আজই দিল্লি যাচ্ছেন রাজীব, ডুমুরজলার ‘রাজ’সভায় থাকছে হাওড়ার চাঁদের হাট

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  রাজ্য রাজনীতিতে অমিত শাহের হাত ধরে ৩১ শে জানুয়ারি পালাবদলের কথা ছিল। তবে এতে খানিকটা বদল হয়েছে। অমিত শাহের বদলে আসছেন রাজনাথ সিং। তাঁর হাত ধরে ঘুরতে চলেছে রাজনীতির মোড়।

পাল্টাতে চলেছে হাওড়ায় শিবিরের এতদিনের রাজনৈতিক চরিত্র। যারা এতদিন মমতার দল করতেন ৩১ শে জানুয়ারির পর থেকে একটি বিশাল অঙ্ক বিজেপির হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে হাওড়ায় মাটি শক্ত করা নতুন করে বেশ কঠিন হয়ে উঠবে তৃণমূল সুপ্রিমো কাছে।

হাওড়ার এই বিশাল অঙ্কের রং পরিবর্তনের নেপথ্যে অবশ্য নায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া যাকে অভিনেতার তকমা দিয়ে দিয়েছে। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে করে বেরিয়ে আসা কার্যত মুখে কুলুপ আঁটতে বাধ্য করেছে অতি বড় নিন্দুকেও।

একবাক্যে সবাই স্বীকার করে নিচ্ছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আনুগত্য প্রশ্নাতীত। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে এহেন একনিষ্ঠ সৈনিকের মান ভাঙাতে কেন একবারের জন্যেও এগিয়ে এলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাহলে কি ভেতরে অন্য কোন সমীকরণ কাজ করলো? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কারোর জানা নেই।

একে একে মন্ত্রিত্ব, বিধায়ক পদ  ছাড়ার পর সর্বোপরি দল ছাড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে অবশ্য তৃণমূলের মুষ্টিমেয় নেতার বক্তব্য ‘কিছু যাবে আসবে না’। হাওড়া জেলাকে তিলে তিলে তৈরি করেছিলেন রাজীব। ২০১৬ সালে ডোমজুড় কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ী হন।

রবিবার হাওড়ায় বিজেপির যোগদান মেলায় উপস্থিত থাকবেন রাজনাথ সিং

২৯৪ টি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিড দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ডোমজুড়বাসীর জন্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান অনস্বীকার্য। একথা আমরা বলছি না ,বলছেন ডোমজুড়ের আমজনতা। শুধু ডোমজুড় নয়। গোটা হাওড়া জেলার মানুষ একবাক্যে রাজীবের অন্ধ সমর্থক।

যে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কর্মী স্বীকার করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচুর কাজ করেছেন। এমনকি তারা এটাও বলেন উনি চেয়েছিলেন হাওড়া জেলাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে । তাই বারবার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। তা ফলপ্রসূ হয়নি।

৩১ তারিখ ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে যে যোগদান মেলা হচ্ছে বিজেপির, তাতে গোটা হাওড়া জেলা যেনো ভেঙে পড়তে চলেছে। প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া, রথীন চক্রবর্তী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেও এখনো প্রশ্ন আছে লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে নিয়ে।

একই সঙ্গে হাওড়ার শাসকদলের কর্মীদের কথায়, এই চার নেতার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ জনসমর্থন রয়েছে তাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে। তাই তারা যখন দল ছেড়ে অন্য দলে নাম লেখাতে চলেছেন, সেই বিপুল সংখ্যক জনসমর্থনও বিজেপিতে যাবে। পালাবদলের এই শেষ লগ্নে এসেও অরূপ রায় প্রসঙ্গে তাদের ক্ষোভ যে এতটুকুও কমেনি হাওড়া তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্যে স্পষ্ট।

সম্ভবত, আজই দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন রাজীব। দেখা করবেন অমিত শাহের সঙ্গে। দেখা করার কথা রয়েছে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে। সাক্ষাৎ পর্ব শেষে আজই কলকাতায় ফেরার কথা তাঁর। রাজীবের সঙ্গে দিল্লি যাচ্ছেন বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষাল, রথীন চক্রবর্তী। দিল্লির বিশেষ বিমানে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর এবং দল ছেড়ে দেওয়ার পর  শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষন বৈঠক করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বৈঠকে কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। রাজীব ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি অমিত শাহ কাল রাজ্যে আসতেন তাহলে তাঁর সঙ্গেও ব্যক্তিগত বৈঠক হত রাজীবের।

রবিবার থেকে ফের নামতে পারে পারদ, জানালো হাওয়া অফিস

শুধু তাই নয়, সেই বৈঠকের জন্য অমিত শাহ খোদ ফোন করেছিলেন রাজীবকে। রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে আগামীকাল যোগদান মেলায় থাকছেন স্মৃতি ইরানিও। ৩১ এর মঞ্চ থেকেই রাতারাতি ভোল পাল্টে যাবে হাওড়ার।

রাজনৈতিক মহলের মতে হাওড়া জেলায় এতদিন দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। কারণ দক্ষ সংগঠক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তার ক্যারিশমায় ধরে রেখেছিলেন হাওড়ার মাটি। যেহেতু তিনি বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন তাই হাওড়ায় বিজেপির পথ যে আগামী নির্বাচনে পরিষ্কার হয়ে গেল সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার হাওড়ার ভাঙ্গন রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে কি পন্থা অবলম্বন করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট