তৃণমূল খাচ্ছে তৃণমূলকে? নাকি ধান্দাবাজদের রাজনীতিকরণ বগটুইয়ের জন্ম দেয়?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ তবে সোমবার ও মঙ্গলবার জুড়ে রামপুরহাটে যা হল তা বোধহয় আর সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সোমবার চায়ের দোকানে বোমার আঘাতে খুন হন বড়শাল গ্রামের তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ। তারপরই মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে বগটুই গ্রাম।
অভিযোগ ভাদুর অনুগামীরা প্রতিশোধ নিতে তাঁর বিপক্ষ গোষ্ঠীর তৃণমূল নেতা সোনা শেখ ও তার আত্মীয়দের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যদিও বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা ১২। আবার সরকারের দাবি ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে!
গত বছর এই বগটুই গ্রামেই খুন হয়েছিলেন ভাদুর ভাই বাবর শেখ। শুধু বগটুই নয়, গত কয়েক বছরে বারেবারে তৃণমূলের হাতে তৃণমূল খুন হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। বিরোধীদের একাংশের দাবি, কয়লা-বালি-পাথর খাদানের বেআইনি কারবারের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিবাদের জেরে তৃণমূল খাচ্ছে তৃণমূলকে!
Rampurhat Incident : এটা হাথরাস নয়, বিজেপি ল্যাংচা খেতে যাক, আমি কাল যাবঃ মুখ্যমন্ত্রী
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এই অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়। সত্যিই পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে ‘হিসস্যার’ ভাগ নিয়ে শাসকদলের ভিতরকার লড়াই আমজনতাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। কিন্তু শুধু কি তাই?
বাম জামানাতেও রাজ্যের মানুষ অসংখ্য রাজনৈতিক হিংসা দেখেছে। কিন্তু তা কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কখনোই রাজ্যব্যাপী ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু তৃণমূল আমলে সর্বত্রই যেন ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে এক টেনশনের চাপা স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
এতদিনে একটা বিষয় জলের মতো পরিস্কার হয়ে গিয়েছে, নিচুতলার কর্মীদের উপর তৃণমূল নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ বেশ কম। বাম আমলে ছবিটা ঠিক এর উল্টো ছিল। এগুলোর থেকেও আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় লক্ষ্য করার, তৃণমূলে নিষ্ঠাবান দলীয় কর্মী-সমর্থকের অভাব নেই। বরং দল যখন ক্ষমতায় ছিল না তখন এরাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা ভরসার জায়গা।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছরে ধীরে ধীরে দুর্বৃত্তরাই তৃণমূলের স্থানীয় স্তরের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। এটা রামপুরহাট হোক বা পানিহাটি, সর্বত্রই এক ছবি। বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বসে থাকা শাসক দলের নেতারাও কোনও না কোনও ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। তাই লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না! তার পরিণতিই বগটুই গণহত্যা!