বছর শেষে একনজরেঃ ঘটনাপ্রবাহের প্রথম পর্ব

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ   ২০২০ বছরটি মানুষের জন্য দুর্বিষহের কারণ। কারণ এযুগের ভয়ঙ্কর মহামারী আমাদের সমস্ত কিছু বদলে দিয়েছে। বদলে গিয়েছি আমরাও। মুখে মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবহারের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব হয়েছে আমাদের।

বহু মানুষকে হারিয়েছি আমরা। ২০২০ সাল আমাদের আলাদা দর্পণে দেখতে শিখিয়েছে। গলা ফাটানো চিৎকারের পরেও নিজেদের অধিকারটুকু থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে মানুষকে।

বছরের শুরুটা হয়েছিল করোনা এবং আন্দোলনের হাত ধরেই। চিনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া মারণ ভাইরাস তখন বিশ্বে ধীরে ধীরে বিস্তার করতে শুরু করেছে। ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে থাবা বসাতে শুরু করেছে এই ভাইরাসা। নিত্যদিনের মৃত্যুমিছিলে সারা বিশ্বে আতঙ্ক তৈরি করেছিল।

অন্যদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে একটানা আন্দোলনে শামিল হয়েছে গোটা দেশ। বিশেষ করে আন্দোলনের প্রথম সারিতে মহিলাদের দেখা গিয়েছিল। পার্ক সার্কাস থেকে দিল্লি শাহিনবাগ আন্দোলনে নতুন আইনকে বাতিলের রব উঠেছিল।

সরকার পক্ষের বিরোধিতায় প্রায় ১০১ দিন ধরে চলা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ৮২ বছর বয়সী বিলকিস বানো ওরফে শাহিনবাগ দাদী। বাংলার রাজধানীও এই আন্দোলনে রাতের পর রাত সাক্ষী থেকেছে। পার্ক সার্কাস ময়দানে হাজারো মহিলার সরকার বিরোধী শ্লোগান এক বছর পরেও এখনও স্পষ্ট।

করোনার কারণে আন্দোলন শিথিল হলেও, শীত আসতেই তা ফের উত্তাপ পেয়েছে। একই আইনের প্রতিবাদে রাজপথে হেঁটেছিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পার্ক সার্কাসের আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক পতাকা নয়, বরং জাতীয় পতাকার ছত্রছায়াতেই বেড়ে উঠেছিল।

দিল্লির শাহিনবাগে যখন সিএএ বিরোধী আন্দোলন বেড়ে উঠল তখন দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। ১৯ নির্বাচনে জয়ী মোদি টু পয়েন্ট ও সরকারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েই ফের ক্ষমতায় এল আপ সরকার।

রাজনীতিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ একাধিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তার ওপর মানুষ আস্থা রেখেছে। এই আলোচনা বেশ কয়েকদিন ধরে চলতে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/tet-exam-date-notice-issued/

২৪ ফেব্রুয়ারি সাড়ম্বরে স্বাগত জানানো হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আন্তর্জাতিক মহলে তখন জম্মু-কাশ্মীর এবং সিএএ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সেইসময়েই ট্রাম্পের ভারত সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল। নিজ বন্ধুকে স্বাগত জানাতে আমেদাবাদকে সাজিয়ে তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

ভিডিও ফুটেজ সঠিক রাখতে বিমানবন্দর থেকে সবরমতী আশ্রম অবধি তুলে দেওয়া হল পাঁচিল। সঙ্গে গাল্ভরা মোদি-ট্রাম্পের ছবি। মোতেরা স্টেডিয়ামে লক্ষ মানুষের সমাগমে একাধিকবার নিজেদের আলিঙ্গন করে দুই নেতা।

শুধুমাত্র ট্রাম্পের সফরের জন্য ১২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল কেন্দ্র সরকার। রয়টার্স সূত্রের খবর, মাত্র ৩ ঘন্টার আমেদাবাদ সফরের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল ৮০ থেকে ৮৫ কোটি টাকা।

এত টাকা খরচের পরেও করোনার সময় হাইড্রোক্লোরোকুইন নিয়ে ভারতকে রক্তচক্ষু দেখিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে ভারতের কাছ থেকে হাইড্রোক্লোরোকুইন পেয়ে ভোল পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি।

কিন্তু ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যে ঘটে গেল একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। রাজধানী দিল্লিতে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের প্রতিবাদে যারা শামিল হয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে সিএএ সমর্থনকারীদের সংঘর্ষ বাধে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতির মাঝেই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসার ঘটনা শুরু হয়। জাফরাবাদ, চান্দবাগ, মৌজপুর, বাবরপুর, শিববিহার, মুস্তফাবাদ এবং গোকলপুরি সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় হিংসার ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। সরকারী রিপোর্ট অনুযায়ী ঘটনায় প্রায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হয় পুলিশ অফিসার রতন লালের।

দিল্লি চেম্বার অব কমার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তি নষ্ট নয়। আতঙ্কে ঘরছাড়া হন বহু মানুষ। ঘটনায় ২২০০ জনকে আটক করা হয়, গ্রেফতার হন একাধিক জন।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/kerala-assembly-pass-resolution-against-three-farm-law/

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ফিরহান হায়দার, গুলফিজা ফাতিমা, সাফুরা জারগার, আসিফ ইকবাল, নাতাশা নারওয়াল, ডঃ কাফিল খান এবং জেএনইউয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা ওমর কাহ্লিদ সহ আরও অনেকে।

পুলিশ কনস্টেবল রতনলালের মৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়ায় আপ নেতা তাহির হুসেনের। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিন্তু এক বছর পরেও ঘটনার তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি। ৩০ নভেম্বর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি খবরে জানানো হয়, ঘটনার দ্রুত তদন্তের জন্য দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফাওয়াদ উদ্দিন।

সম্পর্কিত পোস্ট