয়েছে। কোথা কোথা থেকে সুপারিশ এসেছে, কে কে সুপারিশ করেছে, কালিঘাট থেকে কি সুপারিশ এসেছে, কোন বিধায়ক কী সুপারিশ দিয়েছে। সব তালিকা আমার কাছে রাখা আছে যত্ন করে। কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে কেউটে সাপ আপনি বার করছেন।”
রাজীবের কথায়, “মাননীয়া আপনি এখনো আলিপুরদুয়ারেই আছেন। আপনার বর্তমান জেলা সভাপতিকে জিজ্ঞেস করে নিন তিনি কী সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন আমাকে। আমি এমন একজন রাজনীতিবিদ যাকে আপনি যত প্রশ্ন করবেন তার সব জবাব আমি দিয়ে দেব।”
পাল্টা রাজীব বলেন, “আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই।প্রয়োজন হলে বন সহায়কের প্যানেল আপনি বাতিল করে দিন। তাতেই দুধ কা দুধ পানি কা পানি হয়ে যাবে। আমি এতটাই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছিলাম যে তাতে আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না।”
রাজীবের মাননীয়া কে প্রশ্ন, “এর আগে যে যে দফতরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে, এমনকি আমি আগে যে দফতরে ছিলাম সেখানে যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আপনি দিয়েছিলেন সেখানে পূর্ণাঙ্গ তথ্য আপনাকে তদন্ত করতে হবে। কিভাবে আপনি সেই চাকরি দিয়েছিলেন, পারবেন তো তার তদন্ত করতে?”
চড়া সুরে রাজীব বলেন, “আমি মন্ত্রগুপ্তি শপথ নিয়েছিলাম। আমি চাইনি এসব কথা বলতে। কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করলেন। তাই আপনাকে যোগ্য জবাব আমি দিয়ে গেলাম। আপনি পারবেন তো সামলাতে?”
তাঁর কথায়, “আমার অসন্তোষ নিয়ে আমি এতদিন মুখছিলাম না। শেষ আড়াই-তিন বছরে কি হয়েছে তা সম্পর্কে আমি যদি মুখ খুলি, জেনে রাখবেন বট গাছের পাতা নড়বে না, গোটা বটগাছটা নড়ে যাবে। সমুদ্র উথাল-পাতাল করবে। হ্যাঁ এতটাই ক্ষমতা আমার রয়েছে।”
আক্ষেপের সুরে রাজীব বলেন, “রাজনীতি একদম কলুষিত হয়ে গিয়েছে। দিকে দিকে জনগণের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে। অপশব্দ ব্য়বহার করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে।ছোটবেলা থেকে আমার বাবা বলতেন রাজনীতি হল রাজার নীতি। দল যাবে আসবে কিন্তু মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।”
সবশেষে তিনি মাননীয়াকে আরও একটি প্রশ্ন করেন। ৯ নভেম্বর নিয়োগ হয়েছিল বন সহায়ক পদের। আর রাজীব দল ছেড়েছেন ২৯ জানুয়ারি। তাঁর প্রশ্ন, যদি দুর্নীতি আমি করেই থাকি তাহলে এতদিন আমাকে তাড়াননি কেন? আমি তো নিজে ছেড়েছি।
তিনি বলেন, আমাকে ধরে রাখার জন্য আপনি কাকে কাকে দিয়ে ফোন করিয়েছেন এবং কি কি কথা হয়েছে তার সব রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। আমি জানতাম পরবর্তীকালে আপনি এরকমই কিছু করবেন। তারজন্য সব আমি যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছি। আমি যদি এতই খারাপ হই তাহলে আমাকে আটকাতে এত কষ্ট আপনি কেন করলেন ?
উল্লেখ্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দল ছাড়ার পর থেকেই ডোমজুড়, হাওড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় রাজীবের বিরুদ্ধে একাধিক কুকথা সম্বলিত পোস্টার প্রচার করছে শাসকদল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, আজ গুড়াপের সভা থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে প্রশ্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে রেখেছেন তার জবাব জনসমক্ষে দিতে গেলে সত্যিই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসবে। আর সেই ভুল তৃণমূল সুপ্রিমো কখনোই করবেন না।
তৃণমূলের পাল্টা স্লোগানে, ‘আয় তৃণমূল দেখে যা বিজেপির ক্ষমতা’, একই সঙ্গে ‘খেলা এখনো বাকি আছে, সবে তো শুরু হয়েছে’ – বক্তব্যেই গুড়াপের সভা থেকে প্রচারে ঝড় তুললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে আজকের সভা থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে জবাব মাননীয় কে দিয়েছেন তা সামলানো সত্যিই বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে শাসক দলের পক্ষে।
আগামী দিনে আর কি কি নতুন তথ্য উন্মোচিত হবে, তাতেই মুখিয়ে রয়েছেন রাজ্যের আমজনতা।