শুভেন্দুর খাসতালুকে দিদির দেওয়া ব্যাটেই ওভার বাউন্ডারি রাজীবের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বলুন না কেন ২৯৪টি কেন্দ্রে ‘আমিই প্রার্থী’, আসলে তাতে এখন আর চিঁড়ে ভিজবে না।
তার কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হলেও দরকারে-অদরকারে স্থানীয় নেতৃত্ব বা বিধায়কের কাছেই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে পৌঁছতে হয়। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হলেও কোন দলকে তারা ভোট দিচ্ছেন বা কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন, একুশের নির্বাচনে সেটাও যাচাই করে নেবেন আমজনতা।
কারণ বাস্তব সত্য হল, সাধারণ মানুষের পক্ষে দলনেত্রীর কাছে বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সবসময় তাদের অভাব অভিযোগ জানানো সম্ভব নয়।তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
সবথেকে বড় কথা জেলায় জেলায় সাংগঠনিক স্তরে ভাঙন শুরু হয়েছে। সেই রক্তক্ষরণ রুখতে আগে সংগঠনের ভীত মজবুত করতে হবে।নাহলে প্রার্থী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হলেও জিতে আসা খুব কঠিন।
দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীত্ব ত্যাগের পর ২৯ নভেম্বর প্রথম অরাজনৈতিক সভা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। যা নিয়ে দিনভর পশ্চিমবঙ্গবাসীর নজর ছিল টানটান। তার কারণ অবশ্য একটাই। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে যাচ্ছে সেটা অনুমান করা।
এরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী বিজেপি ও সেইসঙ্গে বাম কংগ্রেস জোট। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই শুরু করে দিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ। সেই নির্দেশ দিয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থক ও শীর্ষ নেতৃত্বকেও।
শুভেন্দুর সঙ্গে এখন তৃণমূলের দূরত্ব বেড়েছে সেটা কার্যত স্পষ্ট। শনিবার একদিকে শুভেন্দুর সভা অন্যদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজিত বসুর রাজনৈতিক সভার দূরত্ব ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। তবে পাটিগণিতের দূরত্ব কম থাকলেও মানসিক এবং সামাজিক দূরত্ব যে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে সে সম্পর্কে অবহিত সকলেই।
শনিবার শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক হলদিয়াতে সভা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজিত বসু। তবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন উন্নয়নের যজ্ঞে শামিল হতে গেল হাত ধরতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই।
সেই সঙ্গে নতুন যুবসমাজ যারা যোগ দিচ্ছে তৃণমূলে তাদেরকেও দলের ওপর আস্থা এবং ভরসা রাখার আহ্বান জানালেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারীর পর জননেতা হিসেবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একইসঙ্গে যুব সমাজের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
দলনেত্রী আগেই বলেছিলেন একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর মূল লক্ষ্য যুবসমাজকে দলমুখী করা। সেক্ষেত্রে শুভেন্দু যখন দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলছেন তখন জনমানসে প্রভাব ফেলতে এবং যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে নেত্রী ব্যাটন তুলে দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে।
আর শনিবার দিদির দেওয়া ব্যাট দিয়েই একের পর এক বল ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন রাজীবও। সাংগঠনিক দিক থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দক্ষতা প্রশ্নাতীত।বারবার দলের অন্দরে অনেকেই বলেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হোক।
সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে জনসভায় হাঁটেন তারপর যদি কেউ এমন ভাবে হেঁটে থাকতে পারেন তা হচ্ছেন একমাত্র রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
একুশে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় গুলির ক্রমশ বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সংবাদমাধ্যমের সামনে। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল।
দুটি উপনির্বাচনে রাজীব যেভাবে লড়াই করে জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রীকে তাতে নজর কেড়েছে অনেকেরই। তারপর থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি আস্থা শুধুমাত্র দলনেত্রীরই নয় অনেকেরই আরো বেড়ে গিয়েছে।
দফতর হোক বা জনসভা, সাংগঠনিক বিষয়ে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতা প্রদর্শন করে গিয়েছেন রাজীব। এমনিতে তিনি স্মিতভাষী হলেও শনিবারের জনসভা থেকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রয়োজন পড়লে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন।
রাজ্যের মানুষকে যিনি সবসময় দেবতা জ্ঞানে পূজা করেন, তাদের জন্য কিছু করা মানে তাঁর কাছে ভগবানের পুজো করা। পাশাপাশি যার কাছে রাজনীতি কথার অর্থ ‘রাজার নীতি’। স্বাভাবিকভাবেই এহেন জননেতার প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস-ভালবাসা অবশ্যই বাড়বে।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/distance-10-km-shuvendu-vs-rajeev-and-sujit/
রাজনৈতিক মহল বলছে, তৃণমূলের অন্দরে ভাঙ্গন ধরিয়েছে পরিবার তন্ত্র। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তেমনি অধিকারী পরিবারকে যদি দেখা যায় শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারি একের পর এক পদ দখল করে রয়েছেন। যাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। অধিকারী পরিবার এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ মহলের দাপটে দক্ষতা থাকা সত্বেও ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নেতৃত্বরা। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে যেভাবে দলের মধ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা হচ্ছে, তা আরো বাড়বে বৈ কমবে না।
দলের এই ভাঙ্গন রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর মত নেতৃত্বকে সামনে আনা। পাশাপাশি সাংগঠনিক দিক থেকে দায়িত্ব বৃদ্ধি করা রাজীবের।
পরিবর্তনের স্রোতের ধারায় রাজীবের মত নেতৃত্বরা সকলের অলক্ষ্যে আড়ালে চলে গিয়েছেন। যাদের গুরুত্ব অনেক বর্ষীয়ান নেতার থেকেও বেশী। সবকিছুই ম্যানেজমেন্টের বুদ্ধিতে সমাধানের চেষ্টা করেন রাজীব। তাই যুব সমাজের কাছে অচিরেই রাজীবের বুদ্ধি প্রশংসিত।
একুশের ভোট যত এগিয়ে আসছে ততোই দিকে দিকে ব্যস্ততা বাড়ছে তৃণমূলের। আপাতত শুভেন্দুকে মাইনাস করেই চলছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে বনমন্ত্রীর পদ ছাড়াও হাওড়ার কো-অর্ডিনেটর রয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও আগামীতে তাঁর কাঁধে নতুন কোনো দায়িত্ব বর্তাতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
আর যদি সত্যিই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক দিক থেকে বড় কোন পদ পান তৃণমূলের ভগ্নদশা রুখে দলের পুরোনো জায়গা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন। সেটা রাজীবের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাবে।