Ration Durniti : বালু পচা আলু! গরিবের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া মহা-পাপ

রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে উত্তাল গোটা বাংলা।

রেশন দুর্নীতি (Ration Durniti )কাণ্ডে উত্তাল গোটা বাংলা। আসলে বাংলা নয়, বাংলার রাজনীতিটুকুই কেবলমাত্র উত্তাল হয়েছে। এত বড় একটা ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও আমজনতার মধ্যে বাজার চলতি ট্রোল, কটাক্ষ ছাড়া বিশেষ হেলদোল লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে কি দুর্নীতি আস্তে আস্তে গা স‌ওয়া হয়ে যাচ্ছে বঙ্গবাসীর?

বাংলা এর আগে দুর্নীতিমুক্ত ছিল এমন দাবি করাটা ভুল হবে। কিন্তু সংগঠিত দুর্নীতি বিশেষ করে সরকারি স্তর থেকে পরিচালিত দুর্নীতি সত্যিই স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও এই রাজ্যে অনুপস্থিত ছিল। উত্তর ভারত-দক্ষিণ ভারতের একের পর এক রাজ্যে সরকার এবং শাসকদলের সঙ্গে দুর্নীতি যখন সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন‌ও এখানকার শাসক-বিরোধী সকলেই দুর্নীতি থেকে যেন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। ব্যক্তিগত স্তরে কিছু কিছু নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে একেবারেই যে সারবত্তা ছিল না এমন‌ও নয়। কিন্তু তা কখনও ব্যক্তিগত অপরাধের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়নি। তবে কঠিন বাস্তব হল ২০১১ সালে তৃণমূল সরকারে আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। আর এখন তো শিক্ষা দুর্নীতি, রেশন কেলেঙ্কারি, পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ত্রাণ বণ্টনের হাত ধরে বিষয়টা এক প্রকার প্রতিষ্ঠিত যে সত্যিই কিছু না কিছু হয়েছে।

বাংলার বর্তমান শাসকদলের নেতারা তাঁদের দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নস্যাৎ করতে গিয়ে ৩৪ বছরের বাম জমানাকে নিশানা করেন। এক্ষেত্রে তাঁদের বক্তব্যে নিজেদের সময়কে নিরপরাধ বা কলুষ মুক্ত বলে দাবি থাকে না। বরং তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাপ-অন্যায় সমাজে আগেও ছিল, সেই ধারাবাহিকতায় এখনও ঘটছে। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষ থেকে বাম জমানার যে ঘটনাগুলিকে নিশানা করা হয় তার বেশিরভাগই যে ধোপে টেকে না সেটা দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে একপ্রকার প্রমাণিত। পাশাপাশি একটিও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি তাঁরা দেখাতে পারেন না যেখানে সরকারের মন্ত্রী, আমলাদের দ্বারা তৈরি দুর্নীতির চেন একেবারে সমাজের নিচুস্তরে মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এই তৃণমূল জমানায় একের পর এক ঘটনায় ঠিক সেই ছবিটাই দেখা যাচ্ছে।

আরও খবর- Bollywood : ঐশ্বর্য ও আরাধ্যার দিকে ঘুরেও তাকালেন না অভিষেক , আনফলো করলেন অমিতাভ

Ration Durniti : বালু পচা আলু! গরিবের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া মহা-পাপ

বাম আমলে টাকা দিয়ে কেউ স্কুল শিক্ষক হননি এই দাবি করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই সিপিএম নেতারা এমন অভিযোগ মানতে চাইবেন না। কিন্তু শতাংশের বিচারে নগণ্য হলেও এক-আধজন এমন ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে যিনি সেই সময়েও কাউকে ঘুষ দিয়ে হয়ত একটি শিক্ষকের চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। তবে বামফ্রন্ট সরকার এসএসসি’র মাধ্যমে হাইস্কুলের শিক্ষক নিয়োগ শুরু করার পর বাম জমানায় সেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায় না। যদিও প্রাথমিকে বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ বিক্ষিপ্তভাবে আছে। যার কিছু অভিযোগের সারবত্তা আশেপাশে কান পাতলেই জেনে যাবেন। এই দুর্নীতিও কাম্য নয়। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে, এগুলো সবই ব্যক্তিগত ঘটনা। অপরাধের পিছনে কোন‌ও সংগঠিত দুর্নীতি চক্র কাজ করেনি। মন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনও শীর্ষ পর্যায়ের আমলা বা আধিকারিকও এই সকল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েননি।

কিন্তু তৃণমূল সরকার সেই বিচ্ছিন্ন দুর্নীতি বা অপরাধকে নির্মূল করার বদলে তাকে একেবারে একটি সুসংহত রূপ দিয়ে বসেছে। গত দু’বছর ধরে একের পর এক দুর্নীতির ছবি উঠে আসছে, তাতে শিল্পহীন বাংলায় দুর্নীতি বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যম হয়ে উঠেছে বলা চলে!

সামগ্রিক ও সামাজিক দুর্নীতিতে অনভ্যস্ত বাঙালি কি তবে এইসব কিছু দেখে কিছুটা ভড়কে গিয়েছে? অনভ্যস্ত কাজকর্মের চাপ নিতে না পেরে সেকি বিচলিত হওয়াটাই বন্ধ করে দিয়েছে? নাহলে রেশন দুর্নীতি নিয়ে বাঙালি কী করে এতটা ভাবলেশহীন হতে পারে! রেশনে দেওয়া চাল, গম গরিব মানুষের পেটের ক্ষিদে মেটানোর একমাত্র সম্বল। সেটা নিয়ে এত ভয়াবহ তছরুপ ঘটার পরেও বিকার কোথায় মানুষের?

আরও খবর- “দিলীপ কেন গ্রেফতার নয়?” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে আদৌ এই প্রশ্ন করতে পারেন অভিষেক

মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নেওয়ার থেকে পাপ এই দুনিয়ায় আর কিছু হতে পারে না।

অনেকেই বলেন, শিক্ষা দুর্নীতির প্রভাব মূলত শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ, তা গ্রামের মানুষকে ততটা প্রবলভাবে আন্দোলিত করেনি। কিন্তু রেশন দুর্নীতি তো তা নয়। রেশনের চাল-গম নয়ছয় করা, সরকারের বরাদ্দ করা ভাল চালের পরিবর্তে পোকা ধরা কাঁকড় যুক্ত নিম্নমানের চাল খেতে বাধ্য তো গ্রামের মানুষও হয়েছেন। এই অন্যায়টা যে তাঁর নিকটবর্তী রেশন ডিলার কেবলমাত্র করেছেন তা তো নয়। একটা বিষয়ে পরিষ্কার- এই দুর্নীতি একেবারে সরকারের উচ্চমহল বা একটি প্রভাবশালী স্তর থেকে পরিচালিত হয়েছে। তাইত এই দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্য মন্ত্রীকে হাজতবাস করতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও মানুষ এত নিস্পৃহ কীভাবে?

এটা কি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির শিক্ষিত, সচেতন ও প্রগতিশীল অংশকে বিরাজনীতিকরণ করার ‘সুফল’? দুর্নীতিগ্রস্তদের কাছে এটা সুফল হলেও সমাজের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে এটা যে ভয়ঙ্কর কুফল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে জনতা জনার্দন নয়, এই ভয়ঙ্কর পাপের চূড়ান্ত বিচারে একমাত্র আদালতই ভরসা।

দেখুন, মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নেওয়ার থেকে পাপ এই দুনিয়ায় আর কিছু হতে পারে না। বিশেষ করে করোনা মহামারীর দাপটে যখন একের পর এক ব্যক্তি কাজ হারিয়েছেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে, মুদ্রাস্ফীতির হার চরমে, সংসার চালানো যাচ্ছে না ঠিক করে। সেই সময় যদি রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেওয়া খাদ্যশস্য নিয়ে মন্ত্রী-আমলা পর্যায় থেকে দুর্নীতি হয় তবে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সেটা আদপে আপনার মুখের ভাত কেড়ে নেওয়ার সমান। সে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হোন বা আপনার পাড়ার রেশন ডিলার, সবাই অপরাধী। সত্যি যদি মন্ত্রী এই কাজ করে থাকেন তবে এ মহাপাপের শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে। এখানে বাম জমানা, অন্য রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে কেউ কথা বলে না কেন, আমি জানি না অমুক জানে করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট