যে কৃষ্ণ, সেই গৌর,সেই জগন্নাথ ; জগন্নাথের স্নানযাত্রার মাহাত্ম্য়

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ যে কৃষ্ণ, সেই গৌর,সেই জগন্নাথ। ভগবান জগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর। সংস্কৃত ভাষায় জগত অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে-ঈশ্বর বোঝায়। সুতরাং জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা জগদীশ্বর।

জগন্নাথদেবের আবির্ভাব তিথিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নানযাত্রা উৎসব শুরু।

স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথদেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাদেবী এবং সুদর্শনদেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়।

পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সমূহ অবলোকন করা যায়। অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ঐতিহ্যবাহী ফুল, বাগান ও গাছের চিত্রকলা দ্বারা সজ্জিত করা হয়।

অমলকান্তি ভাগ্যিস রোদ্দুর হয়নি!

তোরণ এবং পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দেশ্যে ধুপ, ধুনা অর্পণ করা হয়। পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়া থেকে জল আনা হয়।

জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখনিঃসৃত কোন কিছু দ্বারা এমনকি তাদের নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়। স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে।

এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়। এরপর জগন্নাথদেব এবং বলদেবকে গজ বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রাদেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়।

স্নানযাত্রা উৎসবের পর ১৫ দিন ভগবানকে জনসাধারণ থেকে দূরে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ। এই সময় ভগবান জগন্নাথ , বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়।

এই সময়কে বলা হয় অনবসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ তম দিনে জগন্নাথদেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট