বারবার ডেকে পাঠাচ্ছে সিবিআই, ভাবমূর্তির প্রশ্নে অনুব্রতকে নিয়ে কড়া হতে পারে তৃণমূল
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ অনুব্রত মণ্ডলকে বীরভূমের বেতাজ বাদশা বলা হয়ে থাকে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই জেলায় তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। অন্যান্য জেলায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর তৃণমূল জেলা সভাপতি পরিবর্তন করলেও বীরভূমে অনুব্রত গদি এখনও পর্যন্ত অটুট।
জেলাজুড়ে তাঁর দাপট দেখার মতো। তাঁকে বিশেষ নিরাপত্তাও দেয় প্রশাসন। অথচ তিনি কোনও সাংসদ বা বিধায়ক নন। আজও পর্যন্ত তিনি পঞ্চায়েত বা পুরসভা স্তরের কোনও নির্বাচনেও লড়াই করেছেন এমন তথ্য জানতে পারা যায়নি।
তৃণমূলে অনুব্রত মণ্ডলের এতো দাপট নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য তিনি দলকে এ যাবতকালে যথেষ্ট সাফল্য এনে দিয়েছেন। বীরভূমের লালমাটি একসময় বামেদের লালঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু বাম জামানাতেই তাদের হাত থেকে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রটি ছিনিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দেওয়ার মূল কাণ্ডারী এই অনুব্রত। শুধু তাই নয় দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমকে তিনি কার্যত বিরোধীশূন্য করে রেখেছেন। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার ১১ টি আসনের মধ্যে ১০ টিতেই জিতেছে তৃণমূল।
অসময়ে চলে যাওয়া ছোটভাই KK-র জন্য ‘গানওয়ালা’ সুমনের কবিতায় আবেগপ্রবণ ভক্তরা
১৯ এর এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলায় চমকপ্রদ ফল করলেও বীরভূমে তারা দাঁত ফোটাতে পারেনি। বীরভূমের রাজনীতি অনেকটাই আলাদা। এক দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রাম বাংলার ভাবনার মিশেল যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমনই বরাবরই সংঘর্ষ প্রবণ এই জেলার রাজনীতি। কিন্তু অনুব্রত সেখানে মোটামুটি একটা ভারসাম্য রেখে চলেছেন অনেক দিনই। তবে সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় তার আঁচ এসে লাগছে তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে।
অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে পুলিশ প্রশাসন এমনকি বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে অসংখ্য বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। যা নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। একটা বড় সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্নেহ দিয়ে অনুব্রতকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে বগটুই কাণ্ডের পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় পরিস্থিতি সামলাতে অনুব্রতর ব্যর্থতার দিকটি প্রকট হয়ে পড়েছে।
তাছাড়া ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার পাশাপাশি গরু পাচার কাণ্ডেও জড়িয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের নাম। গত কয়েক বছরে বীরভূমজুড়ে বালি পাচার, পাথর পাচারের রমরমা বেড়েছে। তাতে অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের নাম উঠে এসেছে শিরোনামে। আর্থিক বিষয় নিয়েও বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব বর্ধমানের অনেক নেতার নাম কাটতে পারেন অভিষেক
এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাইছেন। তিনি আর কোনও বিতর্ক চান না। বরং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এবং মানুষের জন্য কাজ করবে এমন নেতাদেরই তিনি সামনে রেখে রাজনীতিটা করতে চান। সেখানে অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতারা তাঁর সেই ভাবনায় কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার ফের সিবিআইয়ের ডাকে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে বাধ্য হন অনুব্রত। যা নিয়ে আবারও তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এদিকে আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। বীরভূমে পঞ্চায়েতের সংখ্যা প্রচুর। এই অবস্থায় ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুলতে অভিষেক জেলা সভাপতির পদ থেকে অনুব্রতকে সরিয়ে দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে তৃণমূলে অনুব্রত বিসর্জনের সুর বাজতে শুরু করেছে।