ত্রাণ ও পুনর্বাসনের অর্থ অপচয় বরদাস্ত নয়, কাকদ্বীপ থেকে হুঁশিয়ারী মুখ্যমন্ত্রীর
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গের আট জেলা। ঝড়ের পর চার দিন কেটে গেলেও এখনো বহু জায়গায় এমন রয়েছে যেখানে উদ্ধারকারী দল পৌঁছতে পারেনি।
এমতাবস্থায় ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিদর্শনের পর শনিবার কাকদ্বীপের প্রশাসনিক বৈঠক করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর এই প্রশাসনিক বৈঠক থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন তিনি।
প্রথমত এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি দল এবং প্রশাসনের সর্বস্তরের কর তাদের বার্তা দিয়েছেন, ত্রাণ নিয়ে কোনও নয়-ছয় বরদাস্ত করবেন না তিনি। রাজনীতির রং না দেখে যেন বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় প্রশাসন।
একইসঙ্গে তাঁর বার্তা, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আসছে কেন্দ্রীয় দল। এই কেন্দ্রীয় দলকে সব রকমের সাহায্য করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতি নয়, আমাদের আশু কর্তব্য হওয়া উচিত মানুষকে রক্ষা করা এবং তাদের কাছে ত্রান পৌঁছে দেওয়া।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন। নামখানা, গোসাবা, ক্যানিং, সাগর, কাকদ্বীপ, ঘোড়ামারা–সহ বিভিন্ন এলাকা এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আকাশপথে মুখ্যমন্ত্রী এই সব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির বাস্তব চিত্র প্রত্যক্ষ করেন। পরিদর্শনের পর তিনি নামেন কাকদ্বীপে।
সেখানেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন সহ জেলার প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তি এবং বিধায়ক সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এ দিনের বৈঠকে এসডিও এবং বিডিও–দেরও থাকতে বলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী তাদের কাছ থেকেও গ্রাউন্ড জিরোর বিস্তারিত খবর নেন।
এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেকের কাছ থেকেই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চান। জেলায় ঝড়ের তাণ্ডবে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃতদের পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রী আড়াই লক্ষ টাকা করে অর্থ–সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন। আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। মৃতদের পরিবারের হাতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন এদিন। শনিবারই তিনি ফিরবেন কলকাতায়।
এদিন কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে রাজ্যে ৬ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৷ নির্দেশ, বর্ষার আগেই ভেঙে যাওয়া রাস্তা এবং বাঁধ সারাই করতে হবে। ত্রাণ নিয়ে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে, সেই নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, শুধুমাত্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলাতেই ১০ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭৬ লক্ষ মানুষ৷ উপড়ে গিয়েছে ৪১ হাজারের বেশি বিদ্যুতের খুঁটি৷ ৫৬টি নদীবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তার উপরে, আরও ৩২টি নদী বাঁধে ফাটল ধরেছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জেলার ৩.২ লক্ষ মৎস্যজীবীও আমফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ভেঙে পড়া বাড়ি তৈরি করে দেওয়াই এই মুহূর্তে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ৷ তাঁর মতে, রাজ্যের সামনে এখন একসঙ্গে চার চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ সেগুলি হল করোনা সংক্রমণ সামলানো, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখভাল এবং ঘূর্ণিঝড় আমফান জেরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্গঠন৷ সবটা একসঙ্গে ম্যানেজ করা সহজ কাজ নয়। তাই এই কাজে প্রত্যেকের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ,সাধারণ মানুষের কাছে জল, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বেশি করে জেনারেটর ব্যবহার করতে হবে৷ একইসঙ্গে এদিন একশো দিনের কাজে আরও বেশি করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যবহার করে এলাকা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ সাধারণ মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দিতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও বলেন, এতবড় বিপর্যয় তিনি কোনওদিন দেখেননি৷ তবে জেলা প্রশাসন ভাল কাজ করায় অনেক প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে। তবে আমাদের এখনো আরও অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষত দুর্গত মানুষদের উদ্ধার ও তাদের পুনর্বাসন আমাদের প্রধান কাজ।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনের জন্য রাজ্য সরকারের অর্থ সংস্থান নিয়েও এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রায় তিন মাস রাজ্যের কোনও আয় নেই৷ তার মধ্যেও দুর্গত মানুষের কাছে রেশন সহ ত্রাণ পৌঁছনো নিয়ে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে, জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, রাজ্যের তরফে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রীও আরও ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন।তবে অর্থের যাতে অপচয় না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক, বই, জুতো নষ্ট হয়ে গেলে তাদের সাহায্য করার জন্য জেলা প্রশাসন যেন উদ্যোগী হয়। তবে এর জন্য আলাদা প্যাকেজের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি, স্কুল বাড়ি ভাঙলেও দ্রুত সারিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এদিকে এদিনই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসন থেকে শুরু করে দলীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছেন, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে এলে তাদের সাহায্য করতে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমফান বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে আসবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে কেন্দ্রকে জানাবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তী সাহায্যে আসবে রাজ্যের কাছে। তাই আমফানের ক্ষতি নিয়ে সঠিক তথ্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে যেন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনও রকম অনিয়ম এক্ষেত্রে বরদাস্ত করা হবে না বলেও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন,দুর্গত এলাকায় কেন্দ্র-রাজ্য যৌথভাবে সমীক্ষা হবে। এই ক্ষেত্রেও তৎপর হতে হবে প্রশাসনকেই।