“আমি ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিচ্ছি, আমার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটেনি”- কীসের ইঙ্গিত দিলেন রাজীব?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ স্পষ্ট কথায় কষ্ট নেই। যারা সত্যপ্রিয় মানুষ তারা প্রায়শই এই কথাটি বলে থাকেন। রাজনীতিতে স্পষ্টবক্তা বা সত্যপ্রিয় মানুষের সংখ্যাটা হাতে গুনে বলে দেওয়া সম্ভব। আর বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে খুব অভাব পড়ছে এই সত্যপ্রিয় এবং স্পষ্টবক্তা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের।

২০২১ সালটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, আর্থিক -সামাজিক সবক্ষেত্রেই ২১ সালের দিকে ভালো কিছু পাওয়ার আসায় তাকিয়ে রয়েছেন গোটা বিশ্বের মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ২১ সাল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিকভাবে।

তার কারণ মে মাসেই জলের মত পরিস্কার হয়ে যাবে বঙ্গের রাজ সিংহাসনে কোন রাজা বসছেন। তার আগে ওয়ার্ম আপ ম্যাচ চলছে। সেখানেই শাসক শিবিরের একের পর এক প্লেয়াররা ক্ষোভ-বিক্ষোভ-অভিমান এসব নিয়ে পরপর ছক্কা হাঁকিয়ে যাচ্ছেন।

যারা প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করছেন তাদেরকেই দলের অন্যান্য নেতৃত্বরা ‘বেইমান’ , ‘মীরজাফর’, আরো বিভিন্ন তকমায় ভূষিত করছেন। যা সত্যিই দেখার মতো।

নিজের ফেসবুকে আগেই জানিয়েছিলেন শনিবার দুপুর তিনটের সময় ফেসবুক লাইভে এসে জনতার সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্যের দাপুটে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো গোটা রাজ্যের মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন হয়ত আজকেই রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে সেই পথে হাঁটলেন না তিনি। উল্টে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরলেন বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে । যা স্বাভাবিকভাবে নজর কেড়েছে রাজ্যবাসীর।

দিকে দিকে হাহাকার, চাকরির অভাব, বেকারত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । এককথায় বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের বুকে কর্মসংস্থান একটা বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। আর যে সমস্ত শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাকরি না পেয়ে দীর্ঘদিন বসে থাকছেন, মুখভার করে তারাই চলে যাচ্ছেন রাজ্য ত্যাগ করে বা দেশ ত্যাগ করে। যা রাজ্য ও দেশের পক্ষে প্রভূত ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যুব সমাজের আইকন রাজীব নিঃসন্দেহে স্পষ্টবক্তা। সব থেকে বড় কথা এই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির রাজনীতিতে তার গায়ে এখনো পর্যন্ত কোনো রকম কাদার দাগ লাগেনি। একেবারে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই তরুণ তুর্কি নেতা যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আজ ফেসবুক লাইভে।

পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যুবসমাজ ক্রমশ বিরূপ হচ্ছে রাজনীতির প্রতি সেটাও রাজ্য এবং দেশের কাছে কতটা বিপদজনক সে ব্যাখ্যা করলেন তিনি। প্রত্যেক ছেলেমেয়ে চায় পড়াশোনার পর চাকরির মাধ্যমে আত্মনির্ভর হতে।

আর সেই লক্ষ্যেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ উদ্যোগে ডোমজুড় বিধানসভায় কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্য ফ্রি কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থা করেছেন ,তা জানালেন। শুধুমাত্র ডোমজুড় বিধানসভাই নয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে যাতে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন, নিজ উদ্যোগে সেই চেষ্টাই করেছেন তিনি।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কোন দলে থাকবেন। স্পষ্ট উত্তর তিনি দিয়েছেন। তিনি মানুষের দলে থাকবেন। কারণ রাজনীতি তিনি মানুষের স্বার্থে করেন। একথা আগেও তিনি বলেছেন। এর আগেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তখনো তার মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছিল। আজও এর অন্যথা হয়নি।

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক লাইভ শেষ হতে না হতেই রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সরাসরি রাজীব প্রসঙ্গে বললেন,  বিজেপির গ্যাস খেয়ে এসব কথা বলছে। দলের প্রতি ক্ষোভ থাকলে তা ক্যাবিনেটে জানানো উচিত। রক্ত গরম বলে এসব কথা বলছে। তবে রাজীবের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি বার বার ক্ষোভের কথা জানিয়ে কোন লাভ কিন্তু হয়নি।

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সরব হয়েছিলেন দলের কর্মীদের প্রতি অসম্মান ও বঞ্চনার প্রসঙ্গেও। তিনি বলেন, কর্মীদের আমরাই ভুল বোঝাচ্ছি। বিভ্রান্ত করছি। তারা শুধু সম্মানটুকু চায়। অনেকেই সেই সম্মানটুকুও কর্মীদের দেন না।

তবে তিনি একথাও আজকে বললেন, তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। তিনি ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে প্রয়োজন হয় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের। যদিও ভোটের আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কোন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেবেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

এদিন ফেসবুক লাইভে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি কোনো ক্ষোভ প্রকাশ করেননি তিনি। উল্টে রাজীবের গলায় শোনা গিয়েছে মমতার স্তুতিগান।

তিনি বলেন,” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নীতি আদর্শের পথ দেখিয়েছিলেন সেই পথ ধরেই আমি এতদিন চলেছি। যখন আমাকে যে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। সর্বোপরি আমি আমার কর্মীদের প্রতি অকুন্ঠ সম্মান জানিয়েছি। প্রত্যেকটি সাধারন মানুষ আমার দরবারে এলে আমি তাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি। তবে অনেক সময় ভালো কাজ করতে গিয়েও করতে পারিনি। যার জন্য মনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।”

একথা তিনি আগেও বলেছেন। পাশাপাশি নাম না করেই দলের বেশ কয়েকজন নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিষ্কার তিনি বলেন, “অনেকেই স্বার্থের জন্য কাজ করেন। আমি তা করিনি। আমার কথার অপব্যাখ্যা করা হয়।”

১৬ ই জানুয়ারি একদিকে যখন দেশজুড়ে টিকাকরণ চলছে, তখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক লাইভ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত সেখানে উঠে আসা আত্মনির্ভরতা এবং যুব সমাজকে সঠিক পথে চালনা করার যে কথা তিনি আজকে বলেন তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

এর পরবর্তী সিদ্ধান্ত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কি নেন বা আদৌ দলের তরফে রাজীবের ক্ষোভ প্রশমনে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় কিনা সেদিকে নজর থাকবে রাজ্যবাসীর।

সম্পর্কিত পোস্ট